কবিতা

দহনকাল

আহাম্মদ উল্লাহ

বিষন্ন সন্ধ্যা, আশীবিষে নীল লক্ষ্মীন্দরের মুখের মতোন;
খসখসে পাণ্ডুলিপি বিষে জড়, সাজানো বাসর তনু-মনে।
সেইসব দিনরাত্রি গত হলো বহুকাল আগে কৃষ্ণপক্ষে,
যখন স্বপ্ন শেষ হয় ঘনকালো কেশ রাত্রির ভিতর।

ঘুম আসে না, শরীর নেই শুধু ছায়া নিংড়ে আঁধারে মিশে
শস্যর সুঘ্রাণ খোয়াব ভগ্নহৃদয়ে নড়েচড়ে ওঠে ।
ভোরের শিউলি যখন ঝরে শিশির সোহাগে
কতদিন এসেছিলে তুমি উঠানের কোণে, গৃহ হৃদয়ে।

তারপর বহুকাল পরে, সমতলে কোনো একঘরে
সংসার বিছিয়েছ স্বামী, সন্তান-সন্ততি নিয়ে।

 

 

নৈঃশব্দ্যের রসায়ন

রবিন ইসলাম

নৈঃশব্দ্যের গর্ভে জন্ম নেয় উচ্চারণের মৃত সন্তান,
যেখানে শব্দ মানে শুধু প্রতিধ্বনির শবযাত্রা।
আমি সেই তীর্থযাত্রী, যে অন্ধকারে
আলোর হাড়গোড় খোঁজে,
সময়ের শিরায় স্পন্দিত হয়
আমার অদৃশ্য নাবিকগাথা।

অস্তিত্বের প্রতিটি দগ্ধ অণুতে
শোনা যায় এক নৈরাশ্যের সঙ্গীত,
যেখানে স্বপ্ন কেবল ধ্বংসের স্থপতির নকশা।
আমি ইতিহাসের ফাঁকা প্রান্তরে বসে গুনি
অমোঘ নিয়তির অব্যক্ত জপমালা।

হে শূন্য, তোমার বুকেই তো আমার চিহ্ন খোদিত-
তুমি নিঃশেষের উৎস, আমি তার কণামাত্র স্বর।
যে ভাষায় জীবন অনুবাদিত হয় মৃত্যুর নীরবতায়,
সেই ভাষায় লিখেছি আমি-
অমৃতের ভস্মে ডুবে থাকা এক কবির স্বাক্ষর।

 

জীবনের ক্ষুধাটাও এখন

মোহাম্মদ ইসমাইল

চোখের জল এখন নাই বললেই চলে।
ক্ষুধামন্দা কোনো অনাহারী জীবন
যখন কোনো মানবতার প্রতীকী ভাষায়
আমাদেরকে তার খেতে না পারার কথা বলে!
বুকের ভেতরে এখন কবি মাহমুদ দারবিশের মতো,
যেন আমাদেরও প্রতিনিয়ত;
অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে!
কারণ মানুষের বিবেকের সাথে-
জীবনের ক্ষুধাটাও এখন একপ্রকার যুদ্ধ উন্মত্ত;

 

 

রেলস্টেশনের রাতগুলো

ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়

ট্রেন ছেড়ে যায় গন্তব্য— তবুও স্টেশনের হাহাকার ফুরায় না। আমাদের খোশগল্পে জেগে থাকে মধ্য রাতের জোৎস্না। দূর থেকে টুকটাক গালির শব্দ, দলবল নিয়ে হেঁটে যায় বখাটে ছেলেরা। কতো শূন্য হৃদয়ের পূর্ণ বিষফোঁড়া নিয়ে বসে থাকি আমরা- এসবই বুঝি নক্ষত্রের নীরব গান! তবু কিছু গল্পে পুনরায় ফিরে আসে মানুষ অথবা আন্তঃনগর। রাতের বেদনা থাকবেই; জেগে থাকার প্রশান্তি তার চেয়ে ঢের বেশি। আমরা সবাই একদিন ট্রেন হবো। যারা আমাদের পক্ষে; তাদের বিপক্ষে ছেড়ে যাবো জনসমাগম জংশন। এইসব রাত্রি জেগে থাকার এতো তৃষ্ণা আমাদের- পরিচিত প্রিয় মুখ তাদেরও আছে একা হওয়ার গল্প। দীর্ঘ রাতের হাত থেকে বেঁচে থাকার ভয়াবহতা কতটুকু বোঝো তুমি!

 

 

কল্পনা

যাইদ আল মারুফ

কল্পনায় ঘর বেঁধেছি, ছোট্ট কুঠিরে প্রদীপের
মিটিমিটি আলো জ্বলে আর, উঠোনে রাঙাপাটি।
সহস্র বার যে ভেবেছি, কন্যাকে নিয়ে জোছনার
আলোকে বসে দুজন কত, করেছি খুনসুটি।

যখন প্রকৃতি অনুভবে, আমি বিভোর রোমাঞ্চিত
চাঁদের মত নীরব হয়ে, বাহার ছড়িয়েছি।
ছুঁয়েছ আমায় অভিনবে, পৃষ্ঠ গ্রীবা আবৃত চুলে
বেণী পাকিয়ে দিয়ে প্রণয়, চাদর জড়িয়েছি।

 

 

সারমেয় প্রেম

প্রণব মজুমদার

দ্বিপদীকে কুকুর বলো না!
বরং কুকুরকে বলো মানুষ
ওদের মানবতা আছে,
আছে গভীর মমতাও;
ঢের কৃতজ্ঞতাবোধ ওদের।
সারমেয়ের নিঃস্বার্থ প্রেম দেখে
মানবিক হতে শেখো।

একটু না হয় খাবারের আশায়ই থাকে
সারাদিন পথে এধারে ওধারে থাকে
তেমন কি আর চাওয়া?
অথচ দেখো, সামান্য উচ্ছিষ্ট খাবারেও
ওরা কেমন আপন হয়ে যায় নিমেষে!
বিশ্বস্ত হয়ে যায়; বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মানুষরূপী দ্বিপদীরা তা করে না!

আঘাত সইতে সইতে জেনেছি দ্বিপদীর
চাইতে আমাদের কুকুর পোষাই ভালো।
আর যাই হোক সে আমাদের ক্ষতি করবে না
তোমায় ভালবাসবে, কাছে আসবে!
সারমেয়কে ‘কুকুর’ বলে অপমান করো না।

 

জ্যামিতিক টুলবক্স

দ্বীপ সরকার

সব পথ যাওয়া শেষ হলে,
ভুলে যাওয়া ভালো
শেষপ্রান্তে কিছু স্মৃতি রেখে

শেষ মানে অবিকল নিঃশেষ নয়
ফুরিয়ে যাবার মতো ছোটো ছোটো
ভাতের ভুটি
তবুও তো থেকে যায় তলানিগৃহে জবুথবু তরল

যতবার হেঁটেছি দু, কুলে
বিভ্রমে পায়ে দলেছি দুপুর-
দুপুরেও ভুটি ওঠে, সন্ধ্যাতেও
সাতরাই রজনী, গহীনে গহীনে

সব যাওয়া শেষ হলে
ভেবো না, মাকড়সার সব খোপ পেরিয়েছি
খোপে খোপে হেঁটে যায়
ক্ষুদ্রাকৃতির সময়

সীমা’র কোন সীমারেখা টানা নেই-
জ্যামিতিক সম্পাদ্যের ভেতর
কত যে, রেখা, উপরেখা, বিন্দু
গোপনে প্রকাশ্যে এঁকেছি পা,
পায়ের মতো সময়
টুলবক্সের অক্ষরে
কালো কালো বর্ণের মতো দীর্ঘ যাপন