করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত হানার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশেষজ্ঞ মহল বলে আসছেন। গতকাল মৃতের সংখ্যা ৩৯, দশ সপ্তাহের মধ্যে দেশে সর্বাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে, গতকাল ২ হাজার ১৩৯। গত ৩ মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। ১ হাজার ৫৬টি নমুনা পরীক্ষায় ১৮১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ২১৫ জন। আক্রান্ত ৪ লাখ ৩০ হাজার ৪৭২ জন। ওয়ার্লড মিটারের তথ্য অনুসারে এশিয়ায় সংক্রমণের শীর্ষ ৫-এ আছে বাংলাদেশ। সংক্রমণে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান ৩৪তম। মৃত্যুর তালিকায় এশিয়ায় অষ্টম।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখি হার বলে দিচ্ছে, এরইমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির শুরুতে নিয়ন্ত্রণের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়নি যার ফলে দেশ দ্বিতীয় দফা সংক্রমণে ঢুকে পড়েছে যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। জনসাধারণের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে যে সচেতনতা থাকার কথা তা এখন অনেকটা অনুপস্থিত। রোগ নিয়ন্ত্রণে মাস্কপরা অপরিহার্য অথচ মানুষ এই আবশ্যকীয় কাজটি করছেন না। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবন-জীবিকার কারণে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু সেইসাথে সকল পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে জনগণের কর্তব্য। মাস্কপরা, নিয়মিত হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, জনসমাবেশ বা ভিড় করতে না দেওয়া-এসব আবশ্যকীয় কাজগুলি আমরা করতে অবহেলা করছি। এখনো করোনার কোনো কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। সুতরাং রোগ প্রতিরোধে সচেতন হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে করোনা রোগী ভর্তি বেড়েছে। কয়েকদিন আগে অনেক শয্যা খালি থাকলেও এখন দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে। করোনা রোগীদের সেবার জন্য দুটি সরকারি হাসপাতাল চমেক ও জেনারেল হাসপাতালে রোগী বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আইসিইউতে ভর্তি বেড়েছে। চমেক হাসপাতাল পরিচালক জানাচ্ছেন, ৬০ শয্যার আরো একটি করোনা ব্লক তৈরি করা হয়েছে। সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে করোনা চিকিৎসায় চিকিৎসক ও স্টাফ নিয়োগ, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, ন্যাজাল ক্যানুলাসহ সকল সুযোগÑসুবিধা পর্যাপ্ত থাকা চাই। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জামের যেন ঘাটতি না হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং টিম থাকা প্রয়োজন। উপজেলার হাসপাতালগুলিতে করোনা প্রতিরোধে ব্যবস্থাদির বন্দোবস্ত থাকতে হবে। শহর-উপজেলা ও গ্রামে জনগণের করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার, মাইকিং, বিলবোর্ড স্থাপন, ওয়ার্ড/ইউনিয়ন ভিত্তিক জনপ্রতিনিধি ও তরুণদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে জনগণের সেবায় প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন নিয়ে জনগণকে বিস্তারিত ধারণা দিতে হবে। বিদেশ থেকে যারা আসছেন তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিদেশি নাগরিক, পর্যটক ও সরকারি-বেসরকারি কাজে আসা, প্রবাসীদের দেশে ফেরা সকলকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার অবহেলা কাম্য নয়। করোনা প্রতিরোধে এ পর্যন্ত সেবা প্রদান, মৃত্যু, সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে যে সকল অভিজ্ঞতা হয়েছে তার মূল্যায়ন করে আশু করণীয় নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন।
জীবন-জীবিকার সংগ্রাম একই সঙ্গে চালাতে হবে। সে জন্যই স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং প্রতিরোধে করণীয় বিষয়সমূহ নিয়ে উদাসীন থাকা বা অবহেলা করা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। সম্মিলিতভাবেই করোনা মহামারি প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়