শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
সকাল ১০টা। পাসপোর্ট অফিসে প্রবেশ করতেই দেখা যায় পুরুষদের দীর্ঘ লাইন। পাসপোর্ট গ্রহণ ও ছবি তোলার দুটি লাইন অজগরের মতো জড়িয়ে রেখেছে পুরো অফিস। কেউ এসেছে আবেদন জমা দিতে ও পাসপোর্ট নিয়ে যেতে। কাজ ছাড়া খুবই অল্প মানুষের সমাগম, তারাও গেছেন পরিবারের অন্য সদস্য নিয়ে। লাইন ধরেই নিচ্ছেন তথ্য সেবা, আবেদন জমা, ছবি তোলা ও পাসপোর্ট গ্রহণের কাজ।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ডবলমুরিং থানার মনছুরাবাদ এলাকার বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
দেখা গেছে, পাসপোর্টের আবেদনকারীরা আবেদনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার স্লিপ ঠিকঠাকভাবে সংযুক্ত করে আনার পর চার নম্বর কাউন্টারে আবেদনের ডাটা এন্টি করে পাঠিয়ে দিচ্ছে ছবি তুলতে। আর যদি কারো কোনো ভুল থাকে, তাহলে তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছে ১০ নম্বর কাউন্টারে। সেখানে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সংযুক্ত এবং জমা দিবে। এছাড়া দালালের আধিপত্য না থাকায় সাধারণ মানুষও একে অন্যকে সহযোগিতা করেন। ডাটা ইনপুটের কাজ হওয়ার পর ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক দেওয়ার জন্য পুরুষদের ১০২ ও মহিলাদের ১০৩ নম্বর কক্ষে লাইন ধরতে হচ্ছে । ওখানেই সংশোধন করা হচ্ছে আবেদনের যেকোনো ভুল। এ কাজ শেষেই আবেদনকারীরা পাচ্ছেন ডেলিভারি স্লিপ।
অন্যদিকে যারা পাসপোর্ট তৈরি হওয়ার খুদে বার্তা পেয়েছে। তাদের যেতে হচ্ছে ১০ নম্বর কাউন্টারে। ওখানে ডেলিভারি স্লিপ জমা দিলে পুরুষদের পাঠানো হচ্ছে ১২ নম্বর কাউন্টারে ও মহিলাদের ১১ নম্বর কাউন্টারে। এর মধ্যে বৃদ্ধ, অসুস্থ, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীরা সরাসরি ১১ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে ডেলিভারি স্লিপ জমা দিয়ে অপেক্ষা করলে, আগে জমা দেওয়ার ভিত্তিতে আগে পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছে। আবেদন জমা কিংবা পাসপোর্ট উত্তোলনে এখন সময় লাগছে প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এ নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে আসা মানুষদের মধ্যে স্বস্তির পাশাপাশি অসন্তোষও দেখা যায়।
পাসপোর্ট নিতে আসা লোকমান আলী নামের এক ব্যক্তি জানান, ‘পাসপোর্ট অফিসের কাজগুলো এখন বেশ গুছানো হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে, সেই খবর এসএমএসে পাঠিয়েছে। পাসপোর্ট নিতে এসে ডেলিভারি স্লিপ জমা দেওয়ার ১৫, ২০ মিনিটের মধ্যে ই-পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি। কিন্তু ডেলিভারি স্লিপ জমা দিতে প্রায় এক ঘণ্টার মতো লাইনে ধরতে হয়েছে। ওই কাউন্টারে যদি আরও লোক থাকতো তাহলে আরও সময় কম লাগতো।’
আবেদন জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ানো বেলাল নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আগের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি রি-ইস্যু করতে এসেছি। রি-ইস্যু ও নতুন আবেদনের সবকাজ একই। এটা আলাদা করলে ভালো হতো। এছাড়া অনেক বড় লাইন। লাইন কমানোর জন্য কাউন্টার বাড়ালে পাসপোর্ট করতে আর কোনো ভোগান্তি থাকতো না।’
আগের এমআরপি পাসপোর্ট ও ই-পাসপোর্ট করতে আসার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে তো পাসপোর্ট অফিসে আসা যেতো না। পুরো অফিস দালালের রাজ্য ছিলো। তবে ওটা এখন আর নেই বললে চলে। অনেকে নিজেরা আবেদনের ফরম পূরণ করে আবেদন জমা দিতে এসেছে। আর যারা পারে না, তারা কম্পিউটারের দোকান থেকে আবেদন করে এসেছে।’
সার্বিক বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক তারিক সালমান বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহকদের পাসপোর্ট দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। গ্রাহকরাও নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট পাচ্ছেন। তবে সংশোধনীর ক্ষেত্রে কিছু পাসপোর্ট পেতে গ্রাহকদের দুই-তিনদিন বিলম্ব হচ্ছে। ঘরে আবেদন করে অফিসে নিজ হাতে জমা দেওয়ার জন্য বায়োমেট্রিক ও ছবি একই দিনে তোলা হচ্ছে। তাই এখানে কোনো তৃতীয় পক্ষের হাতের প্রয়োজন হবে না। পদ্ধতিগত কারণেই দালালদের পাসপোর্ট অফিসে আসার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও অনেকে অভ্যাসগত কারণে নিজেরা কাজ না করে অন্যদের দিয়ে কাজ করতে চায়, তাদের কষ্টটা বেশি হচ্ছে।’
আবেদনকারী ও পাসপোর্ট গ্রহীতাদের দীর্ঘলাইন নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিসে লোকবলের একটা সংকট রয়েছে। বিশেষ করে ছবি তোলার জায়গায় লোক খুব কম। সেখানে বর্তমানে ছয়জন লোক কাজ করছেন। তবে গ্রাহকের তুলনায় এ ছয়জনের সামাল দেওয়া খুবই কষ্টকর। এছাড়া তারা চাইলেও তাড়াহুড়ো করা সম্ভব নয়। এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তখন পাসপোর্টধারীদের সমস্যা আরও বাড়বে। আমরা আশা করি, লোকবল বাড়ানো হলে গ্রাহকদের মধ্যে পাসপোর্ট অফিস নিয়ে আর কোনো অবজেকশন (অভিযোগ) থাকবে না।’