সালাহ উদ্দিন সায়েম :
এক মাস আগে অর্থাৎ গত ১৩ মে চট্টগ্রামে নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬ জন। গত ৮ দিন আগে ৫ মে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে ১১১ জনে। মঙ্গলবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১৭ জনে। ৮ দিন পর আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানে ১১ মে পর্যন্ত দেশে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল গাজীপুর। গাজীপুরকে ফেলে এখন দ্বিতীয় অবস্থানে এসেছে চট্টগ্রাম। প্রথমে রয়েছে করোনার হটস্পট খ্যাত নারায়ণগঞ্জ।
১২ মে পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২৮৬ জন। গাজীপুরে হয়েছে ৩৪৭ জন। আর ময়মনসিংহে ২৪৬ জন। ঢাকা জেলায় হয়েছে ২৩৮ জন।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলছেন, আর কয়েকদিন পর করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানে চট্টগ্রাম নারায়ণগঞ্জকে ছাড়িয়ে যাবে।
হঠাৎ চট্টগ্রামে হু হু করে কেন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে?
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর মনে করছেন, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার সাথে চট্টগ্রামের আন্তঃযোগাযোগের কারণে এখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আমরা খবর নিয়ে জেনেছি, নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বাঁশখালী এবং কক্সবাজারে অনেক ব্যবসায়ী এসেছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াত করছে। এমনকি নগরীতেও বিভিন্ন উপজেলার যানবাহন আসছে। এই আন্তঃযোগাযোগ আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের পথে-ঘাটে এখন কোনো বাধা নেই। মানুষ যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাচ্ছে। আন্তঃযোগাযোগ বন্ধ না হলে সামনে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর হবে।
ফৌজদারহাট বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ সুপ্রভাতকে বলেন, সারাবিশ্বে যেভাবে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের এখানেও বৃদ্ধি পাওয়ার একটা ট্রেন্ড আছে। তাতে আমাদের সময়টা এসে গেছে। ধারণা করছি, মে মাস পর্যন্ত আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমি মার্চ মাসেই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে করোনায় চট্টগ্রাম হবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এখন চট্টগ্রাম মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সামনে চট্টগ্রামের জন্য কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
ভেঙ্গে পড়েছে সামাজিক দূরত্ব ব্যবস্থাপনা
সীমিত আকারে ও শর্তসাপেক্ষে গার্মেন্টস, দোকানপাট, শপিংমল থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। সে ধারাবাহিকতায় দোকানপাট খুলছেও। এতে করে স্বাভাবিক কারণেই রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে।
নগরীতে গত এক সপ্তাহ ধরেই রাস্তাূূয় লোকজন ও যানবাহনের সংখ্যা তুলনামুলক বেশি দেখা যাচ্ছে। গণপরিবহন না চললেও মানুষ নানাভাবে গন্তব্যে যাচ্ছে।
মাস খানেক আগে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সেনাবাহিনীকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। সামাজিক দূরত্ব না মানায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছিলেন মোবাইল কোর্ট। কিন্তু নগরীতে এখন দেখা যাচ্ছে না জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। এ সুযোগটিকে পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন মানুষ। তারা ইচ্ছেমতো বের হচ্ছেন। এতে ভেঙ্গে পড়েছে সামাজিক দূরত্ব ব্যবস্থাপনা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন সুপ্রভাতকে বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার রিমোর্ট কন্ট্রোল এখন মানুষের হাতে। তাদের জীবন তারাই রক্ষা করবে।
আক্রান্তদের ইতিহাস জানা যাচ্ছে না
গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম দিকে যারা শনাক্ত হয়েছিল চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য প্রশাসন তাদের আক্রান্তের ইতিহাস খুঁজে বের করে বলেছিল মৃদু সামাজিক সংক্রমণ। গত এক সপ্তাহ ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও আক্রান্তকারীদের ইতিহাস জানতে পারছে না স্বাস্থ্য প্রশাসন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বললেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে সব আক্রান্তদের ইতিহাস জানার সক্ষমতা আমাদের নেই। আর এখন আমরা সেটা জানার চেষ্টাও করছি না। সামনে হয়তো এমন পরিস্থিতি আসবে যে প্রতিদিন কতজন আক্রান্ত হবে সেটাও হয়তো আমরা বলতে পারবো না।
স্বদেশ