চোখ বন্ধ রাখি
আকতার হোসাইন
চোখ বন্ধ রাখি আজকাল
চোখ খুললেই আজানুলম্বিত কালো আচ্ছাদনে ঢাকা
গুচ্ছ অন্ধকার ফুঁড়ে তেড়ে আসে প্রেতিনী
দাঁতে রক্ত, চোখে ত্রাস জাগানো ক্রুর হাসি
হাতের মুঠোয় চুলধরা খণ্ডিত শির
মনে হয়, ধারালো নখরে চোখ খুবলে নেবে এক্ষুনি।
ধূধূ মরুভুমে শক্তিহারা নিঃসঙ্গ উটের গায়ে হামলে পড়েছে
একঝাঁক শকুন, তাদের পাখার ঝাপটে মরুভূমিতে ধূলিঝড় ওঠে,
বহুদূরে উটের কাফেলা নিয়ে মরুযাত্রীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
অন্ধরা ভালো আছে। ভালো আছে বোবা ও বধির।
আর যারা হারিয়েছে স্নায়ুরস, স্মৃতি ও আবেগ
হারিয়েছে আকাঙ্ক্ষা ও চৈতন্যের ঘ্রাণ
তারা প্রেতিনী, শকুনি, চামড়া আর পচা মাংসের গন্ধ বোঝে না
তারা বোঝে না দিন ও রাত্রি, হাহাকার ও অভিশাপের কম্পন,
ঘুম ও জাগরণের বৈকল্য।
চোখ খুললেই অন্ধকার, বীভৎস, তাণ্ডবপ্রিয়।
আমি তাই আজকাল চোখ বন্ধ রাখি।
দৃষ্টি বিভ্রম
প্রণব মজুমদার
মানুষ অবিরাম অমানবিক হলে হয় অন্ধ
চিকিৎসকের দেয়া লেন্স অকেজো থাকে
চশমা সেঁটেও সে খুঁজে পায় না দৃষ্টি
লালসা আলিঙ্গন করতে করতে-
সে দৃষ্টিহীন হয়ে যায়;
অচল হয়ে যায় হাত পা।
অমানবিক দ্বিপদীর স্বরূপ
অন্যায়-অবিচারে থাকে সে নিশ্চুপ!
মোহের স্বচ্ছ জোয়ারে মূক-বধির
সত্য ভুলে মিথ্যার বেসাতিতে বীর!
অন্ধের মতো রং মেখে সঙ সেজে
‘মানুষগণ’ বোবা হয়ে পড়ে সমাজ মঞ্চে
চাক্ষুষ দৃশ্য সম্পাদনা করে সংলাপ সাজায়।
তুমিও বলো আমাদের নাকি হয়েছে দৃষ্টি বিভ্রম?
শীতের মতো নির্মম তুমি
শাহীন মাহমুদ
শীতের মতো নির্মম তুমি শিরদাঁড়া বেয়ে নামো
হেমলকে ডাকো সর্বনাশ দাঁড়াও এবার ! থামো।
আমৃত্যু ছলের কুশীলব হেমলক বীজ বেচো
নীরবে করো দ্রাক্ষার চাষ অযাচিত প্রেম যাচো।
তোমাকে বোঝেনি হার্টক্রেন মিসিসিপি নদীর মতো
তুমি আসো হেমন্তের সৌরভে
কবির দীনতায় নাচো।
অর্কেস্ট্রা
আরফান হাবিব
গোধূলির বিদায় অনুষ্ঠানে
তুমি গান গাইবে
রাখালের অর্কেস্ট্রায়
তাই যুক্ত হয়েছে
কিছু গায়ক চড়ুই
অস্তিত্বের শিকড়ে
তালের প্রমাদ
কুয়াশায় জড়িয়ে আছে
স্বপ্নবিদ্ধ ফাঁদ।
আগুনের বাজার
শহিদ রাসেল
অনেক রাস্তা পার হয়ে
আজও পথের দেখা পাইনি
অনেক গল্পের শেষে যে চরিত্র
এখনো তার অখণ্ড অবসর
গ্রামের সবুজ মাঠে ছেলেবেলা
তবুও নিজস্ব কোনো আকাশ নেই
মায়ের হাতে যে মুখে ভাতের ছোঁয়া
তাতে এখনো মায়ার বড্ড অভাব
ভাবতে গেলে থমকে যায় সময়ের কাটা
ঘোরে তো ঘোরে না, আবদ্ধ ঘরে
পৃথিবী এক অদৃশ্য কারাগার
এমন চলতে চলতে থাকে না মাথা।।