ঈদের সময় শেকড়ের টানে বাড়ি ফেরে মানুষ। এ দৃশ্য সকল সময়ের। কিন্তু করোনার ভয়াবহতার কারণ জেনেও মানুষ যখন মরিয়া হয়ে রাজধানী, বড় বড় শহর ছেড়ে গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে, কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনে, তখন বিপর্যয় রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেবল ঈদযাত্রায় নয়, রাজধানী ও বড় বড় নগরীর শপিং মলেও একই পরিস্থিতি, কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, গাদাগাদি করে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কেনাকাটা করছেন। গত কয়দিন ধরে শিমুলিয়া, পাটুরিয়ার ফেরিঘাটে মানুষের ঢল, পারাপারের জন্য অন্তহীন প্রতীক্ষা, একদিকে যেমন জীবনের মায়া উপেক্ষা করছে তারা, অন্যদিকে প্রশাসনও ঈদের সময় এ বিষয়গুলি জেনেও সমন্বয়ের ব্যবস্থা নেয়নি। আন্তঃজেলায় গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও মানুষ নানাভাবে দ্বিগুণ তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ছোট যান, প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি, এমন কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে ছোট বড় বাসে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। যে পরিমাণ টাকা খরচ করে পদে পদে বিড়ম্বনা নিয়ে মানুষ ছুটছে সেই টাকায় করোনার কথা চিন্তা করে নগরে কয়েকদিন থাকতে পারা অসম্ভব কিছু ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার নতুন ভয়ংকর ধরণের কথা চিন্তা করে যার যার কর্মস্থলে থেকে ঈদ উদযাপনের জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রতিবেশি দেশ ভারতের করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ও ভাইরাসের নতুন ধরণ বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ-আতঙ্কের সৃষ্টি করলেও আমরা পাশের দেশ হিসেবে এই পরিস্থিতি যথাযথভাবে আমলে নিচ্ছিনা। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ঈদের পূর্বাপর পরিস্থিতির কথা ভেবে এখন থেকেই করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল হবে, কিছুদিন আগে ঢাকায় আইসিইউ এবং চিকিৎসা সেবা সংকটে মানুষের অসহায় মৃত্যু দেখেও আমাদের হুঁশ হচ্ছেনা- এই ধরণের মানসিক অনুভূতি অকল্পনীয়। বিশ্বের অনেক দেশে এখনো কঠোর লকডাউন চলছে, কারফিউ জারি করা হয়েছে, কিছুতেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা। এখন কোভিড-১৯ দক্ষিণ এশিয়ায় তীব্র মহামারি রূপে জাঁকিয়ে বসেছে, এই অঞ্চলের দেশগুলির প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম, অর্থনীতিও দুর্বল-এই পরিস্থিতিতে এই মহামারি ঠেকাতে জনসচেতনতা এবং সেই সাথে সরকারের শিথিল পদক্ষেপ-পরিস্থিতিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাবে তা অনুমান করতেও ভীতির সঞ্চার হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারতের ক্রম অবনতিশীল করোনা পরিস্থিতির জন্য যে কারণগুলি চিহ্নিত করেছে, সেই সব বিষয়গুলি আমাদের এখানেও কম বেশি বিদ্যমান। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশেও শনাক্ত হয়েছে, স্থলবন্দরগুলিতে সীমান্ত পথে নজরদারি এবং পরীক্ষা কড়াকড়ি করে শনাক্তদের কঠোর কোয়ারেন্টাইনে রাখা ছাড়া কোন পথ নেই। ভারত ফেরত মানুষ কাদের সংসর্গে এসেছেন তা নিরূপণ করাও জরুরি।
সর্বশেষ জানা গেল বিআইডব্লিউটিএ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। একদিকে বাড়ি ফেরার আমাদের দীর্ঘকালের সংস্কৃতি অন্যদিকে ভাইরাসের অদৃশ্য হুমকি-এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন কষ্টকর, তবু জীবন সুরক্ষার জন্য এবং পরিবারের সদস্যদের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য অগ্রাধিকার পদ্ধতিই বেছে নেওয়া বিবেচ্য।
সরকারের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় কোনোরূপ ব্যর্থতা কিংবা ফাঁক ছিল কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এটি জরুরি।
মতামত সম্পাদকীয়