আয়নার বিপরীত দিক
মুন্সী আবু বকর
মানুষ এখন শব্দে নয়, চিৎকারে কথা বলে,
সত্য নয়, সুবিধাই এখন রাজা।
ভদ্রতা যেন সাদা পোশাক
যা দেখে সবাই হাসে, আর কেউ পরে না।
ক্ষমতা কণ্ঠে নয়, ভয়-জাগানো চোখে
আর প্রভাব?
সে তো গালিগালাজের নতুন ব্যাকরণে জন্ম নেয়।
নৈতিকতা এখন পুরোনো ক্যালেন্ডার,
যা কেউ ছিঁড়ে ফেলে না,
কিন্তু দেখে না
কারণ তার তারিখ ফুরিয়ে গেছে।
আমরা আয়নাতে দেখি মুখ,
নিজেকে দেখি না।
প্রশ্ন করলেই তুমি বেঈমান,
চুপ থাকলেই তুমি ভালো মানুষ
কী বিভ্রান্তিকর প্রশান্তি!
তবু এখনো সময় আছে
একবার আয়নার ওপারে তাকাও,
যদি এখনো একফোঁটা আলো বেঁচে থাকে চোখে।
ইশারাগুলো
দ্বীপ সরকার
তোমার ইশারাগুলো মর্মতলে গুছিয়ে রেখেছি
আর যেনো ভুলে না যাই
তোমার ইশারারুমাল অতি রঙিন
স্বপ্নখচিত বাম্পার ফলনের মতো
তোমার চোখ জানে, ইশারা দীর্ঘ হলে
পুরুষরা পাখি হয়ে যায়
পাখির মতো ঝুলে থাকে ইশারার পালকে
তুমি নারী, তুমি প্রেমিকা
তুমি বস্তুবাদী হীরের টুকরো
তোমার চোখে ঈশ্বর ঘুমিয়ে আছেন
ভেবোনা, পুরুষকে ইশারায় আটকানো যায়
ইশারার কোলে ঈশ্বর প্রজাপতি উড়োচ্ছেন
সেই প্রজাপতির ভাঙা পালক আমি
তুমি আমাকে চিকন সুতোর ঘুড়ির মতো টানো
যখন টানো, ভাবি ছিঁড়ে যাচ্ছি
কিন্তু, একটুকুও ছিঁড়ছি না
মেঘ ও বৃষ্টির গল্প
ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়
বৃষ্টি এলেই মনে পড়ে তোমার তন্দ্রাহীন শহর!
বিপনি বিতানের সরু গলি, কাকভেজা মেইন রোড, ভাড়া বাসা, গার্লস স্কুল, আবুল হোসেন হসপিটাল।
আমরা যদি একে অপরকে বিয়ে না করি!
অথবা অজানা কোনো দূরত্বে ; যদি কাটে বিচ্ছিন্ন জীবন তবুও বৃষ্টিতে প্রস্ফুটিত হবে তোমার শহর!
জন্মের প্রয়োজন ছিলো মস্ত বড় ভুল ; কবি হওয়াটা আরো বড় অপরাধ! বর্ষা যাপনের রাতে আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে শোক
নীল খামে।
কোন বৃষ্টির জলে মুছবে আমায়?
জীবন তো চিরকাল বৃষ্টির বিপরীত!
অস্তিত্বের জাল
মো. মাহমুদুল করিম
জল কেবল জল নয়,
সে এক সচল শূন্যতা
যেখানে জন্ম ও মৃত্যু
একই ঢেউয়ের ভেতর খেলে যায়।
আমার জাল,
তা কেবল মাছ ধরার নয়
তা ছুঁড়ে দিই সময়ের দিকে,
ধরি কিছু কণিকা, কিছু প্রতিধ্বনি,
ধরি নিজেকেই
বারবার, অন্য রূপে।
কবিতার অপমৃত্যু ও লাশবাহী বর্ণমালা
সবুজ মণ্ডল
মগজের খুপড়িতে থাকা এক একটি ভালোলাগার অপমৃত্যু
হয়ে চলছে,
পরাবাস্তবতার মৃত্যুকূপে।
হৃৎপিণ্ডের দেয়াল চিরে খাওয়া অতৃপ্ত আত্মারা
ঘনীভূত হয়ে নামে চোখের কানাগলিতে প্রতিক্ষণে, প্রতিটা মুহূর্তে…।
যতনে রাখা রঙিন অনুভূতিমালা
স্নান সারে লোনা জলে,
হয়ে ওঠে কবিতার বর্ণহীন বর্ণমালা, পাঁজরের এক একটি পৃষ্ঠায়।
এই বুঝি জীবন
আলী আকবর বাবুল
একা, সমুদ্রের পাড়ে
বহু ঢেউয়ের তালে তালে কী যেন ভাবছি?
আচ্ছা, এই পৃথিবীতে তোমার – আমার কেন আসা?
ওপরে আকাশ, নিচে মাটি
মধ্যখানে জীবন
এখানেই এতো
নীল নোনা জলের তরঙ্গের খেলা
কেনইবা ক্ষণিক এ যাত্রা!
মাঝে মাঝে মনে হয় বাতাস ভারী,
সুখ কোথাও নাই
সমুদ্রের বিশাল গর্জনের মাঝে এমন তাল
কেন এই জোয়ারভাটা
এই বুঝি জীবন
তার মতন উথাল পাথাল।
আবেগি মনটা হঠাৎ অগ্নিমূর্তি ধারণ হয়ে ভাবে
এই সৃষ্টির মহাসমারোহে খেলে যায় সময়।