আজিজুল কদির :
দেশের অর্থনীতির বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ও কুটির শিল্প খাত। এই খাতে নিয়োজিত আছে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৮শত ৬০ জন দক্ষ অদক্ষ শ্রমিক। করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের সব বিপণী বিতানসহ সব ধরনের মেলা আয়োজন বন্ধ থাকায় এই খাতের অবস্থা নাজুক। পাশাপাশি এ বছর পহেলা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান স্থগিত হওয়ায় গোটা এসএমই ও কুটির শিল্প খাত রয়েছে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে।
এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত সময় ধরেই এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১০০০ কোটির মতো। আর করোনা ভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটিসহ দোকানপাট বন্ধ রাখার সময়কাল ঈদুল ফিতর পর্যন্ত বাড়লে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে এই খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে ঘোষিত প্রণোদনা প্রদান খুবই জরুরি।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশ (নাসিব) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মো: নুরুল আজম খান বলেন, বছরে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা টার্নওভার হয় এসএমই খাত থেকে। এর মধ্যে শুধু পহেলা বৈশাখ আর ঈদুল ফিতরের সময় টার্নওভার হয় এর প্রায় অর্ধেক। সেই হিসাবে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪ থেকে ৫ শত কোটি টাকা।
নুরুল আজম খান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চলমান অবস্থা যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে, এই খাতের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা তত বেশি কঠিন হয়ে পড়বে। আগামী তিন মাসে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান, প্রোডাকশন প্ল্যান ও সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদেরকে সহায়ক জামানতের পরিবর্তে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং গ্রুপ গ্যারান্টিকে জামানত হিসেবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জামানত ব্যতিরেকে সহজ শর্তে শুধুমাত্র একটি ইউনিফর্ম আবেদনের মাধ্যমে এই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ প্রদান করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চট্টগ্রামের উপ মহাব্যবস্থাপক জামাল নাসের চৌধুরী বলেন, আমাদের কালুরঘাট, ফৌজদারহাট, পটিয়া, ষোলশহর বিসিক শিল্প এলাকায় মোট ২৩৮টি ছোট বড় শিল্পকারখানা আছে। তারমধ্যে করোনার প্রথমদিকে ৩৫টি কারখানা খোলা থাকলেও বর্তমানে শতকরা ৬৫ ভাগ কারখানা উৎপাদনরত।
করোনায় এই পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিল্প উদোক্তাদের তথ্য অনুসারে বিসিকের কাছে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৭শ ৩৪ কোটি ৮৮ লক্ষ। তবে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে আরো সময় লাগবে। আর তার উপর ভিত্তি করে ঘোষিত সরকারি প্রণোদনাটা দেয়া হবে।
উদোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনার আইভি হাসান বলেন, করোনার ভয়াবহতা কবে লাঘব হবে তা অজানা। সরকার বিরাজমান এই মহাবিপর্যয়ের মাঝে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে হলে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পখাতকে ঘুরে দাঁড়ানোর সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্যে এ খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা সহায়তা উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। সেই সাথে অন্তত যেন চলতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি মওকুফ, সুদবিহীন, ট্যাক্স, ভ্যাটবিহীন সুযোগ করে দেয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে।
Uncategorized