বৃহত্তর চট্টগ্রামের ‘লাইফলাইন’ বলে কথিত কর্ণফুলী নদীর তীর ও চাক্তাই খালের মোহনা সংলগ্ন এলাকার ৩০ একর ভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও বিভিন্ন সমিতির দখলে থাকা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত সোমাবার থেকে (২১ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে ৪৭ দখলদারের কাছে নোটিশ পাঠানো শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ৩০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে বাহক এবং নোটিশযোগে এ বার্তা পৌঁছানো হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতা, সন্ত্রাসী ও কিছু অসাধু সরকারি কর্মকর্তাÑকর্মচারীর যোগসাজশে এখানে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে তোলা হয় এবং নিম্নআয়ের মানুষজনের কাছে তা ভাড়া দেয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ অবৈধ আয়োজন চলে এলেও মাত্র গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নির্দেশে ওই স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদে অভিযান চালায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। দুই দফায় চলা ওই অভিযান অবশ্য মাঝপথে থেমেও যায়।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, তাদের অধীনে খাস খতিয়ানভুক্ত যেসব জায়গা অবৈধ দখলে ছিল গত বছর সেগুলোর অধিকাংশই উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রিট আদেশ থাকায় কিছু জায়গা উচ্ছেদ করা যায়নি। রিট খারিজ হলে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে বাকি জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে আগের উচ্ছেদকৃত জায়গায় নতুন করে শত শত ঘরবাড়ি, দোকানপাট গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ আগে উচ্ছেদকৃত ও বাকি থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলো মিলিয়ে নতুন করে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে আবারও সক্রিয় হলো জেলা প্রশাসন। এবারও একই লোকজনের নামেই উচ্ছেদ নোটিশ দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে তা অপসারণের কথা বলা হয়েছে। নোটিশের অন্যথা হলে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়া হবে হয়তো। ওই এলাকার ভেড়া মার্কেট সমিতিসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে এ নোটিশ জারি ও উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ গ্রহণের খবরে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে সচেতন মানুষের মনে। তবে প্রত্যাশা এই, তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের ক্ষতে আবারও প্রলেপ লেপনের আয়োজনে পর্যবসিত না হয় যেন এ উদ্যোগ। বরং প্রশাসনের উচিত হবে পরিপূর্ণ দায়িত্ব ও দাপটের সঙ্গে কর্মটি সুসম্পন্ন করা। এবং সাধারণ ও সচেতন জনতা যেন তাদের আগের মতো আর দায়সারাগোছের কর্তব্য পালনের সংস্কৃতিতে তাদের আবদ্ধ না দেখে। জেলা প্রশাসনকে সেই সৎসাহস দেখাবার সেই সময় এখন সমুপস্থিত বলেই ধরে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কর্ণফুলীর তীর ও চাক্তাই খালের মোহনা সংলগ্ন এলাকাটি রাহুমুক্ত করার জন্যে অতীতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বহু উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি, চাক্তাই খাল সংগ্রাম কমিটি, শত নাগরিক কমিটি ইত্যাদির ব্যানারে। সেই ধারার আলোকে মানুষের জাগ্রত চেতনাকে গুরুত্ব দিয়ে জেলা প্রশাসন চাইলে অবৈধ দখলদারদের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে নতুন ইতিহাস ও নতুন অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি করতে পারে এ অঞ্চলে। কারণ নদী কর্ণফুলী বিধৌত অঞ্চলটি ঘিরেই একদা সমৃদ্ধ চট্টগ্রামের অবয়বটি গড়ে উঠেছিল।
জাতীয় স্মৃতি ও সম্পদ পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে অবতীর্ণ সরকারের একটি শক্তিশালী সংস্থার পক্ষে এ উচ্ছেদ অভিযান সফল করা যে অসম্ভব কোনো বিষয় নয়, এটা তারা এই উচ্ছেদ অভিযানের সার্থকতার মাধ্যমে জাতিকে জানিয়ে দিতে পারে।
এ অঞ্চলের সংক্ষুব্ধ আমজনতারও এই-ই প্রত্যাশা।
মতামত সম্পাদকীয়