চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর উপজেলার বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে পলিথিন, প্লাষ্টিকসহ দূষিত বর্জ্য পানি কৃষি জমি হয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে ১৬১ কিলোমিটারের সর্পিলাকার কর্ণফুলী নদী। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশা রয়েছে।
কেননা, কর্ণফুলীর বিভিন্ন কারখানার মধ্যে দু’একটি ইটিপি (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) স্থাপন হলেও অধিকাংশ কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ অপসারণের জন্য নিজস্ব কোন প্লান্টেশন নেই। ফলে, এসব বর্জ্য ছোটখাটো খাল ও ড্রেন দিয়ে প্রবেশ করছে নদীতে। ফলে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি দুষিত হচ্ছে নদীর পরিবেশ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বর্জ্য আর হাওরের পানি একাকার হয়ে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
কর্ণফুলী রক্ষার দাবিটি অনেক পুরোনো। কিন্তু সুরাহা করার কেউ নেই। শুনেছি এতদিন রাজনৈতিক প্রভাশালীদের কারণে দখল-দূষণমুক্ত করা যায়নি। কিন্তু এখন তো সেরূপ চাপ থাকার কথা নয়। এখনও তাহলে কাজটা শুরু হচ্ছে না কেন? নদীটিকি তাহলে বিলীন হয়ে যাবে? এর ভবিষ্যৎ কি এখনো অন্ধকারে?
বলা হয়ে থাকে, চট্টগ্রাম বন্দর যদি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হয় তাহলে এর প্রাণ প্রবাহের শিরা কর্ণফুলী নদী। একদিকে দখল, অপরদিকে দূষণে এ নদী ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর জুড়ে। এর ফলে কয়েকটি পয়েন্টে গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে। গভীরতা হ্রাস পেয়েছে মারাত্মকভাবে। সার্বিকভাবে এ নদীর আরও বিপর্যয় ঘটেছে। পরিবেশবিদদেরা বলেন, এ নদীর দু’পাড়ে রয়েছে কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনার মালিক প্রভাবশালীরা। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। উল্টো এখন নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চর জেগে এটি ভাটির দিকে এগিয়ে আসছে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিসমূহের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় রিট মামলা থেকে শুরু করে নানা প্রতিবন্ধকতা হয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা চূড়ান্তভাবে অবসান হয়েছে। অথচ, দূষণ রোধে যেমন কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই, তেমনি অবৈধ দখল উচ্ছেদে প্রশাসনের গতি নেই।
চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম দিনদিন বিস্তৃত হচ্ছে। কিন্তু পক্ষান্তরে, কর্ণফুলী সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এর ফলে এ নদী দিনদিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগেছে চর। বন্দর কর্তৃপক্ষ নদীর কিছু অংশে যে ড্রেজিং করেছে সেখানে তিন কিলোমিটার জুড়ে নতুন চর সৃষ্টি হয়েছে। নদীর যে স্থানে যে পরিমাণ গভীরতা থাকার কথা সেটা এখন নেই। ফলে এ নদীকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলেও পরিবেশবিদদের অভিযোগ রয়েছে।
আমরা মনে করেছিলাম ইন্টেরিম সরকারের সময়ে পরিস্থিতির উন্নতি হবে যেহেতু এ সময় রাজনৈতিক চাপ থাকার কথা নয়। কিন্তু আমরা হতাশ। পরিস্থিতি যে তিমির সে তিমিরেই রয়ে গেল।