করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা : জীবন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চলাচল নয়

ঈদ উদযাপনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটাছুটি না করে, যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ উদযাপনে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার নবসৃষ্ট অবকাঠামো ও জলযান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অনিবন্ধিত ও ফিটনেসবিহীন নৌযান যাতে চলাচল করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ দেন। অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠা এবং নৌযানের নিরাপত্তা বজায় রাখতে যাত্রী, মালিক এবং নৌযান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
সম্প্রতি লকডাউনের মধ্যে পদ্মার চরে একটি বাল্কহেডকে ধাক্কা দেওয়ায় একটি স্পিডবোট ডুবে গেলে ২৬জন যাত্রী প্রাণ হারায়। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, স্পিড বোটটির নিবন্ধন ছিলনা, চালকও মাদকাসক্ত ছিলেন। ঘাটের ইজারাদার, নৌ-পুলিশ ও অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিধিনিষেধের মধ্যেও গাদাগাদি করে বোটে উঠেছেন। এ ধরণের প্রবণতা পরিহার করতে হবে।
সরকার জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতির স্বার্থে এবং ঈদের প্রাক্কালে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এটি ছাড়া বিকল্প ছিলনা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন, সভা সমাবেশ অনুষ্ঠান, পর্যটন কেন্দ্রগুলির ভিড় এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জনগণের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন। এবারও যদি একই অবস্থায় পুনরাবৃত্তি ঘটে তাহলে করোনার তৃতীয় ঢেউ আমাদের বেসামাল করে দেবে। দেখা যাচ্ছে করোনা মহামারি এখন দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবল আঘাত হানছে, বিশেষ করে ভারতের পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা যদি সতর্ক ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সচেতন না থাকি তবে করোনার ভয়াবহতা থেকে আমরা রক্ষা পাবনা। করোনার ভয়াবহতা রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, আইসিইউ ও অক্সিজেন সংকট মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, দ্রুত টিকা সংগ্রহ, জেলা-উপজেলায় স্বাস্থ্যসুবিধা সম্প্রসারণ-এসব বিষয়ে এখন থেকেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আসন্ন ঈদের পূর্বাপর চলাচল ও ভ্রমণ সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। ইফতার বিতরণ, বিভিন্ন সংগঠনের ত্রাণ সাহায্য কর্মসূচিতে, কেনাকাটায়, যানবাহনের ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে- এ ব্যাপারে প্রশাসন ও উদ্যোক্তাদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। নেপালে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, মালদ্বীপে কঠোর লকডাউন চলছে, ভারতের অবস্থা তো ভয়াবহ। সরকার এ পরিস্থিতিতে কিছু পদক্ষেপও নিচ্ছে। আস্ট্রোজেনেকার টিকা পেতে ৪০ লাখ ডোজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৩০ লাখ টিকা দেয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে- এসব কথা জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। চীন, রাশিয়ার টিকা পেতে এবং দেশে এসব দেশের টিকা উৎপাদনেও প্রয়োজনীয় কথাবার্তা চলছে। আমাদের দেশ ছোট, জনসংখ্যা অত্যধিক তাই সচেতন ও সতর্ক হয়ে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিকল্প নেই।