বৃহস্পতিবার মা ও শিশু হাসপাতালে চালু হচ্ছে ৭০ শয্যার করোনা ইউনিট #
ভূঁইয়া নজরুল :
ইমপেরিয়াল হাসপাতাল চট্টগ্রাম তথা এই উপমহাদেশের অন্যতম আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি হাসপাতাল। এই হাসপাতালটি চাইলে এখনই পারে করোনা রোগী ভর্তি করাতে। কোভিড হাসপাতাল হিসেবে সরকারের ঘোষণার পরও হাসপাতালটির সময় ক্ষেপণ চলছে।
কোভিড হাসপাতাল ঘোষিত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত হতে নেবে আরো কিছু সময়। সেই কিছু সময় কতদিন হতে পারে তা এখনই বলতে পারছেন না হাসপাতালটির প্রধান নির্বাহি।
ওই হাসপাতাল যখন ‘প্রস্তুত প্রস্তুত খেলায় ব্যস্ত’, সেখানে উদ্বোধন হওয়ার পরও চতুর্থ শ্রেণীর স্টাফ নিয়োগ নিয়ে জটিলতায় চালু করা যাচ্ছে না ১০০ শয্যার হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল।
তবে আশার কথা হচ্ছে কোনো ধরনের প্রস্তুতি কিংবা আগাম ঘোষণা ছাড়াই আগামী বৃহস্পতিবার কোভিড চিকিৎসার জন্য চালু হচ্ছে মা ও শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিট।
২৬ মে সরকার ইমপেরিয়াল হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করে। তবে সবকিছু প্রস্তুত থাকার পরও হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। জানতে চাইলে ইমপেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগী ভর্তির বিষয়ে তাদের প্রস্তুতি কার্যক্রম চলছে। কিন্তু হাসপাতালের সবই তো প্রস্তুত রয়েছে তারপরও কিসের প্রস্তুতি এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালটির একজন কর্তা জানান, সরকারের সাথে কিছু বিষয়ে শর্তাদির বিষয় রয়েছে। আর সেসব শর্তাদি পূরণ করতেই বিলম্ব করা হচ্ছে রোগী ভর্তি কার্যক্রমে।
অপরদিকে একইভাবে ফয়’স লেক এলাকার বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালকে সরকার কোভিড হাসপাতালের জন্য ঘোষণা করলেও এখনই তারা তা চালু করছে না। এবিষয়ে কথা হয় হাসপাতালটির প্রধান কর্মব্যবস্থাপক ও পরিচালক ডা. কামরুল হাসানের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালটি করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করতে কিছু সময় প্রয়োজন। আমরা পৃথক একটি ভবনে করোনা চিকিৎসা কার্যক্রম করতে চাই। কিন্তু এরজন্য রুম, ডাক্তারদের জন্য কক্ষ, বেড, ইলেকট্রিক লাইনসহ আনুসঙ্গিক আরো অনেক কাজ রয়েছে। এই কাজগুলো শেষ করতে সময় যেমন লাগবে তেমনি অর্থেরও প্রয়োজন রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে এসব কাজ সম্পাদনের জন্য অর্থ চেয়েছি এবং চিকিৎসা কার্যক্রমে যারা নিয়োজিত থাকবে তাদের বেতন ভাতাদি সরকারি স্কেলে দেয়ার কথা বলেছি। একইসাথে হাসপাতালের বেড খরচ ও ওষুধের খরচ দেয়ার প্রস্তাবনা দিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এই হাসপাতাল শুধু পুলিশের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ। তাই এখানে অন্য রোগীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই।’
করোনা চিকিৎসার জন্য সরকার নির্ধারিত করে দেয়ার পরও হাসপাতালগুলোর শর্ত বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ইমপেরিয়াল হাসপাতাল তাদের নির্ধারিত রেটে বেডের ভাড়া দেয়ার বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে। আর ওষুধ কিংবা অন্য কিছু বিষয় বলেনি। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল তাদের অবকাঠামোত বিষয়গুলো উত্থাপন করেছে এবং কিছু সুযোগ সুবিধা চেয়েছে। আমরা তাদের এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে তারা রোগী ভর্তির জন্য হাসপাতালটি প্রস্তুত করবে এবং সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে সরকারের সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল কি শুধু পুলিশ সদস্যদের জন্য নির্ধারিত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০০ শয্যা পুলিশ সদস্যদের জন্য রয়েছে, তবে পর্যায়ক্রমে শয্যা আরো বাড়বে এবং তখন আমরা সাধারণ রোগীদের সুযোগ দিতে পারবো।
১০ দিন আগে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল উদ্বোধন হলেও তা এখন পর্যন্ত চালু না হওয়া প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে চতুর্থ শ্রেণীর জনবল নিয়োগ নিয়ে একটু সমস্যা চলছে। শিগগিরই তা কেটে গেলে চালু করা যাবে।
বৃহস্পতিবার মা ও শিশু হাসপাতালে চালু হচ্ছে করোনা ইউনিট
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে প্রায় ৬০০ রোগীকে পৃথক ভবনে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ থাকলেও হাসপাতালটি সরকার ঘোষিত কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষিত হয়নি। কিন্তু তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বসে নেই, তারা নিজ উদ্যোগে করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করছে হাসপাতালের একটি কর্নার। এবিষয়ে কথা হয় হাসপাতালটির কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম আজাদের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে করোনা রোগীদের ভর্তির জন্য কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। সেই হিসেবে আমাদের করোনা ইউনিটে ২০টি শয্যা থাকবে করোনা রোগীদের জন্য এবং ৫০টি শয্যা থাকবে সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের জন্য। তবে পর্যায়ক্রমে এই শয্যাসংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। এছাড়া আমরা ১০টি আইসিইউ সাপোর্ট বেড চালু করারও পরিকল্পনা নিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকার আমাদেরকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করলে হয়তো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতাম। তারপরও আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে চট্টগ্রামবাসীর জন্য এখানকার শিল্পগ্রুপগুলোর অনুদানে করোনা চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।’
মা ও শিশু হাসপাতালের বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘এই হাসপাতালটিকে করোনা চিকিৎসার বিষয়ে আমরা অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি। তারা তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করতে পারে।’
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সব প্রাইভেট হাসপাতালকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেসব হাসপাতাল চিকিৎসা দেবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তথ্য সংগ্রহ করছে মেট্রোপলিটন পুলিশ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে বর্তমানে দুই হাজার ৫৮৮ জন করোনা রোগী রয়েছে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ২০৫ জন এবং মারা গেছে ৭২ জন। কিন্তু চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় বর্তমানে মাত্র তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। এরমধ্যে জেনারেল হাসপাতালে ১১০ শয্যা, বিআইটিআইডিতে ৩০ শয্যা, ফিল্ড হাসপাতালে ৫০ শয্যা এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যা রয়েছে। সবমিলিয়ে ২৯০ শয্যা রয়েছে চট্টগ্রামে। শয্যার অভাবে চট্টগ্রামে রোগীদের মৃত্যুহার বাড়ছে।