চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, কর্ণফুলী নদীকে ঘিরে যে আনন্দময় ও একটি উপার্জনমুখী জীবনধারা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে তা আজ অনেকাংশেই তার ঐতিহ্য হারিয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সাম্পান র্যালির পর আজ (গতকাল) নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি ইতিবাচক দায়বদ্ধতা পূরণে সচেষ্ট হয়েছে। এর সাথে কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে যাদের জীবন-জীবিকা আবর্তিত, তাদেরকে আমাদের লক্ষ্য ও অভীষ্টের সাথে একীভূত করতে পারলে কর্ণফুলী নদী বাঁচবে, আমরাও বাঁচব এবং দেশও বাঁচবে।
মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী গতকাল মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কর্ণফুলী নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার প্রত্যয়ে দুদিনব্যাপী কার্যক্রমের সমাপনী দিনে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। তিনি বলেন, কর্ণফুলীর সাথে জাতীয় অর্থনীতি প্রাণপ্রবাহের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক মূলত অর্থনৈতিক এবং কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, মুজিব জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কর্ণফুলী নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার প্রত্যয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী জনসচেতনতা ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম একটি ইতিবাচক সামাজিক দায়বদ্ধতার সুপ্রকাশ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের তেরো শত নদ-নদীর মধ্যে অনেকগুলো নদীই আজ বিলীন হয়ে গেছে। কর্ণফুলীসহ যে নদীগুলো এখনো বহমান, সেগুলোর অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম হলেও প্রায় সবকটি নদ-নদী যৌবন হারিয়ে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কর্ণফুলী নদী আজ কতটা বিপন্ন। দখল ও দূষণের ফলে কর্ণফুলীর গভীরতা ও প্রশস্ততা হ্রাস পেয়ে ক্রমশ ক্ষীণকায় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কর্ণফুলী নদীর অতীতের প্রবহমানতা ও উদ্বেল যৌবন ফিরিয়ে আনতে না পারলে বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক বন্দরটিও ধ্বংসের মুখে পড়বে। আমাদের মনে রাখতে হবে, কর্ণফুলী না বাঁচলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারই শুধু হবে না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যে উচ্চতায় উত্তীর্ণ করেছেন তাও রক্ষা করা সম্ভব হবে না। তাই কর্ণফুলীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার আন্দোলন কোন আঞ্চলিক ইস্যু নয়, এটা একটি জাতীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের অঙ্গীকার। তিনি নদীমাতৃক বাংলাদেশের ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, এক সময় বাংলাদেশের নদনদীগুলো ছিল লোকজ, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক পার্বনের আনন্দঘন উৎস্যকেন্দ্র। নৌকাবাইচ হল তারই একটি উপাদান। বাংলাদেশের ১৩ শত নদ-নদীর প্রায় সবগুলোতেই বিভিন্ন উৎসব-পার্বণকে কেন্দ্র করে নৌকাবাইচ হতো এবং এই নৌকাবাইচ বাঙালি লোকসংস্কৃতির একটি ঐতিহ্যম-িত উপাদান। তাই আমরা কর্ণফুলীকে বাঁচিয়ে রেখে শুধু অর্থনীতির সমৃদ্ধি নয়, বাঙালির চিরায়ত লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষা করারও স্বপ্ন দেখি। তিনি বলেন, নদীদখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য আইনের প্রয়োগ চাই। পাশাপাশি জনসচেতনতাও সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যে কারণে কর্ণফুলী দখল ও দূশণ হচ্ছে সেগুলোকে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয়, প্রতিষ্ঠানগত ও সামাজিকভাবে আমাদেরকে কর্ণফুলীসহ বাংলাদেশের সকল নদ-নদী প্রাণপ্রবাহ বহমান রাখার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মহানগর আওয়ামী লীগের দুইদিনব্যাপী কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণ কার্যক্রমের সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আলহাজ সফর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ত্রাণ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দীন খালেদ বাহার, হাজি বেলাল আহমেদ, চট্গ্রাম প্রসক্লাব সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সাংবাদিক আলীউর রহমান, কর্ণফুলী নদী সাম্পানমাঝি ফেডারেশন সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, চট্টগ্রাম ইতিহাস ও সংস্কৃতি গবেষণাকেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান, মাঝিকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, জাফর আহমদ, সাবেক কাউনসিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, শৈবাল দাশ সুমন প্রমুখ।
কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় ইছানগর থেকে নৌকাবাইচ শুরু হয়ে উত্তর তীরের অভয়মিত্র ঘাট পর্যন্ত শেষ হওয়া এই প্রতিযোগিতায় ১০টি দল অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ১ম হয়েছেন শিকলবাহা ব্লক পাড়ার শেখ আহমদ মাঝি ও তার দল, ২য় হয়েছেন চট্টগ্রাম ইছানগর বাংলাবাজার ঘাটসাম্পান মলিক সমিতির সভাপতি মো. লোকমান ও তার দল, ৩য় হয়েছেন মাদ্রাসা পাড়া ১ নম্বর গেট, চরপাথরঘাটার পক্ষে মো. তারেকের দল। বিজ্ঞপ্তি
এ মুহূর্তের সংবাদ