সুপ্রভাত ডেস্ক »
চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদ এবং নিরাপত্তার দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেওয়ার পর এবার সারা দেশে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (নিউরো সার্জারি গ্রিন ইউনিট) আব্দুল আহাদ রোববার এই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, “আমরা সারা দেশে কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করছি।” খবর বিডিনিউজের।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাতে তিন দফায় হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এরপর রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অন্য ডাক্তাররা তাদের কর্মবিরতিতে সংহতি জানালে রোববার সকাল থেকে হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
হামলাকারীদের আটক ও শাস্তির পাশাপাশি সারা দেশে চিকিৎসক ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দুই দফা দাবি জানানো হয় চিকিৎসকদের তরফ থেকে। কিন্তু দাবি পূরণের আশ্বাস না মেলায় দুপুরে সারা দেশে সব চিকিৎসাকেন্দ্রে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে ছয় দফা দাবি জানানো হয়।
ডা. আব্দুল আহাদ বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যেসব ঘটনা ঘটেছে, আমরা নিজের জীবন বাজি রেখে, সারা বাংলাদেশে কি পরিমাণ সার্ভিস দিয়েছি। ডাক্তাররা চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে দিয়েছে। খাবার দিয়েছে, ২৪ ঘণ্টা, ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা ডাক্তার, আমরা মানবতার সেবক, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরই পার্ট।”
শনিবার রাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, “প্রথম ঘটনা আমাদের নিউরো সার্জারি বিভাগে। একজন আবাসিক ডাক্তার অপারেশন করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে যায়। রোগীর লোক তাকে বের করে তার উপর ধস্তাধস্তি করে, ডাক্তারকে মারে।
“তাকে সেইভ করার জন্য আমাদের আরেক ডাক্তার ওখানে যান, তখন তার ওপরও অতর্কিতে আক্রমণ করে। কলার ধরে তাকে ২০১ নম্বর অপারেশন থিয়েটারের সামনে থেকে ডিরেক্টর স্যারের সামনে নিয়ে আসে। মারতে মারতে নিয়ে এসে এখানেও তারা খান্ত হয় নাই। স্যারের অফিসে পিএ এর চেয়ারর তিনি বসেছিলেন। এখানেও তার উপর আক্রমণ করা হয়।”
দুই দাবি পূরণ না হওয়ার কথা তুলে ধরে ডা. আহাদ বলেন, “আমরা বৈঠকে বসেছিলাম, দুইটা সিদ্ধান্ত, আমাদের চিকিৎসকদের ওপর যারা আক্রমণ করেছে, অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে এবং আমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
“আমরা যারা ইমার্জেন্সি সার্ভিস দিই, আপনারা দেখেছেন, সেখানে কত লোক থাকে। ইমার্জেন্সি সার্ভিস দেওয়ার জন্য আমাদের যথেষ্ট আর্মি পুলিশ এবং অন্যান্য ফোর্স এখানে থাকবে। সশরীরে উইথ আর্মস সেখানে উপস্থিত থাকবে। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল প্রশাসন এটা করতে ব্যার্থ হয়েছেন।”
রেজিস্ট্রার বলেন, “কালকে রাতে আরও দুটি ঘটনা ঘটে, একটা ঘটনা হচ্ছে, একটি গ্রুপ বাইরে আরেকটা গ্রুপকে আক্রমণ করেছিল। সেই গ্রুপ সেবা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে এসেছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সিতে এসেছিল চিকিৎসা সেবা নিতে, তাদের যে বিরোধী পক্ষ ছিল, তারা ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিৎ করে চলে গেছে। তাই, আমরা দেখছি এখানে রোগীও নিরাপদ না। আপনারা কোথায় সেবা নিতে আসবেন। এখানে রোগীও নিরাপদ না।
“আরেকটা ঘটনা, ইমার্জেন্সি রুমে একজন কিডনি রোগী এসেছিল, অনেক ইমার্জেন্সি রোগী মারা যায়। মারা যাওয়ার পরে আমার ডক্টর মেডিকেল অফিসারের উপর হামলা হয়। ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্স ওসেক ভাংচুর করা হয়। তাই আমরা দেখতে পাই এখানে ডক্টর রোগী কেউই নিরাপদ না।”
এই চিকিৎসক বলেন, “গতকাল ডিরেক্টর স্যারের অনুরোধে রাত ১১ টায় কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাই। আমরা সকাল ৮টা পর্যন্ত ইমার্জেন্সি সার্ভিস দিয়েছি। হাসপাতাণে আমরা ছিলাম। কিন্তু আমরা কোনো নিরাপত্তা ফোর্স এখানে দেখি নাই। ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্সের সামনে নিরাপত্তা ফোর্স থাকার কথা ছিল। কিন্তু আমরা দেখি নাই। তাই আমরা বাধ্য হয়ে নিরাপত্তার জন্য আজ থেকে সারা দেশে কর্ম রিরতিতে যাচ্ছি।”