কবিতা

লাল সালোয়ার

সুবর্ণা দাশ মুনমুন

কারা পুঁতে রেখেছিল
সভ্যতার নীলকুঠি আজও তা অনাবিষ্কৃত
বধির পৌরুষের গর্জনে
সে কুঠি কেঁপে উঠেছে বারবার,
অভিশপ্ত পৌরানিক কন্যার জরায়ুতে
পুঁতে রাখা বীজ
আজও পরাগায়িত হয় অচিন গাঁয়ের
কোনো এক পারুলের শরীরে।

পেলব কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়াবী উত্থানের আগেই
যে মেয়ে পেয়েছে বিবস্ত্র আদিম দুঃখ।

সে বেদনার কিছুটা ভাগ নেয় মৌন কৃষ্ণচূড়ারা
অতঃপর একটি লাল সালোয়ার
বর্ণহীন পানিতে লিখতে শুরু করে রক্তের রূপকথা।।

 

 

ঈশ্বরেষু

আরফান হাবিব

সিরিয়া-রাখাইনের ক্ষুধার্ত শিশুরা
যে চিঠি লিখেছিলো তোমাকে
মার্কিন গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে
সেটা পৌছাঁতে পারেনি
হয়তো তাই তুমি জানতে পারনি
তারা তাদের দীর্ঘশ্বাস নিজেরাই
খেয়ে ফেলেছে
গাজাজুড়ে নৃশংস শিশুহত্যার
পুনরাবৃত্তির সংবাদ কি
সেন্সর করে উপস্থাপন করা হয়?
কিছু প্রশ্ন নির্জন জলহীন মেঘ
হয়ে ঠিকানাবিহীন উড়ে বেড়ায় ।

 

 

শ্রাবণ আখ্যান

সবুজ মণ্ডল

ভূমিষ্ঠ হওয়া কদমের আখরে
মেঘকন্যা প্রেমপত্র পাঠায়,
চলন্তিকার বাউণ্ডুলে রাজকুমারের কাছে।
অপেক্ষার গুপ্ত প্রহর কবিতা হয়ে ফুটে ওঠে
নকশিকাঁথার খোলা পাঁজরে!
শ্রাবণের কাজল কালো খোলা চুলে
মাদকতায় বুঁদ হয় আগুনে পোড়া মানচিত্র..
তপ্ত দীর্ঘশ্বাসে শীতলতা নামে-
ঘামে ভেজা দুরন্ত জীবন
ক্লান্তি মোছে, সবুজ পাতার আড়ালে।

 

অনেকদিন পর

মাজহারুল ইসলাম

অনেকদিন পর
খাতা-কলম হাতে নিয়ে লিখব লিখব করে
লিখে ফেলি চার লাইনের ছোট্ট একটা কবিতা
যুৎসই শব্দের ঘাটতিতে
কাটা পড়ে দ্বিতীয় লাইনের শেষ শব্দটা
তৃতীয় লাইনের পঞ্চম খটমট শব্দটা বাদ দেবো দেবো
করে চতুর্থ পঙক্তি পুরোই কেটে দিই।

তারপর যথেষ্ট হয়নি ভেবে
আনমনে একটা বিড়ালের ছবি আঁকি,
হুলো বিড়াল গোঁফগুলো একটু বড়, তা বেশ মানানসই
সামনে ছোট বাটি অর্ধেকটা খালি বাকি অর্ধেক দুধ;
সারা ঘরবাড়ি ঈঁদুরে ছয়লাব
পোষা বিড়াল বটে! শিকার ধরে না, কালেভদ্রেও না।
আদর পেলে লেজ নাড়ে মর্জিমতো
দুধের বাটি মুহূর্তে চেটেপুটে সাবাড় করে একেবারেই।

অনেকদিন পর
খাতা-কলম হাতে নিয়ে লিখবো লিখবো করে
হঠাৎ করে এঁকে ফেলি ইঁদুরের ধারালো দাঁত,
ছড়ানো ছিটানো গুচ্ছ গুচ্ছ বিষ্টা আর আধখাওয়া একটা মানচিত্র
কাগজের শেষ ডানপাশে দুই আঙুল ফাঁকা জায়গায়
হিজিবিজ বড় অক্ষরে লিখে ফেলি নিজের নাম ঠিকানা
তারপর খাতা-কলম তালাবদ্ধ করি আলমারিতে
যদি আবার অনেকদিন পর ইচ্ছে হয়!

 

বর্ষার কথোপকথন

সুমন আহমেদ

নীল শাড়ি অঙ্গে জড়িয়েছে
বর্ষার সোনালি বিকেলের যুবতী
আকাশ; কোমল হাতে পরেছে-
সাত রঙের-রঙধনুর চুরি,
খোঁপায় গেঁথেছে কদম পুষ্প-
মৃদু সমীরণে ভাসে শাড়ির আঁচল।
নতুনত্বের সাজে প্রকৃতি সেজেছে
রমনীয় সাজ- যেন শিল্পীর
কারুকাজ; বুকে জড়াবার ইশারাতে
কাছে ডাকে গোধূলী লগ্ন…
কাক ভেজা সন্ধ্যার আকাশে
স্বপ্ন ছোঁয়া বৃষ্টির আয়োজন।
জোৎস্না ছড়িয়ে মিটিমিটি হাসে
দীর্ঘ প্রতীক্ষার চন্দ্রিমা,
অথই জোয়ারে ভাসে বৈতরণীর
শান্ত যৌবনা দু’কূল।
আহা! গো, কী মহুয়ার চেয়েও মহু-
শত জনমের আকাঙ্ক্ষায়-
কাঙ্খিত, দুইয়ে মিলে এক হবার-
কামনা বাসনার স্বাদ।