দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে ওই দিককার ১৩ জেলার বড় হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংকট দেখা দিয়েছে। জেলাগুলো হলো : রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ,দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, নাটোর, নোয়াখালী ও কক্সবাজার। আর হাসপাতালগুলো হলো : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল।
রোগীর পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকায় ওই হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও সেবিকা সংকটও প্রকট হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় ধারণা করা যায়, কোভিড-১৯ এর কালোছায়া থেকে পৃথিবী বুঝি আর অচিরকালের মধ্যে নিষ্কৃতি পাচ্ছে না। আমাদের দেশে চলতি বছরের প্রথম দিকে করোনার শ্লথগতির সামান্য সুবাতাস পরিলক্ষিত হলে কিঞ্চিৎ স্বস্তির আভাস দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা আবার ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে করোনার তার আগ্রাসীরূপের কারণে।
সরকার ও সচেতনমহলের সকল আশাবাদকে ধূলিস্যাৎ করে করোনার ভয়ঙ্কর থাবা মানুষের উদ্যম ও গতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে আবার। এক্ষেত্রে যে-উদ্যোগটি প্রত্যাশার বলিষ্ঠ দীপ জ্বালিয়ে রেখেছিল, তা হলো করোনা ভ্যাকসিন আমদানি ও তা প্রয়োগের উদ্যোগ। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির আশা এখনো পোষণ করছে দেশবাসী। কারণ, প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্পসংখ্যক মানুষই মাত্র ভ্যাকসিনের আওতায় এসেছে।
আবার সাম্প্রতিক সময়ে ভারতেও আশঙ্কাজনকহারে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ছড়াচ্ছে ভয়াবহ গতিতে। এখানে ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট ভাইরাসের কথা শোনা যাচ্ছিল। ডেল্টা ভেরিয়েন্ট নামের ভারতীয় ভাইরাসটি বাংলাদেশের একাংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামেও আশংকার কালোমেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে জনমনে। কারণ, আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনায় সীমিত পরিসরে চলাচলের কথা উল্লেখ থাকলেও তা সব সময় মানা হচ্ছে না। মানুষ ইচ্ছেমতো নানা গন্তব্যে ছুটে চলেছে। চট্টগ্রাম বন্দরনগরী ও গুরুত্বপূর্ণ শহর হওয়ায় এখানে ব্যবসা ও অন্যান্য প্রয়োজনে বিপুল সংখ্যক মানুষের নিত্য চলাচল রয়েছে। কাজেই মানুষবাহিত হয়ে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট এখানেও ছড়িয়ে পড়ার আশংকা মোটেও অমূলক নয়।
এছাড়া গত কয়েক দিন আগের সামান্য বৃষ্টিতে এখানে নতুন ধরনের যে-জলাবদ্ধতা দেখা গেছে, তাও সচেতন মানুষকে ভাবাচ্ছে। ওই জলাবদ্ধতার কারণে কাক্সিক্ষত শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। ভাসমান ময়লা-আবর্জনার মাধ্যমে নানা রোগের জীবাণু এখানেও ছড়াবে না, এমন বলা যাবে না। কাজেই স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে উদাসীনতা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে এখানে। এই মরশুমটি আবার ডেঙ্গুরোগেরও মরশুম। জলাবদ্ধতা, সেই সঙ্গে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দ্রুত অপসারণ এবং মশক নির্মূলে এখনই তৎপরতা বাড়াতে হবে। মনে রাখা দরকার, সাবধানে মার নেই।
মতামত সম্পাদকীয়