গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটির সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ২৩৮ জনে। এছাড়া একই সময়ে নতুন করে ৩ হাজার ৩৬০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সর্বমোট ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হলেন।
এমন অবস্থায়ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মিলছে না চিকিৎসাসেবা। অথচ জরুরি বিভাগে সবার আগে জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সেই সেবা একেবারেই মিলছে না।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ জরুরি বিভাগে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাথমিক সেবা না দিয়েই ভর্তির জন্য সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওয়ার্ডে। এছাড়া টিকিট কাটা থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে ভর্তি করাতেও লাগছে বেশি সময়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসায় গাফিলতি মৃত্যু দিকে ঠেলে দেওয়ারই শামিল।
রোববার (৫ জুলাই) সুপ্রভাতের প্রতিনিধি দেখতে পান, জরুরি বিভাগের ১০০২ নম্বর ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষের সামনে একটি ট্রলি দিয়ে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা। বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষারত রোগী ও স্বজনদের ভিড়। কক্ষটির ভিতরে একজন দাঁড়িয়ে রোগীদের টিকিট নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসককে পৌঁছে দিচ্ছেন। ভেতরে সুরক্ষাসামগ্রী পরিহিত কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বজনের কাছ থেকে রোগীর সমস্যার কথা শুনে সরাসরি ভর্তির জন্য পাঠাচ্ছেন ওয়ার্ডে। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসককে বাইরে কিংবা ভিতরে রোগীদের কাউকে সরাসরি সেবা দিতে চোখে পড়েনি।
এদিকে, জরুরি বিভাগের বাইরে টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইনে দেখা গেছে। তবে ছিল না সামাজিক দূরত্ব। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে আঁকা সাদা গোলবৃত্তগুলো মুছে গেছে। কোভিড ও ননকোভিড প্রায় সব রোগীর টিকিট একই কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে। পাশে একটি কোভিড কাউন্টার করা হলেও সেটি এখন চালু করা যায়নি।
এর আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসাসেবায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আরও ১০০ শয্যা। বর্তমানে ১৫০ শয্যায় চলছে করোনা রোগীদের চিকিৎসা। কিন্তু হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শয্যা সংকটের অভাবে হাসপাতালের বারান্দায় ঠাঁই মিলছে রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯ নম্বর নাক-কান-গলা ওয়ার্ড ও ২০ নম্বর চক্ষু ওয়ার্ড এই দুটিতেই নতুন ১০০ শয্যা গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওয়ার্ড দুটি প্রস্তুত করার প্রায় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এদিকে, ১০০ শয্যা বাড়ানোর কাজ চলার পাশাপাশি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে ৩০০ অক্সিজেন লাইন। এছাড়া হাসপাতালে সাতটি আইসিইউ শয্যা ছাড়াও ১০টি হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা রয়েছে।
এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমরা ওয়ার্ড দুটি প্রস্তুত করে রাখছি। কিন্তু আপাতত আগের ১৫০ শয্যাতেই করোনা চিকিৎসাসেবা চলবে। যেহেতু এটি সরকারি হাসপাতাল, সেক্ষেত্রে রোগী আসলে আমরা ফিরিয়ে দিতে পারি না। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।’
কিন্তু কর্তৃপক্ষের আশ্বাস বা বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের অনেক ফারাক। চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলো পুরোদমে স্বাস্থ্যসেবা না দেওয়ায় সরকারি হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা। কিন্তু সেখানেও স্বাস্থ্যসেবার মান সন্তোষজনক নয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও পদক্ষেপ না নিলে আর কখন নেবে সেটাই প্রশ্ন।