ইউরোপের অনেক দেশে সংক্রমণ কমার পর তা আবার বেড়ে গিয়েছিলো। যাকে বলা হচ্ছে সংক্রমণের দ্বিতীয় আঘাত বা সেকেন্ড ওয়েভ। মূলত ভাইরাস সংক্রমণের হার কমে আবার বেড়ে গেলে তাকে সেকেন্ড ওয়েভ বলা হয়। যে কোনো মহামারির দুই তিনটি ওয়েভ থাকতে পারে। জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে স্কুল কলেজ খুলে দেবার পর বেড়ে যায় করোনা সংক্রমণের হার। মূলত এটিই হলো সংক্রমণের দ্বিতীয় আঘাত।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কি এমনটা হতে পারে? করোনার প্রথম আঘাত শেষ না হওয়া নাগাদ তা স্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। আইইডিসিআরের মতে বাংলাদেশে সংক্রমণের প্রথম ধাপ এখনো শেষ হয়নি। দেশে মার্চে সংক্রমণ শুরু হবার পর প্রতি মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ করে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছিলো মধ্য জুলাইয়ে। তবে কোরবানির ঈদের পর তা কিছুটা কমে যায়। এরপর আবার বাড়তে শুরু করে। আইইডিসিআর জানিয়েছে আগস্টের শেষের দিকে সংক্রমণ যেভাবে কমতে শুরু করেছে তা যদি আরো দু সপ্তাহ অব্যাহত থাকে তবেই ধরে নিতে হবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম আঘাত পার করেছে বাংলাদেশ। এরপর বোঝা যাবে দ্বিতীয় আঘাত কবে আসবে বা কবে শুরু হয়েছে। হলেও সেটা কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
তবে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে যেভাবে করোনা পরীক্ষা হয়েছে তাতে দেশে সত্যিকারের করোনা পরিস্থিতি কী তা নিয়ে কিছুটা সংশয় থেকেই যায়। বর্ষাকাল গেলেই সামনে শীতকাল আসন্ন। শীতে যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায় তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যে সকল দেশে শীতে তাপমাত্রা শূন্য বা তার কাছাকাছি থাকে সে সকল দেশে করোনা আবারো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তবে বাংলাদেশে ইউরোপের মত শীতকালে তাপমাত্রা ততটা কমে যায় না। তাই শীতকালে দেশে করোনার প্রকোপ অতটা বাড়বে না বলেই ধারণা আইইডিসিআরের।
এদিকে, চট্টগ্রামে করোনার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে করোনা রোগী শনাক্তের হার ছিল ৯ শতাংশ, এর আগের দিন ২ সেপ্টেম্বর এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ১ সেপ্টেম্বর ছিল ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এছাড়া আগস্টে ছিল ১২ থেকে ১৩ শতাংশ, জুলাইতে ২০ শতাংশের বেশি এবং জুনে ৩০ শতাংশের বেশি ছিল আক্রান্তের হার। আগে যেখানে নমুনার সংখ্যা ১৫০০ এর উপরে ছিল এখন তা কমে হাজারের নিচে নেমে এসেছে। চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। তবে আগস্ট মাস থেকে কমতে থাকে করোনার প্রকোপ। চট্টগ্রামে এপর্যন্ত ১৭ হাজার ৩৬২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এবিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন বলেন, ‘চট্টগ্রামে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। এতে বলা যায় করোনা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নাগরিকরা ঘর থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করেছে এবং গণপরিবহনও চলাচল করছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া বিকল্প নেই।
বিশ্বের অনেক দেশে দ্বিতীয় দফায় আঘাত করে করোনা। আমাদের এখানেও সেই শঙ্কা রয়েছে । জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে শীতের আগ মুহূর্তে আরো একটি আঘাত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বা আঘাতকে মোকাবেলা করার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। একইসাথে নাগরিকদেরও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে অতীতে বিভিন্ন মহামারিতে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দ্বিতীয়বারের আঘাতে।
মতামত সম্পাদকীয়