কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম »
ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে শব্দদূষণ। প্রতি মুহূর্তে ঘটছে শব্দদূষণ। কি দিন, কি রাত সবসময়ই শব্দদূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে। করোনা মহামারির কারণে সবকিছু স্তব্ধ থাকার সুবাদে অনেকদিন মানুষ শব্দদূষণের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পায়। বিশেষ করে রাতে মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে করোনা না গেলেও বিদ্যমান পরিস্থিতির মাঝেই মানুষের চলাফেরা, কাজকর্ম স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর আবারো শব্দদূষণ বাড়ছে। এই দূষণ মানুষের স্বাভাবিকতা কেড়ে নিচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে স্থিরতা, সুস্থতা। কখন এই শব্দদূষণ বন্ধ হবে তা কারো জানা নেই। শব্দদূষণ সহনীয় মাত্রায় না আসলে বা বন্ধ করার ব্যবস্থা না নিলে মানুষের দেহের ওপর তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কলকারখানার যন্ত্রপাতির শব্দ, যানবাহনের হর্নের শব্দ, বিমান উড্ডয়ন-অবতরণের সময়ে উচ্চ শব্দ, মাইকের শব্দ, গান-বাজনা, সভা- সমাবেশের বক্তৃতাসহ নানা কারণে শব্দদূষণ ঘটছে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে রাস্তা-ঘাটে চলা দায়। মানুষ শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে শব্দ নিয়ন্ত্রণের আইন আছে কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। রাত মানুষের ঘুমের জন্য একটি উত্তম সময়। এ সময় প্রায় সব মানুষ তাদের কাজকর্ম শেষে বাড়ি ফেরে। নীড়ে ফেরে পশু-পাখিরাও।
সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে মানুষ রাতে ঘুমায়। দিনের পাশাপাশি রাতের এই সময়টুকুও হাতছাড়া হয়ে যায়। জেগে থাকতে হয় রাত অবধি। সূর্যাস্ত থেকে ক্ষেত্রবিশেষে সূর্যোদয় পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠানের উচ্চ শব্দ অব্যাহত থাকে। এ ধরণের শব্দ উৎপত্তিস্থল থেকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং রাতের নিস্তব্ধতায় এর ব্যাপকতা আরও গভীরভাবে অনুভূত হয়।
ফলে মানুষের সুনিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটে এবং দেহ ও মনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। কি নগর, কি গ্রাম সর্বত্রই যেন প্রতিযোগিতা দিয়ে শব্দদূষণ বাড়ছে। এ নিয়ে কারো কোন জোরালো ভূমিকাও চোখে পড়েনি কোন সময়। হ্যাঁ, নিঃশব্দে তো আর সব কাজ করা সম্ভব নয়। তাই বলে দিনে-রাতে অনর্থক শব্দদূষণ ঘটানোর কোন মানে হয়না। সাধারণ মানুষকে কষ্টে ফেলে কোন কাজ এমনিতে উচিত নয়। দিনের বেলা শব্দদূষণের মাত্রা বেঁধে দেওয়া এবং রাতের বেলা শব্দদূষণ বন্ধ কিংবা নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা অপরিহার্য বলে মনে করি। পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নত দেশে নেহায়েত প্রয়োজন ব্যতীত গাড়ির হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ এবং অপরাধ হিসেবে গণ্য। সেখানে উন্মুক্ত স্থানে সভা, সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত মাইকে শব্দ সর্বোচ্চ কত ডেসিবল পর্যন্ত হবে এবং কত সময় অবধি চলতে পারবে তা আইন ও বিধি দ্বারা নির্ধারিত। একটা পরীক্ষায় দেখা গেছে উচ্চ শব্দযুক্ত পরিবেশে যারা বসবাস করে বা কাজ করে তাদের শ্রবণ শক্তি দশ বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক হ্রাস পায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) এর মতে সাধারণত ৬০ ডেসিবল মাত্রার শব্দ একজন মানুষকে সাময়িকভাবে বধির করে ফেলতে পারে।
শব্দের সহনীয় মাত্রা হলো
শয়নকক্ষে ২৫ডিবি, বসবাস ও খাবার ঘরে ৪০ডিবি, রেস্তোরাঁয় ৪০-৬০ ডিবি, রাত্রিকালীন ৪৫ ডিবি। যখন এই শব্দসীমা অতিক্রম করে তখনই শব্দদূষণ ঘটে। (সূত্র : উইকিপিডিয়া)।
শব্দদূষণের কারণে শিশু, বৃদ্ধ, রোগী সর্বোপরি সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হ্রাস পাচ্ছে শ্রবণ শক্তি।
রাতের বেলা শব্দদূষণের কারণে কষ্ট আরো বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম না হলে কোন মানুষই সুস্থতা বোধ করে না। মানুষের প্রতিটা অঙ্গই অন্য অঙ্গের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
শরীরের সংবেদী অঙ্গ কান যখন উচ্চ শব্দ নিতে পারে না তখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যাঘাত ঘটাটাই স্বাভাবিক। এরফলে অসুস্থতা আর অস্বস্তি দুটোই বেড়ে যায়।
শব্দদূষণ একটি সামাজিক সমস্যা এবং এ ধরণের দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন করা জরুরি। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। সাধারণ জনমানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম-আয়েশ, বিশ্রাম-নিদ্রা নিশ্চিত করতে উচ্চ শব্দ হতে পরিত্রাণ আবশ্যক। এ ব্যাপারে সকল সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। তাহলেই কেবল শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করি।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক