করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ দুইই বেড়ে চলেছে। গত ৩ সপ্তাহ যাবৎ এ অবস্থা চলছে, গতকাল মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ ১২.২০ শতাংশ। সারা দেশে ১০ শতাংশের বেশি। এদিকে দেশে করোনার নতুন ৩৪ ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন গবেষকরা। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। তারা এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি পালনে জনগণের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন। এ পর্যন্ত সারা দেশে ৫০ লাখের মতো মানুষ করোনার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ শুরু হবে ৮ এপ্রিল থেকে। দুই ডোজ টিকা গ্রহণের পর ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ অতিবাহিত হলে অনেকটা শঙ্কামুক্ত থাকতে পারা যায় বলে স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন।
জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে বাধ্য করতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিতকরণের নির্দেশনা জারি করেছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ১০০ জনের অধিক অতিথির সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব কমপক্ষে ৩ ফুট হতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রকাশ্য স্থানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান আপাতত বন্ধ থাকবে। করোনা পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট অভিযান চালু রাখা হয়েছে।
করোনার যে নতুন ধরণ দেখা দিয়েছে তা চট্টগ্রামেও লক্ষ্য করা গিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এবং অন্যান্য মহাদেশের সাথেও এসব ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল দেখা গেছে। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে আরো উদ্বেগের বিষয়। মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী লোকজন নিয়মিত চট্টগ্রামে আসা যাওয়া করছেন, সমুদ্রবন্দর বিধায় বিদেশি নাবিকরাও চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। দেশি বিদেশি পর্যটকরাও আসছেন। আমরা মনে করি এ ক্ষেত্রে সকল রুটেই বাধ্যতামূলক চেকআপের ব্যবস্থা করতে হবে। করোনার নতুন ধরণ আগের চাইতে মারাত্মক, উপসর্গের ধরণও ব্যাপক হয়েছে, সংক্রমণের সাথে সাথে হাসপাতালে নেয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে। নতুন ধরণের করোনার সংক্রমণ হচ্ছে দ্রুত সংক্রমিত অনেকেই তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগে হাসপাতালে ছুটছেন। আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। গণমাধ্যমের তথ্যে দেখা যাচ্ছে তরুণ এবং মধ্যবয়সীরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
সকল ধরণের পরিস্থিতিতে মাস্কপরা, বারবার হাত ধোয়া আর দূরত্ব মেনে চলতে হবে। বিদেশ থেকে যারা আসছেন দুই সপ্তাহ পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক অথবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুই সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন থাকার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে যাতে ভাইরাসের নতুন ধরণের সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। করোনার এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা যথাযথ, দ্রুত ও সহজলভ্য করে তুলতে হবে। আরও পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ানো, সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা বাড়াতে হবে। সরকারি উদ্যোগ, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ-টিকা প্রদান, সংক্রমণসহ সকল তথ্য প্রতিদিন জনগণকে জানানো প্রয়োজন। চসিক এর উচিত ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে প্রচার-প্রচারণা চালানো । বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষায় ব্যাপক অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছেনা। টিকা প্রদানে আগ্রহ কম মানুষের, এটি করোনার জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। শহরেও গ্রামে টিকা প্রদান কেন্দ্র বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা গ্রামের লোকজনকে টিকার আওতায় আনতে ইউনিয়ন পর্যন্ত টিকাদান কেন্দ্র সম্প্রসারণের কথা বলেছেন।
আমরা মনে করি, সরকারের সকল সংশ্লিষ্ট দফতর করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া সংক্রমণ থেকে নিস্তার নেই, এটি সকলকে স্মরণে রেখে ব্যক্তিগত, পারিবারিক সুরক্ষায় তৎপর হতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়