করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ৩০ জুনের মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সকল প্রকার বকেয়া বিল সম্পূর্ণ পরিশোধের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের চাপ সৃষ্টি করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
আজ ২৩ জুন (মঙ্গলবার) এক বিবৃতিতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বিল আদায়ের এই সিদ্ধান্তকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা ভাইরাসের মহামারীতে সরকার তিন মাসের জন্য সেবা সংস্থাসমূহের বিল আাদায় বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু রকেট গতিতে এগিয়ে চলা করোনা সংক্রমণে সাধারণ মানুষের জীবন যখন বিপর্যস্ত ঠিক এমন সময়ে সরকার ঘোষণা দিল ৩০ জুনের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হবে। সকল প্রকার বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। করোনা মহামারীর ভয়াবহতার কারণে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষ এখন দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে। সমাজের নিন্ম ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে গেছে। আয় রোজগার না থাকার কারণে অনেকে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সরকার রেড জোন, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও সাধারণ জনগণের মাঝে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে পারেনি। এরমধ্যে ৩০ জুনের ভিতরে গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া অমানবিক। এতে সাধারণ জনগণের মাঝে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। তাই সরকারকে অবিলম্বে পানির মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা থেকে সরে এসে করোনাকালে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত শয্যা ও আইসিইউ সুবিধা। বেসরকারি হাসপাতালে মিলছেনা ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা। করোনা আতঙ্কে অন্যান্য রোগীরাও পড়েছেন বিপাকে। ফলে চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যু হচ্ছে অসংখ্য মানুষের। চট্টগ্রামের কোভিড পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার নামে চট্টগ্রামে এক ধরনের তামাশা চলছে। পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলে ১৫/২০ দিনেও তার রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে না। রেজাল্ট আসতে আসতে অনেকেই মারা যাচ্ছেন। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সাংবাদিক এমএ হোসাইন ঢাকায় পরীক্ষার জন্য নমুনা না পাঠালেও তার মোবাইলে ম্যাসেজ আসে সে করোনা পজিটিভ। স্বাস্থ্যখাতের অযোগ্যতা, অধঃপতন আর মানুষের প্রতি অবহেলার চূড়ান্ত নমুনা চট্টগ্রামবাসী এখন দেখছে। কিন্তু এমন সংকটময় পরিস্থিতিতেও সরকার চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে কার্যকর কোনো প্রদক্ষেপ নিতে পারছে না। করোনার এই দুর্যোগকালে নিত্য পণ্যের বাজারেও সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার এখন অস্থির। বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু বাজারে সরকারের কোন নজরদারি নেই, তাদের নজর লুটপাটে। দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার প্রমান করেছে নাগরিক সেবায় তারা ব্যর্থ। অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনের উদ্দেশ্য সফল করতে হলে সরকারকে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাদের ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দিতে হবে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পে এনজিওদের কিস্তির টাকার জন্য চাপ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে খাদ্য ও ঔষধের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর অভাবে সেখানকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।
জনগণের স্বার্থে দুর্যোগ মুহূর্তে অসহায় মানুষের কাছ থেকে বিল আদায় করা অমানবিক ও অযৌক্তিক। তাই অবিলম্বে করোনাকালে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের বিল মওকুফের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
মহানগর