চট্টগ্রাম চেম্বারে এনবিআর চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘কর আহরণই সরকারের প্রধান বিষয় নয় বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কর সংগ্রহের মুখ্য উদ্দেশ্য দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা প্রদান’ বলে মন্তব্য করেছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চট্টগ্রাম চেম্বার আয়োজিত ‘২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ফুড সেইফটি ও সিকিউরিটির জন্য খাদ্যপণ্যে আমদানি কর আরোপ করা হয় উল্লেখ করে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, স্থানীয় শিল্পের বিকাশ, উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিপণ্যের বিকাশ ও পরিবেশের সুরক্ষা প্রদানের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কর আরোপ করা হয়। যে পণ্যগুলো আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে এবং প্রতিদিন যে জিনিসগুলো দরকার হবে সেগুলো নিয়ে কোন একটা দেশের স্বনির্ভর হওয়া উচিত। আমরা কি ভারত ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল থাকব? আমাদের কি স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে না? যদি অন্যের উপর নির্ভর করি তাহলে আমাদের ফুড সেফটি থাকবে? সেজন্য বেশি মূল্য দিয়েও স্বনির্ভর হওয়ার জন্য এবং দেশীয় পণ্যকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের উপরে কর আরোপ করতে হয়। এখানে রাজস্ব আহরণ উদ্দেশ্য থাকে না, থাকে অন্য কিছু।
তিনি আরো বলেন, যত বেশি রেভিনিউ আসবে আমরা তত রেট কমাতে পারবো। রেভিনিউ সিস্টেম যত সহজ হবে আমাদের হিসাব-নিকাশ তত সহজ হবে। রাজস্ব আদায় যত সহজ হবে আমাদের কাজেও তত স্বচ্ছতা আসবে। এই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা অটোমেশনে নিয়ে আসছি। রাজস্ব আহরণে পরিমাণ বৃদ্ধি, কর দেওয়ার ক্ষেত্রে সহজ করা এবং হয়রানি বন্ধে অটোমেশনের মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে কাজ করবে।
পর্যটন শিল্পে রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যটন শিল্পে ভ্যালু অ্যাডের সক্ষমতা বেশি। কারণ এটা এমন একটি শিল্প যেখাতে বিশ্বে প্রচুর ভ্যালু অ্যাড হয়। পর্যটকরা বেহিসেবি খরচ করে। আমরা প্রত্যাশা করি এ পর্যটন শিল্প থেকে আমাদের কাক্সিক্ষত রাজস্ব আসবে। তবে এর জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। কক্সবাজারে এ খাতে উজ্জ্বল সম্ভাবনার অন্যতম স্থান।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে বর্তমানে একটি ক্রান্তিকালীন সময়। এ অবস্থায় আসন্ন বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিতে শতভাগ গতি সঞ্চার করে এসডিটি অর্জন ও উন্নত দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে একদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ সৃষ্টিসহ অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতিশীল করতে হবে, অন্যদিকে সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে। এ দুটি বৈশিষ্ট্যকে সামনে রেখে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও রাজস্ব আহরণকে প্রাধান্য দিয়ে আগামীর বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। এ সময় তিনি আগামীর বাজেট প্রণয়নে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজের বিভিন্ন দাবি রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সামনে তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া ও মো. মাসুক সাদিক, রাজস্ব বোর্ডের পরিচালকবৃন্দ, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টম কমিশন এবং চেম্বার পরিচালকসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।