হুমাইরা তাজরিন »
নদীমাতৃক বাংলাদেশে যখন রাস্তাঘাট যানবাহনের বিশেষ চলন হয়নি তখন নৌকাই ছিল আমাদের যাতায়াতের অন্যতম বাহন। এসব নৌকার মধ্যে অন্যতম ডিঙি। জাল কিংবা বড়শি দিয়ে মাছ ধরার জন্য জেলেরা ছোট আকারের এই নৌকাগুলো বিশেষ ব্যবহার করলেও বর্ষায় যখন পানিতে থৈ থৈ করে নদী তখন যাতায়াতের জন্য বিশেষ কদর বাড়ে এই ডিঙির। চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলীতে হরহামেশাই দেখা মেলে এই ডিঙি নৌকার।
বাংলা ভাষায় খাঁটি বাংলা শব্দ রয়েছে একেবারে হাতে গোণা। তার মধ্যে ‘ডিঙি’ একটি। এই শব্দটির অর্থ ক্ষুদ্র আকারের নৌকা। ছোটবেলায় এই নৌকা আঁকেননি এমন বাঙালি খুবই কম পাওয়া যাবে। নৌকা ছিলো বাঙালির নিত্য দিনের সঙ্গি। সাধারণ নৌকায় থাকে খোল (জল নিরোধক),পাটা (নৌকার কাঠের তক্তার মেঝে) , ছই (ছাউনিÑবাঁশ দিয়ে তৈরি) ,হাল (নৌকার সেই অংশ যার উপর ভর করে নৌকা ভাসে) , দাঁড় (নৌকার বড় বৈঠা), পাল (শক্ত কাপড়) , মাস্তুল ( পাল খাঁটাবার বড় খুঁটি) , নোঙর ( জলযান বাঁধবার লোহার যন্ত্র বিশেষ) , ঘুঁড়ি দড়ি, গলুই ( নৌকার সামনের ও পেছনের প্রান্ত অংশ) ,বৈঠা (নৌকা চালাবার অগ্রভাগে চ্যাপ্টা কাঠ) , লগি (নৌকা ঠেলে চালাবার বাঁশের তৈরি দন্ড বিশেষ) এবং গুণ ( দড়ি)। তবে ডিঙি আকারে ছোট হওয়ায় এইসব গুলো অংশ ডিঙিতে থাকে না। কেবল হাল, বৈঠা থাকে। এর গলুই হয় দুদিকে সমান। এর দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৯ থেকে ১০ মিটার হয়ে থাকে। চাম্বল, রেইনট্রি, মেহগনি কাঠে তৈরি হয় ডিঙি। ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা দামের হতে থাকে একেকটি ডিঙি। সাধারণ অগভীর জলে এই নৌকা ব্যবহার করা হয়। শ্যালো নৌকার মতো মোটরযান সংযুক্ত না হওয়ায় ডিঙি চলাচলে নদীর দূষণের ঝুঁকি থাকেনা। আকারে ছোট হওয়ায় বেশি যাত্রীও বহন করেনা এটি। মাঝি থাকেন একজন। যিনি নদীর বুকে ডিঙির আশ্রয়ে ভেসে ভেসে শিকার করে মাছ। মাছ শিকার ছাড়াও অল্প-বিস্তর মালপত্র বহন করা যায় এতে।
কর্ণফুলীর শোভা বাড়াচ্ছে এই ছোট ছোট ডিমওয়ালা পুঁটি (মাছ) আকৃতির এই ডিঙিগুলো। কর্ণফুলী ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডিঙি চলাচল করে। বিশেষ করে বিল এবং হাওড় অঞ্চলে। ডিঙি ছাড়াও বাংলার রয়েছে নানান নামের, নানান গড়নের, নানান কাজে সহায়ক নৌকা যেমন: ছিপ, বজরা ,গয়না, পানসি, কোষা ,পাতাম, বাহারি, রপ্তানি, ঘাসি, সাম্পান, ভেলা এবং খেয়া ইত্যাদি।