কবিতা

যুদ্ধকাল

আসহাবে কাহাফ

বিকট শব্দে উড়ে এসে চলে যায় ভিনদেশী বিমান
আকাশে তাকাতে গিয়ে খসে পড়ে চোখ
দেহ থেকে ছিটকে গিয়ে পা, পরে আছে অদূরে
আতরের খোশবু গিলে ঝাঁজালো বারুদ
এভাবেই মানুষ হয়ে যায়, মাটি; খুনে ভিজে!
জোছনা আগেও দেখেছি বহুদূরে ঝরছে অবিরাম
আমাদের গাঁয়ে, গায়ে, এ প্রথম সে নেমে এসেছে;
বারুদের জোছনা! ঝলসে যেতে যেতে
কেউ কেউ খুঁজে ফিরে প্রিয় মুখগুলো, ইট-পাথরের ফাঁকে
অথচ কেউ নেই, দেশে-বিদেশে, কোথাও কেউ নেই
মানুষের কথা বলবে, মানুষ হয়ে
সবাই এখানে লাশ ; মৃত ও জীবিত!

 

ঝড়

দ্বীপ সরকার

নাম না জানা, ডাকসাইটে হিলের পাদদেশে যে ঝড়, ক্রমাগত নুড়িপাথর হাতে আবাবিলের মতো ভূমিকা নিচ্ছে। তাতে ভয় পেও না। সব ঝড়ে ভয় পেতে নেই। পৃথিবীতে কিছু ঝড়—ঝড় নয়। তোমার খোঁপায় একটিবার আমার র্স্পশ সিঁধে রাখো—দেখবে সমস্ত তাণ্ডব পাশ কেটে চলে যাচ্ছে ওইসব পাহাড়ের দেশে।
খুব সাহস করে ধরে থেকো ঠোঁট—আমাদের পূর্বপ্রজন্মের ঝড়দের একটা ইতিহাস আছে। সেই সব ঝড়দের হাতে থাকে বোমা, চোখে লুণ্ঠনের কিরিচ। ভুল করে যদি ওরাই এসে পড়ে ফের। তুমি তো গলে গলে যাবে। ওদের খড়কুটোর কী যে জোর! অথচ, সহজ সরল বলে যাদের চিনেছিলাম, তারাই করে যাচ্ছে ডানার বিস্তার। আর আমরা ক্রমাগত ফুটছি গন্ধহীন গোলাপের অপবাদ নিয়ে। হে প্রেমিকা আমার! এভাবে বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির খিড়কিতে আমাকে রেখে দিতে পারো—তোমার রুচিশীল পোশাকে, যেখানে পুঁতির মতো জ্বল জ্বল করে উঠছে মিসাইল।

 

চাবিহীন স্বপ্ন ও ছিন্ন চুম্বনের গান

মো. রবিন ইসলাম

নষ্ট চাঁদের চোখে রক্তিম পাপড়ি গজায়,
পাথরের বুকে ঘুমিয়ে আছে শিশুর শ্বাস।
চাবির অভাবে খুলছে না স্বপ্নের দরজা
স্মৃতির রাজ্যে বিষাক্ত মেঘ নামে প্রতিদিন।

বিষণ্ন ট্রেন ধরে পালায় নিরুপায় মা,
খয়েরি পাতা বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকে ভুল নামের গ্রাম।
ছিন্ন গিটার বাজায় এক পঙ্গু যাযাবর
অর্থহীন ছায়ায় গায় নিঃস্ব ভালোবাসার গান।

ধর্মের জুতো খুলে দাঁড়ায় ঈশ্বরের প্রতিবেশী,
উঠোনে পাওয়া যায় পুড়ে যাওয়া বর্ণমালার হাড়।
ফুটপাতে লেখা প্রেমপত্র খায় বৃষ্টির জ্বর,
শেষ চুম্বনে ডুবে যায় শহরের কোলাহল।

 

 

একটু সময় হবে?

অমল বড়ুয়া

সফেদ মোম জোছনার ধুপছায়ায়
সূর্যদীঘল পথ ধরে
অসন্ধিত মনের গালিচায়
তুমি আর আমি হেঁটে যেতে যেতে
বহুদূর অনন্তে
জানান দেবো হৃদয়ের ব্যাকুলতা
নিস্তব্ধ নিরবতায়;

কতো না বলা কথা শব্দদীঘির জলে টলমল
কতো ভাবনা অনুরাগে বিহ্বল –
জানান দেবো অনুভবে অণুক্ষণ আছো তুমি
নিঃশ্বাসে কিংবা শিরায় ধমনীতে।

জীবনের সমস্ত রঙ ফুরাবার আগে
একটু কি সময় হবে-
মনের সাথে মন মেলাবার ?

 

 

নীরব জীবনের রোজনামচা

তোফায়েল আরিফ

সবকিছু থেমে গেছে যেন, অথচ সময় চলে যায় নিজের নিয়মে।
ভিতরে জমে থাকে এক ধরনের নিঃশব্দ শক্তি যা শুধু টিকে থাকার সাহস জোগায়।
রাগ এলে এখন আর অভিমান করি না।
কেবল ভাবি, আলো একদিন নিজে থেকেই ছায়া সরিয়ে দেবে।
কোনো গৌরবময় ইতিহাস নেই আমাদের. আছে কিছু না বলা কথা, কিছু অর্ধেক বাক্য আর শব্দের ভেতর ডুবে থাকা একাকিত্ব।
আমি এখন চুপচাপ থাকি কারও সঙ্গে তর্ক হয় না, সংঘাতও নয়।
প্রেম যেন নিজের ভাষা হারিয়েছে, আর গানগুলোও ঘুমিয়ে পড়েছে গভীর নিস্তব্ধতায়।
তবু একরকম বিশ্বাস বাঁচিয়ে রাখে সফলতা বা ব্যর্থতা নয়, টিকে থাকার মধ্যেই লুকিয়ে আছে জীবনের আসল মানে।