করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা রুখতে চাই ব্যাপক সচেতনতা

দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট দেখা গেছে জানুয়ারিতে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা মালুম করা না গেলেও মার্চের শেষে এসে গত মঙ্গলবার শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশ। অর্থাৎ সংক্রমণরেখা খুব দ্রুতই ঊর্ধ্বমুখী। এক্ষেত্রে সংক্রমণ ও মৃত্যু বরাবরের মতোই ঢাকায় বেশি। তার পরপরই ২৯টি জেলার মধ্যে প্রথম দিকে রয়েছে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ। এদিকে পত্রিকার খবর মতে, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৮৫৯টি নমুনা পরীক্ষায় গত সোমবার পর্যন্ত নতুন করে আরও ২১২ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১১.৪০ শতাংশের শরীরে পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। নতুন শনাক্ত ২১২ জনসহ চট্টগ্রামে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৯ হাজার ৭০৬ জনে। তবে শেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মাঝে কারো মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৬৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
এ অবস্থায় সরকার সংক্রমণ ঠেকাতে ১৮ দফা নির্দেশনামা জারি করেছে। এ নির্দেশনার অধীনে গতকাল বুধবার থেকে অর্ধেক আসন খালি রেখে গণপরিবহন চলাচল করছে। এছাড়া বিদেশাগতদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারিন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে জনস্বাস্থ্যবিদেরা দেশে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন। তারা বলছেন , নতুন ভেরিয়েন্ট দেখা গেছে গত জানুয়ারি থেকে। ফেব্রুয়ারি থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে এ ব্যাপারে স্পষ্টতই গাফিলতি ছিল। বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজির আহমেদ বলেন, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য থেকে আসা ব্যক্তিদের যথাযথভাবে কোয়ারিন্টিন করা দরকার ছিল। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা গেলে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতো।
সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এ সংক্রমণ এখন সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি যে চিত্রটি উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট, তা হলো, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতার একেবারেই অভাব। সরকার, সচেতনমহল ও ব্যক্তিবিশেষ থেকে নানাভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগাদা দেয়া অব্যাহত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না তেমন। বেশির ভাগ জায়গায় দেখা যাচ্ছে, মানুষের মুখে মাস্ক নেই, মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও।
এ অবস্থায় সরকারের সমান্তরালে সামাজিকভাবেও সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগেও এ কাজটি করা যায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্ব এক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের সাথে বিষয়টিকে তুলে ধরতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি সরকারের কঠোর অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্টকেও যথাযথ মাত্রায় ঠেকিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচিও অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা, করোনার প্রথম ডোজের কার্যকারিতাও কম নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি অন্তত আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে অনেকটাই সুরক্ষা দিতে সক্ষম।