সরকারি সুযোগ সুবিধার কারণে এবছর সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট বিক্রি হওয়ার সুযোগ ছিল
চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করতে চলছে এখন কাজ
ভূঁইয়া নজরুল>
স্বর্নালী বছরে করোনার থাবায় বেসামাল আবাসন খাত। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে ধুকতে থাকা আবাসন খাত গত কয়েক বছর যাবত আবারো তার পুরনো চেহারায় ফিরতে শুরু করেছিল। সেই হিসেবে গত দুবছর ছিল খুবই পজিটিভ দিক। চলতি বছর সরকারের ঋণ সুবিধা প্রদান, রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো এবং সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট কিনতে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদানের সিদ্ধানেত্ম স্বর্নালী বছর হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। করোনায় সব বেসামাল হয়ে গেছে।
এই বেসামাল হওয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রামে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি এবং প্রেস্টিজিয়াস প্রকল্প গ্রহণে পারদর্শী কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম সিপিডিএল। এ বিষয়ে সিপিডিএলের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘২০২০ সালটি ছিল আবাসনের জন্য গোল্ডেন ইয়ার। আমরা ভেবেছিলাম এই বছর সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট বিক্রি হবে এবং আবাসন খাত ওয়ান ইলেভেনের পর যে নিম্নমুখী হয়েছিল এবার তা ঘুরে দাঁড়াবে। গত দুই বছর ধরে সেই ধারা দেখা গেছে।’
এখন করোনার কারণে কিভাবে এগুচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আমরা নতুন প্রকল্প নিচ্ছি না, একইসাথে যেসকল প্রকল্পে গুটিকয়েক ফ্ল্যাট বুকিং হয়েছে সেসব প্রকল্পে কাজ শুরু করছি না।
তাহলে কোন প্রকল্পে কাজ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব প্রকল্প ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ অবস্থায় ছিল। সেগুলো আমরা শেষ করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছি। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে প্রকল্প বাছাই করে কাজ করা হবে।
সিপিডিএলের প্রধান নির্বাহীর বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে চট্টগ্রামের আরেক স্বনামধন্য ও পাহাড়ে প্রকল্প গ্রহণে পারদর্শী প্রতিষ্ঠান এপিকের পরিচালক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চলতি বছর জানুয়ারির পর থেকে আমাদের ফ্ল্যাট বুকিং বেড়ে গিয়েছিল। এবছর সবচেয়ে বেশি টার্গেট ছিল আমাদের। কিন’ করোনা পরিস্থিতির কারণে সব উলটপালট হয়ে গেল।’
ফ্ল্যাট বুকিং বেড়ে যাওয়ার কারণ কি ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ সরকারের ঋণ নীতি এবং বিভিন্ন প্যাকেজের কারণে এবার শুরু থেকেই এই খাতের সুবাতাস বুঝা যাচ্ছিল। এছাড়া গত দুই বছর ধরেও এই খাতে স্থিতিশীল থাকায় ক্রেতারা আস্থা ফিরে পেয়েছেন।’
রিয়েল এস্টেট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এর আগে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি বেশি ছিল। এছাড়া সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দেয়ায় অনেকে এই টাকায় ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। আর এই প্যাকেজের মধ্যে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো ফ্ল্যাটের সাইজে পরিবর্তন এনে প্রকল্পও নিয়েছিল। এবিষয়ে ফিনলে প্রপার্টিজের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ আবু নাসের বলেন,‘ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে এই খাতে সুবাতাস ফিরে আসছিল। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যা কাটিয়ে উঠা যাবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি প্লটে ফ্ল্যাট কিনতে ট্রান্সফার ফি বাবদ অনেক টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে চলে যায়। এবিষয়েও নজর দেয়া প্রয়োজন।
তবে করোনার কারণে আবাসন খাত অনেক পিছিয়ে গেছে উল্লেখ করে সানমার প্রপার্টিজের হেড অব মার্কেটিং মাহফুজুল বারী বলেন,‘ করোনায় পিছিয়ে যাওয়া আবাসন খাত কবে নাগাদ আবারো ফিরে আসে এর ঠিক নেই। তবে তারপরও আমরা এই বিষয়টিকে মেনে নিয়ে ইতিমধ্যে স্বাস’্যবিধি মেনে কাজ শুরু করে দিয়েছি। গত মার্চের পর থেকে নতুন কোনো ফ্ল্যাট বুকিং হচ্ছে না। আমরা আমাদের পুরনো প্রকল্পগুলোর চলমান কাজ শেষ করতে কাজ করছি।
তবে আবাসন কোম্পানিগুলোর সংগঠন রিহ্যাব চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি আবদুল কৈয়ুম বলেন, করোনায় আবাসন কোম্পানিগুলোর জন্য সরকারের প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে। আবাসন কোম্পানিগুলো শিল্পের আওতায় তা পেতে হবে। অন্যথায় অনেক ডেভেলপার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর ডেভেলপাররা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর প্রভাব অনেক ড়্গেত্রেই পড়বে।
২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের পর নিম্নমুখী হতে থাকে আবাসন খাত। একসময় চট্টগ্রামে প্রায় শতাধিক ডেভেলপার কোম্পানি সক্রিয় থাকলেও গত কয়েক বছর তা অনেক কমে যায়। চট্টগ্রামে মাত্র ১০ থেকে ১২টি কোম্পানি মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প নিতে দেখা যায়।