কাক ক্ষমাহীন! ১৭ বছর পর্যন্ত মনে ক্ষোভ পুষে রাখতে পারে

ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রভাত ডেস্ক  »

আপনি কি দ্রুত ক্ষমা করে ভুলে যান? নাকি ছোটখাটো ব্যাপারে কয়েকদশক ক্ষোভ পুষে রাখেন? যদি আপনি দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে পড়েন, তবে আপনার এবং কাকের মধ্যে মিল থাকতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অত্যন্ত বুদ্ধিমান এই পাখিগুলো ১৭ বছর পর্যন্ত তাদের প্রতি যে কোনো রকম হুমকি বা বিরক্তির ঘটনা মনে রাখতে পারে এবং সেই ক্ষোভ পুষে রাখতে পারে।

তাই যদি কোনো কাক আপনাকে হঠাৎ আক্রমণ করে বা আপনাকে দেখে জোরে জোরে ডাকতে থাকে, তবে ভাবুন তো, গত দুই দশকের মধ্যে আপনি সেই কাকটিকে বা তার কোনো বন্ধু বা আত্মীয়কে বিরক্ত করার মতো কোনো কাজ করেছেন কিনা?
গবেষকদের মতে, কাকেরা হুমকিমূলক আচরণকে হয় ক্ষমা করতে অক্ষম, নয়তো তা করতে অনিচ্ছুক। বরং তারা তাদের বুদ্ধিমত্তার কারণে বিশেষ করে চমৎকার স্মৃতিশক্তি ব্যবহার করে তাদের প্রতি অন্যায়কারীদের খুঁজে বের করে এবং দীর্ঘসময় ধরে বিরক্ত করে। কিছু ক্ষেত্রে এটি এত দীর্ঘস্থায়ী হয় যে কিছু শহরের বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ কাকের আক্রমণের ঘটনা লিপিবদ্ধ করতে শুরু করেছেন।

একটি কাক কতদিন তার ক্ষোভ পুষে রাখে তা আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। একসময় আলেকজান্ডার পোপ লিখেছিলেন, ক্ষমা করা ঈশ্বরীয় গুণ, তবে উইলিয়াম কনগ্রিভের কথা সামান্য রূপান্তর করে বলা যেতে পারে, ‘অপমানিত কাকের ক্রোধের মতো আর কোনো নারকীয় ক্রোধ নেই।’
২০০৬ সালে একটি কাকের দলকে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলার পর ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী জন মার্জলাফ এই বিষয়টি আবিষ্কার করেন।

তিনি একটি দানবের মুখোশ পরে একটি জালের মাধ্যমে সাতটি কাক ধরেন এবং সেগুলোর গায়ে শনাক্তকরণ ব্যান্ড পরিয়ে দেন। যদিও তিনি খুব দ্রুতই কাজটি সারেন। তারপরও ঘটনাটি ধরা পড়া কাক ও যে কাকগুলো ঘটনাটি দেখেছে তাদের জন্য ভীতিকর ছিল বলে জানান অধ্যাপক মার্জলাফ।

পরবর্তী কয়েক বছর ধরে, অধ্যাপক মার্জলাফ এবং তার সহকারী মাঝেমাঝে সেই আগের ব্যবহার করা ভীতিকর মুখোশটি পরে ক্যাম্পাসের চারপাশে ঘোরাঘুরি করতে শুরু করেন। তারা দেখতে থাকেন যে স্থানীয় কাকগুলো তাদের দিকে কোনো আক্রমণের ভঙ্গি করছে কিনা বা বকাঝকা করার মতো কোনো শব্দ করছে কিনা।
একবার একটি ঘটনায়, তিনি ৫৩টি কাকের সামনে দিয়ে গিয়েছিলেন তার মধ্যে ৪৭টি কাকই তাকে ভর্ৎসনা করেছিল। তবে ঘটনার সময় প্রত্যক্ষ করা ও ধরা পড়া কাকের তুলনায় এ সংখ্যা বেশি ছিল।

এই পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় যে কাকেরা তাদের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এবং দলীয় সঙ্গীদের কাছ থেকে হুমকিস্বরূপ মানুষের চেহারা চিনে নিতে শেখে। এ ঘটনাটি প্রমাণ দেয় যে, কাকের একটি দল যার সদস্যদের গড় আয়ু এক দশকেরও কম কিন্তু তারা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষোভ ধরে রাখতে পারে এবং তাদের ক্রোধ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
তবে এ ক্ষুব্ধ কাকের ডাক সাত বছর পর সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বলে জানান গবেষক। ২০১৩ সালের পর থেকে এমন আক্রমণাত্মক ডাক ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে একদিন হাঁটার সময় প্রথমবারের মতো কোনো ভর্ৎসনা বা ক্ষুব্ধ কাকের ডাক শোনা যায়নি বলে জানান তিনি। এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৭ বছর পর এটি ঘটল। অধ্যাপক মার্জলাফ এখন তার গবেষণার তথ্য প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গবেষণার শুরুতে লেখকরা তৎকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মুখের আদলে তৈরি একটি মুখোশও ব্যবহার করেছিলেন। যারা চেনির মুখোশ পরে কাকের কাছে গিয়েছিলেন কাক তাদের কোনো আক্রমণ করেনি। তাই তারা অনায়াসের তাদের খাবার দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে একই মুখোশ পরে আবার কাকের সামনে গেলে কাক তাদের কোনো আক্রমণ বা আক্রমণাত্মক ডাকাডাকি করেনি।

সিয়াটলে আরেকটি পরীক্ষা চালানো হয়। সেখানকার শিক্ষার্থীরা এরকটি ভিন্ন মুখোশ পরে কাক ধরেছিলেন। এরপর স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ মুখোশ ও আগের মুখোশটি পরতে দেওয়া হয়। তবে স্বেচ্ছাসেবকরা জানতেনা কোন মুখোশটি পরা বিপজ্জনক।

বিল পচমার্সকি নামে এক স্বেচ্ছাসেবক সেই বিপজ্জনক মুখোশটি পরেছিলেন। সেসময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সেদিন কাকগুলো খুবই ডাকাডাকি করছিল। তারা একটানা চিৎকার করেই যাচ্ছিল। আর এটি স্পষ্ট ছিল যে তারা কোনো সাধারণ বিষয়ে বিরক্ত ছিল না। তারা তারা আমার ওপরই ক্ষুব্ধ ছিল।’ সূত্র: দ্য অস্ট্রেলিয়ান