বিশ্বব্যাপী করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে মর্মে সতর্কতা জারি করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসেস। তৃতীয় ঢেউ প্রাথমিক পর্যায়ে আছে মর্মে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত সপ্তাহ থেকে বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে শুরু করেছে তীব্র সংক্রমিত ভারতীয় ধরণ বা ডেল্টার কারণে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টিকার মর্মস্পর্শী বৈষম্যের সমালোচনা করে বলেন, টিকার ঘাটতি মানে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষকে মহামারির ওপর ছেড়ে দেয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা টিকাকে সকল দেশের জন্য সহজলভ্য করতে একে বৈশ্বিক পণ্য হিসেবে গ্রহণ করতে বলে আসছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের নানা ফোরামেও এ কথা বলে আসছেন। তিনি টিকা উৎপাদনে সক্ষম দেশগুলিতে যৌথ উৎপাদন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের কথাও বলে আসছেন।
ইউরোপ আমেরিকার ধনী দেশগুলিতে অধিকাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছেন, এমন কি চীন, রাশিয়া, ভারত ও এই কাতারে আছে অথচ টিকা উৎপাদনকারী এসব দেশ কম উন্নত ও দরিদ্র দেশগুলিকে প্রয়োজন অনুসারে টিকা সরবরাহ করছে না। করোনা পরিস্থিতি এখন এশিয়া আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ধনী দেশগুলি সবেমাত্র কোভ্যাক্সের মাধ্যমে অল্প কিছু পরিমাণ টিকা দিয়েছে। এমন কি চীন, রাশিয়া, ভারতের মতো দেশগুলিও এ ব্যাপারে রক্ষণশীল আচরণ করছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট চুক্তি করেও আমাদের টিকা দিচ্ছেনা, অল্প কিছু দিয়ে সরবরাহ বন্ধ করেছে। চীনের নীতিও এ ক্ষেত্রে অনেকটা ‘ধীরে চলার’ মতো অথচ চীন এবং দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ করোনা সুরক্ষা ব্যবস্থায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে যেখানে বাংলাদেশও রয়েছে। চীনের সাথে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে বাংলাদেশের আলোচনা চললেও চীন প্রযুক্তি হস্তান্তরে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মর্মে খবর পত্রিকায় এসেছে।
আমাদের দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কলেরা, টাইফয়েড, গুটিবসন্ত, জলাতঙ্ক, টিটেনাস, ডিপথেরিয়ার, টিকা উৎপাদন করতো। এছাড়া দেশের বেশ কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির টিকা উৎপাদনে সক্ষমতা আছে, বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ শতাধিক দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এখন প্রয়োজন টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলির সাথে যৌথ চুক্তি করে দেশেই করোনার টিকার উৎপাদনে যাওয়া।
করোনার অভিশাপ থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে, অর্থনীতি সচল রাখতে জনগণকে টিকার আওতায় আনতে দেশেই টিকা উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সর্বোত্তম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুতই এসব ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশে এখন করোনার টিকা আসতে শুরু করেছে কিন্তু এর অব্যাহত সরবরাহের ব্যাপারে শঙ্কা ও আছে। তাই এ ব্যাপারে রোডম্যাপ থাকা প্রয়োজন। ফাইজারের টিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা বিপাকে পড়েছেন। অন্য টিকা নিতে তাদের অনেকের ভিসার সময় পেরিয়ে যাবে। সুতরাং দেখেশুনে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে যাতে জনগণ ভোগান্তিতে না পড়েন।
করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জনসমাগম এড়ানোর ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে অথচ আমরা তা অনুসরণ করছি না। আমাদের এই অসচেতনতা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। পত্র-পত্রিকায় করোনায় মর্মান্তিক মৃত্যুতেও সতর্কতা ও সুরক্ষার ব্যাপারে আমরা অনেকটা নির্লিপ্ত।
মতামত সম্পাদকীয়