পাইকারি বাজারে ক্রেতা সংকট
আড়তে পর্যাপ্ত মজুদ
পাইকারিতে কমলেও খুচরায় চড়া
রাজিব শর্মা
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকলেও খাতুনগঞ্জের আড়তে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে দেশীয় চাষের মুড়িকাটা পেঁয়াজ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দেশীয়, পাকিস্তানি ও চীনার আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ। কিন্তু সে অনুসারে পাইকারি বাজারে ক্রেতা সংকট রয়েছে। এতে পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়তে পারেন করছেন মনে করছেন অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটা আড়তে রয়েছে বস্তায় বস্তায় দেশি পেঁয়াজ। তার সাথে মাঝেমাঝে কয়েকটি আড়তে দেখা যায় আগের আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজও। তাছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত রয়েছে চায়না ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ। সবমিলিয়ে আড়তে পেঁয়াজের সংকট না থাকলেও রয়েছে ক্রেতা সংকট। ফলে অনেক দেশি পেঁয়াজের আড়তে মজুদ করে রাখা পেয়াঁজে পচন ধরতে দেখা যায়। এমনকি অনেক বস্তায় পেঁয়াজপাতা গজানোর দৃশ্যও দেখা যায়।
খাতুনগঞ্জে ক্রেতা সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী কম দামে পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছেন। কারণ ক্রেতার অভাবে নষ্ট হতে শুরু করেছে অনেক আড়তের পেঁয়াজ। আর পচনধরা পেঁয়াজ আরো কম দামে বিক্রি করছেন আড়তদাররা। পাইকারি বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব এখনো পড়েনি। পাইকারি আড়তে প্রতিকেজি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা আর তা খুচরা বাজারে বিক্রি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে ভারতের আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা যা খুচরা বাজারে ১৪০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও একই চিত্র দেখা যায়। সংস্থাটির ৮ জানুয়ারি হালনাগাদ তথ্য বলছে, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আর আমদানি পেয়াঁজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। যা উভয়েই গত তিন দিন আগে বাড়তি ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা।
দাম কমার বিষয়ে বিক্রেতারা জানান, দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় একদিনে চাহিদার চেয়ে যোগান বাড়তি থাকায় পেঁয়াজের দাম দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাছাড়া মানে ছোট হওয়াতেই দেশি পেঁয়াজে ক্রেতা আগ্রহ কম। অন্যদিকে বাজারে দেশি পেঁয়াজ বেশি থাকায় আমদানি পেঁয়াজের দামও কমে গেছে।
চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ী মো. ফোরকান বলেন, নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পেঁয়াজ কম এসেছিল। এখন আবার সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতার উপস্থিতি কম। তাছাড়া বাজারে দেশি পেঁয়াজও আসতে শুরু করেছে। কাজেই আরও দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. ইদ্রিছ বলেন, আড়তে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। ক্রেতার চাপ স্বাভাবিক। কিন্তু আশানুরূপ ক্রেতা নেই।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত দুই অর্থবছরের পুরো ১২ মাস ধরে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, এবার গত সাড়ে ৫ মাসেই আমদানি হয়েছে প্রায় সেই পরিমাণ। এ অবস্থায় ভারতের বাজারে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেও দেশের ফলন বের হওয়াতেই বাজারে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। এবার দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের চাষ হয়েছে।
সূত্র জানায়, অর্থবছর ২০২২-২৩ এ বিভিন্ন দেশ থেকে জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ৫৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে দেশে পেঁয়াজ এসেছে ৪ লাখ ২১ হাজার টন। শুধু ২৩ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকেই পেঁয়াজ এসেছে ৪৬ হাজার টনের বেশি। ভারতের বদলে বিকল্প ১০ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে ৩১ হাজার টন। সেই পেঁয়াজ বাজারে এখনো আসেনি। ওই পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।