নিজস্ব প্রতিবেদক »
ঈদকে ঘিরে ক্রেতার চাহিদা বাড়ার অজুহাতে মুরগি, মাছ ও গরুর মাংসের বাজারে ‘কৃত্রিম সংকট’ এর দোহাই দিয়ে এ তিনটি চড়া দামের মধ্যে রয়েছে স্থিতিতে। তবে শীতকালীন সবজির যোগান পর্যাপ্ত থাকায় স্বস্তির চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
বৃহস্পতিবার নগরীর অন্যতম রেয়াজউদ্দিন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বেগুন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শিম ৪০ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা, মূলা ২০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ১০০ টাকা, করল্লা ৬০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, বরবটি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, সজনে ১২০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া, মানভেদে প্রতিটি লাউ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এসব সবজি গত এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এছাড়া, রমজানের শুরুতে চড়া দামে লেবু বিক্রি হলেও এখন তা কমতির দিকে। গতকাল বাজারে প্রতি হালি লেবু মানভেদে ২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে শীতকালীন চাষের শেষমুহূর্তের সবজির যোগান পর্যাপ্ত রয়েছে। ঈদের আগেই খরচ সামলাতে কৃষকরা কমদামে সবজি বিক্রি করছেন। ফলে বেশ কমতির দিকে সবজির বাজার।
এদিকে ভারতের আমদানি পেঁয়াজ টিসিবি বাজারে আসার কারণে গত দুই দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দামও কমেছে। টিসিবি বাজারে ৪০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। কমেছে আদার দামও। বাজারে আমদানিকৃত আদা কেজিপ্রতি ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। স্থিতিতে রয়েছে রসুনের বাজার। নতুন দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারতের আমদানির পণ্য পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম আরো কমবে। তাছাড়া দেশি পেঁয়াজও বাজারে পর্যাপ্ত রয়েছে। যার ফলে দাম বাড়ার আর সম্ভাবনা তেমন দেখছেন না বলে জানান পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ঈদকে ঘিরে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি সাইজভেদে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৬২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। এছাড়া গরুর মাংস ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কোন কোন বাজারে হাড়যুক্ত গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতেও দেখা গেছে। যা এক মাস আগেও ৭০০ টাকা কেজিতে পাওয়া গেছে। এই দর সরকার-নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশি।
সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর পবিত্র রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৬৪ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু কোথাও সরকার নির্ধারিত দরে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না।
গরুর মাংস বিক্রেতারা জানান, বাজারে গরুর সংকট থাকায় দাম বাড়িয়েছে গরু গরু ব্যবসায়ীরা। যার ফলে মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
গতকাল বাজারে ফার্মের লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১৫ টাকা ডজন বিক্রি হয়। চড়া দরের মধ্যে আরও চড়া হয়েছে মাছের বাজারও। বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাছের মধ্যে প্রতি কেজি রুই মাছ সাইজভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা,। এ দুটি মাছ দুই সপ্তাহ আগেও সর্বোচ্চ ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। তাছাড়া চিংড়ি মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, চাষের কই মাছ ২২০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, ট্যাংরা মাছ ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাসের মধ্যে প্রত্যেক মাছে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সমুদ্রের মাছের যোগান সংকট ও চাষের মাছের সরবরাহ কমাতেই দাম উর্ধ্বগতিতে। ঈদের আগে আরও দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।