মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ করোনাভাইরাস যুগের সেরা ও খারাপ স্থানগুলো নির্ধারণের জন্য অর্থনীতির চাকা সচল রেখেই এ ভাইরাসটিকে মোকাবেলার সক্ষমতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা ২০০ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির ৫৩টি দেশকে মূল্যায়ন করেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। তারা ভাইরাস সংক্রমণের হার, সামগ্রিক মৃত্যুর সংখ্যা, পরীক্ষার সক্ষমতা, ভ্যাকসিন সরবরাহের চুক্তি, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অবস্থা, লকডাউনের প্রভাব এবং নাগরিকদের চলাফেরার স্বাধীনতাকে বিবেচনায় রেখেছে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যখন আমেরিকা ও ইউরোপের মতো অনেক ধনী দেশ নাকানিচুবানি খেয়েছে তখন ব্লুমবার্গের সমীক্ষায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সক্ষমতার শীর্ষ দশের তালিকায় দেখা যায় এমন দেশের নাম যে দেশগুলো ধনী দেশগুলোর তুলনায় অনেক ভালো করেছে। এই তালিকায় আছে নিউজিল্যান্ড, জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ডেনমার্ক ও ভিয়েতনাম। এই তালিকায় ২৪তম স্থানে আছে বাংলাদেশ।
ব্লুমবার্গের সমীক্ষায় উঠে আসা শীর্ষদশের মধ্যে আটটি দেশই গণতান্ত্রিক দেশ। সরকারগুলোর প্রতি স্ব স্ব নাগরিকদের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে কিনা তার ওপর নির্ভর করেছে সক্ষমতার হার। এ সরকারগুলোর দিকনির্দেশনার প্রতি নাগরিকদের যথেষ্ট আস্থা ছিল বলে এমন হয়েছে দাবি ব্লুমবার্গের।
করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের পর বিশ্বের অনেক দেশে ভাইরাসটির দ্বিতীয় ঢেউ লেগেছে। ইতিমধ্যে আবার নতুন করে লকডাউনে যেতে বাধ্য হয়েছে বেশ কিছু দেশ। যদিও লকডাউনের চেয়ে স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলার ওপর শুরু থেকে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন অনেকে।
বাংলাদেশ প্রথম ঢেউ মোটামুটি মোকাবেলা করতে পেরেছে বলা যেতে পারে। এখন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে আবার। প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতিকে বিশেষজ্ঞরা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে এবার লকডাউনের দিকে না গিয়ে জনগণকে স্বাস্থ্যসচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই মাস্ক পরার ওপর জোর দিয়েছে সরকার। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং মাস্ক পরিধান না করলে জরিমানা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটিও একই মত দিয়েছে। এমন একটি কর্মপরিকল্পনা জমা দিয়েছে কমিটি। গত বুধবার এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে আলোচনা হয়েছে। পরিকল্পনায় বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের উদ্যোগ নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, করোনা মোকাবেলায় গোটা সরকার ব্যবস্থাকে যুক্ত হওয়া দরকার। করোনার শীতকালীন প্রকোপ ও দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে বাস্তবায়নযোগ্য ১৩ দফা কর্মপরিকল্পনায় বিশেষজ্ঞরা বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
চার পৃষ্ঠার এ কর্মপরিকল্পনার শুরুতে বলা হয়েছে সন্দেহভাজন সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করা, বিচ্ছিন্ন বা আইসোলেশন করা, সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা এবং সঙ্গনিরোধসহ (কোয়ারেন্টিন) মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে স্বপ্রণোদিতভাবে জনগণের বা কমিউনিটির সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজন বড় বেশি।
অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, প্রতিটি মহামারিতে বেশি মৃত্যু ঘটেছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়। কাজেই বাংলাদেশে আগামী দিনগুলোর সম্ভাব্য ভয়াবহতা নিয়ে ভাবা দরকার এবং সে লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন যেসব কারণে পার্শ্ববর্তী ভারত বা ল্যাটিন আমেরিকার দেশে দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে সেসব কারণ বাংলাদেশে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি ততটা খারাপের দিকে যায়নি। তাই বলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপদও সেভাবে কাটানো যাবে তা ভাবার কোনো কারণ নেই। কাজেই এখন থেকেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়