করোনার টিকা আবিষ্কৃত হওয়ায় দুঃস্বপ্নের দিনগুলির অবসানের প্রতীক্ষায় রয়েছে বিশ্ববাসী। বাংলাদেশের মানুষও এই আশায় দিন গুনছে যে করোনার টিকা পেতে আর অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হবে না। সরকার ইতিমধ্যেই করোনার টিকা সংগ্রহ, টিকা দেওয়ার পদ্ধতি, টিকা সংরক্ষণ এসব বিষয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। করোনার টিকা প্রদানে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করা হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। সে হিসেবে পর্যায়ক্রমিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের তালিকাও করা হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। টিকার নিবন্ধনে লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র, এ ব্যাপারে একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। নিবন্ধনের পর ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে টিকা দেওয়ার কেন্দ্র জানিয়ে দেয়া হবে। যাদের স্মার্ট ফোন নেই তারা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সহায়তা কেন্দ্র থেকে সহযোগিতা নিতে পারবেন। তবে সমস্যা হল সব নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের কাজটি করা বাঞ্ছনীয়। করোনার টিকা সংগ্রহে এ পর্যন্ত একটি মাত্র টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি হয়েছে। জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমে এই টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা ৬ মাসে পাওয়া যাবে। বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকেও টিকা পাবে বাংলাদেশ তবে সংখ্যা এখনো নিরূপণ হয়নি। টিকা উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সাথে দ্রুত আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন যাতে দেশবাসীকে টিকা প্রদানে কোনোরূপ ছেদ না পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান এবং তাদের নির্দেশিকা মতো টিকা সংগ্রহে সচেষ্ট হতে হবে, টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থাদি এখন থেকেই সম্পন্ন করার জোরদার উদ্যোগ নিতে হবে।
এদিকে রাজধানীতে বিএমএ মিলনায়তনে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিজ্ঞানসম্মত যুক্তির ভিত্তিতে স্বচ্ছতা বজায় রেখে করোনার টিকা দিতে হবে বলে অভিমত দেন। টিকা না পাওয়ার কারণে সমাজে যেন বঞ্চনার অনুভূতি তৈরি না হয় এবং টিকা পাওয়ার ব্যাপারে যে নানা শর্ত যুক্ত করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেন। আলোচনায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক টিকা দেওয়ার আগে অনুশীলন হলে ভুলত্রুটি চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে মত দেন।
মানুষ যাতে সহজে ও সুলভে করোনার টিকা পেতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে। টিকার মূল্য কত হবে কিংবা তা বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে দেওয়া হবে কিনা বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। টিকাদানে বৈষম্য কাম্য নয়। গ্রামের অনেক মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক অবহিত নয়, তাই এ ব্যাপারে ইউনিয়ন/ওয়ার্ডে প্রচার-প্রচারণাও প্রয়োজন। তবে করোনার টিকা প্রদান সময়সাপেক্ষ এবং দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়া তাই মাস্ক পরিধান, স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের মতো এবারের মার্চেও সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন। সুতরাং আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন হতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়