দেশে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন দেখা গেছে গত জানুয়ারিতে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা মালুম করা না গেলেও এপ্রিলের মাঝামাঝি এসে শনাক্তের হার বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে শনাক্ত হয়েছে ৩৪৭৩। অর্থাৎ সংক্রমণরেখা খুব দ্রুতই ঊর্ধ্বমুখী। এক্ষেত্রে সংক্রমণ ও মৃত্যু বরাবরের মতোই ঢাকায় বেশি। তার পরপরই প্রথম দিকে রয়েছে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ। এদিকে পত্রিকার খবর মতে, চট্টগ্রামেও করোনায় মৃত্যু দ্রুত বাড়ছে। গত শুক্রবার ৮ জনের মৃত্যুর পর গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে নতুন করে মারা গেছে আরও ৭জন। এ নিয়ে চলতি মাসের ১৭ দিনে ৬৩ মৃত্যুসহ চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৫২ জনে।
এ অবস্থায় সরকার সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথম দিকে ১৮ দফা নির্দেশনামা জারি করেছিল। এ নির্দেশনার অধীনে অর্ধেক আসন খালি রেখে গণপরিবহন চলাচলের বিধান রাখা হয়। এছাড়া বিদেশাগতদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারিন্টিন নিশ্চিত করার কথাও বলা হয় তখন। গত ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন চলছে দেশজুড়ে। ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউনের এ কঠোরতা বলবৎ থাকবে।
এদিকে সংবাদপত্র আরও একটি উদ্বেগজনক খবর পরিবেশন করেছে। দৈনিক সুপ্রভাত গত রোববার ‘করোনা আক্রান্তের শীর্ষে তরুণেরা, মৃত্যুতে বয়স্করা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, চট্টগ্রামে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। কিন্তু ৬০ বছরের অধিক বয়সী আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই হার ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। অপরদিকে সারাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এই হিসেব বলছে, সারাদেশের তুলনায় চট্টগ্রাম এখনও ভালো অবস্থানে রয়েছে। তারপরও চলতি মাসে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় অনেকের মধ্যে শংকা কাজ করছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের একজন কনসালটেন্ট জানান, চলতি ভেরিয়েন্টে বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণদের একটি অংশও আক্রান্ত হচ্ছে। তরুণদের এ অংশটি জানেই না তাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ কত, তাদের প্রেসার কত। আক্রান্ত হবার পর দেখা যায়, তাদের অনেকেই ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত। সম্প্রতি ওই হাসপাতালে এ ধরনের একজন তরুণ রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন। অন্য একটি পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৯৮৬ জন। আক্রান্তের হিসেবে যা ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এদের মধ্যে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৬৫৭ জন (১৮.৬%) এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এই হিসেবে দেখা যাচ্ছে, করোনা আক্রান্তে তরুণেরা শীর্ষে
শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এ সংক্রমণ এখন সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি যে চিত্রটি উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট, তা হলো, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতার একেবারেই অভাব। সরকার, সচেতনমহল ও ব্যক্তিবিশেষ থেকে নানাভাবে স্বাস্থবিধি মেনে চলার তাগাদা দেয়া অব্যাহত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না তেমন। বেশির ভাগ জায়গায় দেখা যাচ্ছে, মানুষের মুখে মাস্ক নেই, মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও।
এ অবস্থায় সরকারের সমান্তরালে সামাজিকভাবেও সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগেও এ কাজটি করা যায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্ব এক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের সাথে বিষয়টিকে তুলে ধরতে হবে।
আমাদের প্রত্যাশা, মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি সরকারের কঠোর অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্টকে ঠেকিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচিও অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা, করোনার দ্বিতীয় ডোজের কার্যকারিতাও কম নয়। বিশেজ্ঞদের মতে, এটি অন্তত আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে অনেকটাই সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
মতামত সম্পাদকীয়