কর্মসংস্থান বাড়াতে না পারলে অর্থনীতি সবল হবে না

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এক দশকে দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বেড়েছে গড়ে দেড় শতাংশ হারে। যদিও একই সময়ে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ২ শতাংশ। যেকোনো দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে ধরা হয় ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, নতুন কর্মসংস্থান বেড়েছে তার তুলনায় একেবারেই সামান্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর দেশে বিপুলসংখ্যক তরুণ কর্মক্ষম হয়ে উঠলেও তাদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়নি। এমনকি বিভিন্ন খাতের সবচেয়ে উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান বা ফ্রন্টিয়ার ফার্মগুলোও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক নানা দুর্বিপাকে চাকরি হারিয়েছেন অনেকে। এতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ও নতুন কর্মসংস্থানের গড় প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে কর্মহীনতা বৃদ্ধির গড় হার।
দুটো পরিসংখ্যান সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণে দেখা যাবে কর্মক্ষমদের একটি অংশ কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হতে পারেননি। বলা হচ্ছে, আমাদের এখানে সমস্যা হলো শোভন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র গড়ে ওঠেনি, খুব কম। প্রাতিষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিক খাতগুলোয় কর্মসংস্থানের সুযোগ খুব কম সৃষ্টি হয়। সৃষ্ট কর্মসংস্থানের বড় অংশটিই হলো অপ্রাতিষ্ঠানিক। এসব খাতে মজুরি খুব কম। সবকিছু ছাপিয়ে শোভন কর্মসংস্থানের ঘাটতিকে একটা বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা।
আরও বলা হয়েছে, স্বাভাবিকভাবে বছরে নতুন যে ২৪-২৫ লাখ শ্রমশক্তি বাজারে আসে, তাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট; বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজ থেকে পাস করা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্ব খুবই বেশি। কারণ তারা গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর কৃষি, কারখানাসহ নিম্ন আয়ের কাজ করতে চায় না। আগে মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট ছিল; এখন তা ১০ শতাংশ। গ্র্যাজুয়েশন করে তারা অন্যান্য কাজে আগ্রহী হচ্ছে না। আমাদের কৃষি ও শিল্প কারখানায় গ্র্যাজুয়েটের চাহিদার চেয়ে নন-গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা বেশি। ফলে এখানে পেশা নির্বাচনে সামাজিক অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আসছে, যা তরুণ ও সামগ্রিক বেকারত্বের একটা বড় কারণ।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি আরদাশীর কবির গণমাধ্যমে বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনকে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। এছাড়া দক্ষতার উন্নয়নকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের খাপ খাওয়াতে হবে। দিনমজুর আর নির্মাণ শ্রমিক বিদেশে পাঠিয়ে বাংলাদেশের কোনো লাভ আদতে হচ্ছে না। আমাদের প্রশিক্ষিত নার্সের মতো প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’
কাজেই আমাদেরকে গ্রাজুয়েট তৈরি করার পরিবর্তে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। সে সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির লক্ষ্যে চেষ্টা জারি রাখতে হবে। তা না হলে আমাদের অর্থনীতি সবল হবে না।