কাগজের চড়া দামে কমেছে নতুন বই

বইমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩। এবারের মেলায় রয়েছে অতীতের তুলনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক স্টল। কিন্তু কাগজের দাম বেশি হওয়ায় প্রত্যেক প্রকাশনীতে কমেছে প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যা।

বইমেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি স্বনামধন্য প্রকাশনী ছাড়া বেশির ভাগ প্রকাশনীর মাত্র ২-৩টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। স্বনামধন্য প্রকাশনাগুলোরও অতীতের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যা। শব্দশিল্প প্রকাশনের এবার নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ২০টি গত বছর যার সংখ্যা ছিল ৫০টি, দাঁড়িকমা প্রকাশনের নতুন বইয়ের সংখ্যা ১৭টি যা গত বছর ছিল প্রায় ৮২টি, প্রজ্ঞালোক প্রকাশনের নতুন বইয়ের সংখ্যা ১২টি যা গত বছর ছিল ২০টি, বলাকা প্রকাশনের নতুন বইয়ের সংখ্যা ৪১টি যা গত বছর ছিল ৮০টি, শৈলী প্রকাশনের নতুন বইয়ের সংখ্যা ৩৫টি যা গত বছর ছিল ৫০টি।

এবার বই কম প্রকাশিত হওয়ার জন্য প্রকাশকরা দায়ী করছেন- কাগজ সংকটের দরুণ কাগজের মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রণসামগ্রীর দামবৃদ্ধি, বাইন্ডিং খরচ বৃদ্ধি, করোনা পরবর্তী পেশা পরিবর্তনে শ্রমিকঘাটতি ইত্যাদি কারণকে। কেবল নতুন বইয়ের সংখ্যাই কমেনি, আনুপাতিক হারে বেড়েছে বইয়ের দামও। এ নিয়ে লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।

জহিরুল ইসলাম নামে একজন পাঠক বলেন, ‘বইমেলা বাঙালির একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বইমেলার চাইতে সমৃদ্ধ মেলা হয় না। বইমেলা মূলত জ্ঞানের মেলা। বই একটা জাতিকে সুসভ্য ও প্রকৃত অর্থে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এটি এখন হুমকির মুখে। কেননা কাগজের দাম বাড়তি, কাগজের কারণে বেড়ে যাচ্ছে বইয়ের দাম। যিনি বইমেলা থেকে ৫ থেকে ১০টা বই কিনতেন এবার তিনি কিনছেন ২ বা ৩টি বই।’

মোহাম্মদ সাইফ খোকন নামের একজন পাঠক বলেন, ‘পাঠক তো সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। সবাই কি অতীতের মতো ইচ্ছে অনুযায়ী বই কিনতে পারছেন? কাগজের দাম যে কারণেই বাড়–ক সরকারের উচিত এ ক্ষেত্রে সমন্বয় করা, প্রয়োজনে ভর্তুকি দেওয়া। যেভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। আমি মনে, করি কাগজও তৎসংশ্লিষ্ট।’

এ ব্যাপারে বলাকা প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘কাগজের দাম অতীতের তুলনায় অনেক বেশি। কাগজের দামের সাথে বাইন্ডিং খরচও বেড়ে গেছে। যার কারণে আমাদের নতুন বইয়ের সংখ্যাও কমে গেছে। করোনার সময় প্রকাশনা সংস্থাগুলো অনেক বেশি হুমকির মুখে পড়েছিল। শ্রমিকদের মধ্যে যারা এখানে কাজ করতো তারা বেঁচে থাকা, টিকে থাকার তাগিদে অন্য কাজে যুক্ত হয়ে গেছেন। কাগজের দাম কমাতে প্রকাশকরা মিলে সরকারের সদয় দৃষ্টি পেতে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনও করেছি, আমাদের আকুতি তুলে ধরি। কিন্তু দুর্ভাগ্য! আমাদের কথা কেউ আমলে নেননি। যার ফলে আগে আমাদের যেখানে ৭০ থেকে ৮০টি বই প্রকাশিত হতো সেখানে এবার প্রকাশিত হয়েছে ৩০ থেকে ৪০টি।’

চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনের স¦ত্ত্বাধিকারী চৌধুরী ফরহাদ বলেন, ‘কাগজের দাম যে হারে বেড়েছে আমরা সেই হারে কিন্তু বইয়ের দাম বাড়াইনি। ২ হাজার টাকা দরে যে পরিমাণ কাগজ কেনা হতো সেটা এখন ৫ হাজারে নিতে হচ্ছে অর্থাৎ কাগজের দাম ২ থেকে আড়াই গুণ বেড়ে গেছে। কিন্তু আমরা বইয়ের দাম রাখছি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেশি। সুতরাং কাগজের দামানুসারে বইয়ের দাম সেভাবে বাড়েনি। তবে এটা ঠিক দাম বাড়াটা লেখকদের নিরুৎসাহিত করেছে। যার ফলে আগে ৫০টা বই প্রকাশ হলে এখন তার সংখ্যা নেমে এসেছে ২০ থেকে ২৫-এ ।’

এ ব্যাপারে কবি হাফিজ রশিদ খান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকাশনা সামগ্রীর দাম বেড়েছে। অনেক প্রকাশক নতুন বই প্রকাশে অনীহা দেখাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কবি সাহিত্যিকদের মাধ্যমে সমাজে নতুন চিন্তার প্রবাহ সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রকাশকরা ঝুঁকি নিতে না চাইলে জাতি নতুন চিন্তাধারা হতে বঞ্চিত হবে। যেটা কোনোভাবে কাম্য নয়।’