কবিতা

পাতকীর দুঃখ

শাহীন মাহমুদ

ঈশ্বরের কাছে নালিশ জানাতে
শত শত মানুষ হাঁটছে
লক্ষ লক্ষ মানুষ হাঁটছে
কোটি কোটি মানুষ হাঁটছে
এক নিশ্বাসে পাড়ি দিচ্ছে পথ
প্রান্তর লোকালয় খাল বিল
কোথায় মসনদ কোথায় ঈশ্বর!
কেনইবা খুঁজছে?
সাত আসমান ছাপিয়ে
যে ম্যাসেজ জোছনার ফুরফুরে বাতাসে
অমোঘ বিধানের হাট বসেছিল বাজারে
মুলা চোরের ফাঁসির আদেশ বসেছিল
সেখানে- কেটে গেল অনেক দিন..
কোন এক দীর্ঘরাতে অন্ন বস্র নিয়ে
চুপচাপ বসেছিল আমার ঈশ্বর
বাস্তুচ্যুত কিছু নারী চিৎকার করে কাঁদছিল-
কোথায় পাবো আশ্রয়
কোথায় পাবো পিতা
কোথায় পাবো ঠাঁই
কে বলবে আর-
ওরে আয় তোরা বুকে আয়
এটাই তোদের ঠিকানা।

 

 

আমার প্রিয় জলপাই পাতা

মিসির হাছনাইন

আমার প্রিয় জলপাই পাতা বৃষ্টি ভেজা চিঠি
ভেসে ভেসে নীপবন ছাড়িয়ে গঞ্জের দোকানে
যতগুলো সাদা, হলুদ ফুল, লাল খামের মেঘে
তারচেয়েও অধিক কাঙ্খিত বৃষ্টি হৃদ আকাশে
শুধু তোমাকে দেখার অপেক্ষার নদে সাঁতরায়।
ভিজে গেছে: হাঁস পাখি, বর্ষা বিকেলে মনের চোখ,
দেখো টিয়া, চশমা খোঁজা, হারিয়ে যাওয়া পায়ের ছাপ
বুক উঠানে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে প্রিয় পাতা ভেসে গেলে
যতটুকু অন্ধকারে তোমারে দেখা যায় না,
যেমন, কতদূরে দেখা যায় না, হাতের না বুকের তিল?
কান্না ভেজা পাতা হাসে নিয়ম করে, সূর্যদেবতা সব জানে
মাতাল সমুদ্রে অদেখা মানবী কত গভীরতায় শাড়িপরে?
রাতের ভেতর কয়েকটা জাহাজ ঝড়ের মুখে
কুচি কুচি কোমরের ভাঁজে ঢেউে খেলে,
ঠিক করা ঘোমটায় পরিপাটি,
জানে, চন্দ্রদেবী কোমল নকশী বোঁনা ঝরা
জলপাই পাতা রঙিন শীতলপাটি
আমার প্রিয় জলপাই পাতা বৃষ্টি ভেজা চিঠি

 

পাব না জেনেও

অমল বড়ুয়া

তোমাকে পাব না জেনেও
ছুঁয়ে থাকি আলতোগোছে
মুঠোয় পুরে বুকের সানকিতে
সাজিয়ে রাখি তিলোত্তমা করে মনের
ময়ূর সিংহাসনে।

অসংকোচ দ্বিধাহীন তুমি অনুভবে,
হৃদয়ের মখমলে ভাঁজে ভাঁজে বিছানো তোমার মুরতি,
সন্ধ্যাতারার মতো মনের কোণে তোমার লুকোচুরি
অধরা তুমি তবুও ছুঁয়ে যাই তোমায় দিনমান;

জানি, পাবো না তোমায়
তবু তোমার ভাবনার অসুখ আমার।

 

 

বৃষ্টি আর তুমি

আজহার মাহমুদ

শরীরে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর, বাইরে বইছে বৃষ্টি
রাতভর সজাগ তুমি, রেখেছো আমার উপর দৃষ্টি
তোমার উরুতে মাথা রেখে শুয়ে আছি শান্ত মনে
এমন সুখ পৃথিবীতে- বলো, পায় আর ক‘জনে?

 

বহুদিন বহুদূরে

আহাম্মদ উল্লাহ

বহুদিন আমাদের মনে মিল নেই
গান নেই, সুর সেই, স্বর নেই কাছে ডাকার।
শুয়ে আছি অন্ধকারে, রাতের শেষ ভাগে;
কালো পানকৌড়ির মতন
জলে ডুবে আছে আমাদের কায়া।
বহুদিন বাঁধ ভাঙা হাসি নেই, উল্লাস নেই;
কাছে-দূরের কত মানুষের সাথে মিশি আমরা প্রাণখুলে।
দেখা হয়, কথা হয়; পরস্পরের দিকে মুখ ফেরাই বহুবার
তৃষ্ণা নেই কারো চোখে।
বহুদূর চলে গেলে মনে হয় না আরেকটু বসি।
বহুদিন আমরা বলি না ‘কেমন আছো?’

 

দুই জীবন

রেবেকা ইসলাম

সরু সুতোয় ঝুলে থাকা অজস্র জীবন
এই শহরের অলিতে গলিতে,
জ্বলন্ত রোদ সাঁতরে বেঁচে থাকার
এক অবিরাম আয়োজন,
আকুতির এক ঘূর্ণিঝড় তীব্রতা,
এই তীব্রতায় কেউ এলিয়ে পড়ে
মোমের মতো গলে য়ায়,
গুমোট ঘরে বসে অন্ধকার বোনে
হতাশার ধারহীন মলিন সুতোয়।
কেউ আলোর স্ফুরণ খুঁজে নিয়ে
দুহাতের তেলোতে সজোরে চেপে রাখে,
অতঃপর মসৃণ বিকেলের হাত ধরে
নিঃশব্দে বা সশব্দে বেড়িয়ে পড়ে
সামান্য সুখের ছোঁয়া নিতে
স্বস্তির কেয়ারি সাজাতে
আনন্দের অংশীদার হতে
প্রতিনিয়ত এই দুর্ভাগা শহরে।

 

 

সুবোধ পালিয়ে গেল

প্রণব মজুমদার

অন্তরশূন্য মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে
অপক্ষে সময়, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে গেলি’?
নিরানন্দ ও মমতাহীন ঘরে কাঁদে আত্মজা;
ঘরে বাইরে শুধু হিংসা বিবাদ লোভ ক্রোধ।
বিত্তের পিছু ধাবমান, অবিরাম সুখ সন্ধান;
বিত্তলোভে চিত্ত নৃত্য দেখে অসহায় মানুষ।
লালসবুজ আকাশে ভিনদেশীর উড়ন্ত ঘুড়ি!
সভ্যতার নেই ভব্যতা, গুরু-শিষ্যের লড়াই।

শিক্ষার চেয়ারে বসে পড়ে শাসক নাবালক;
অপমানে শিশুর কাছে শ্রদ্ধা হারান চালক।
প্রতীক্ষায় থেকে থেকে দ্বিপদীরা কী পেল?
ফিরবে না সুবোধ, সত্যি কী পালিয়ে গেল?