করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত সারাদেশ লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে এলো একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু আর ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী শনাক্তের খবর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত একদিনে দেশে ৭ হাজার ২১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের। একদিনে শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর এই সংখ্যা মহামারির এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এদিকে চট্টগ্রামেও সংক্রমণের হার দিন দিন বাড়ছে। এখানে গত ৩১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহে মারা গেছে ১৪ জন আর মোট শনাক্ত হয়েছে ৪২ হাজার। চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৩ এপ্রিল। এরপর থেকে এখানে সংক্রমণের পরিমাণ কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে।
এদিকে দুদিনের দুর্ভোগের পর গতকাল থেকে নগরীতে দূরপাল্লার ছাড়া নগরে গণপরিবহন চলাচলের খবরে স্বস্তি ফিরেছে অফিস, কলকারখানাগামী মানুষের। তবে তাদের মধ্যে স্বাস্থবিধি মানায় গা ছাড়া ভাব দেখা গেছে বলে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। জানা গেছে, গণপরিবহন চলাচল বাড়লেও সাধারণ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। করোনাকালে এই দুর্ভোগকে পুঁজি করে একশ্রেণির গাড়ির মালিক-চালক ও হেলপার এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের চেষ্টাকে অনেকে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা বলে উল্লেখ করছেন। কারণ, এমনিতেই একদিকে সাধারণ মানুষের আয়-রোজগারে প্রবল টান পড়েছে। তার ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও লাগামছাড়া। এই অবস্থায় গাড়িভাড়ার অতিরিক্ত হার মানুষকে ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ করে তুলছে।
করোনাকালের এই মহামারির মধ্যে একটি ভালো উদ্যোগের খবর আতংকগ্রস্ত নগরবাসীর মনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। সেটি হলো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারের উদ্বোধন। মেয়র বলেছেন, প্রয়োজনে আরও সেন্টার ও ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। গত মঙ্গলবার সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় গড়ে তোলা এই ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারের শয্যাগুলোর মধ্যে ৩৫টি পুরুষ ও ১৫টি নারীর জন্যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
করোনাভাইরাস খুব দ্রুততার সঙ্গে তার সংক্রমণ ও সংহার মূর্তির বিস্তার ঘটিয়ে চললেও মানুষের মধ্যে তেমন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বা সচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না, এ এক ভাবনার বিষয় বটে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সকল মহল থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এমন আবেদন ও বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা সত্ত্বেও এসব বিধিনিষেধের খুব সামান্যই মান্য করা হচ্ছে। ঘর থেকে অপ্রয়োজনে বের হওয়া ঠেকাতে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকের সচেতনতার কোনো বিকল্প না-থাকলেও বিষয়টির মূল মনস্তত্ব হচ্ছে রোজগারের আশায় সাধারণ মানুষকে ঘর ছেড়ে বেরোতে হচ্ছেই। এ কারণে শত বিধিনিষেধেও কাজ হচ্ছে না বলে নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টমহলের গভীরভারে ভেবে দেখার আবশ্যকতা এড়ানো যাবে না।