শব্দগুলো দেহের হাড়
মিসির হাছনাইন
সারাদিনে এক লাইনও লিখতে পারিনি
লিখতে গেলে মনে হয় একটা রেখা
ঘুরে ফিরে আমি-তুমি, তুমি-আমি
যে কবিতায় শব্দগুলো দেহের হাড়
তোমার খালি তাকিয়ে থাকা চোখ
আহা! সে কী প্রাচীন যাদুমন্ত্র বাণমারা হৃদয়
একটা রেখা ঘুরে ফিরে তুমি-আমি আমি-তুমি
গুহাচিত্রের কোন দেয়ালে আঁকা হৃদপিণ্ড
হরিণীর অপার মায়া চাঁদে ফোটা নীল ফুল
আর, পায়ের ছাপ, হাতে হাত রাখার স্পর্শ
কবিতায় উড়ে যাওয়া মন খারাপের দীর্ঘশ্বাস
চারতলা দেয়ালের পাশে পরগাছা নিঃশ্বাস
মেঘে এক গুহাচিত্র কলিজায় আঁকা রোদ্দুর
প্রাচীন কোন চিত্রশিল্পী যাদের নাম গুহাচিত্রে
একটা রেখা ঘুরে ফিরে তুমি-আমি আমি-তুমি
এক চোখে করুণ ভয় শব্দগুলো দেহের হাড়
আদর চিঠি
দীপান্বিতা পালিত
না হয় কিছু খুচরো অসংগতি
তোমার নামে বুকের খাতায় থামে
আদর চিঠি পাঠাচ্ছি ফের তোমায়
বৃষ্টি রং-এর লেখা নীল খামে।
ওই দু চোখের হাতছানি দেয় আমায়
যত্ন করে রাখছি গোপন তাকে
বৃষ্টি তুমি এসেই গেলে যখন
বলে দিও আমার খবর তাঁকে।
বলেই দিও, ভাবছি শুধু তাঁকেই
কাঙালপনা লাজুক আদর মাখা
কোথায় সে আর রাখল মনে আমায়!
তবুও গানে তাঁর নামটি আঁকা।
স্বপ্নে
অমৃতা নন্দিনী
কানের কাছে চাপা কন্ঠস্বর
-টুই! আগুন! আয়, কোলে আয় জলদি
এই দেখ গুনছি…ওয়ান টু থ্রি…
সেই কবেকার কাঠের আলমারির মাথায় বসে,
এক পলক পেছনের সাদাটে দেওয়াল পরখ করে নিই।
তারপর ঝপাং এক লাফে বাবার কোলে,
দৃঢ় কাঁধ, চেনা গন্ধ
ছোট্ট হাতের চেটোয়
গোটা বিশ্ব।
খেলার দিন টপকে চেনা স্বর অস্ফুট হয়,
কানের কাছে অঝোরে বাজতে থাকে,
বহুদূর থেকে ভেসে আসা
রাশ রাশ বিবাদী স্বরধ্বনি
-বাবা। তুমি কি ওখানে? এই তো আমি
হাতটা ধর, বাড়ি ফিরবে চল, জলদি।
দূর থেকে আরও দূরে সরে যাওয়া ধ্বনিগুচ্ছ ছোঁব বলে,
প্রাণপণ ছুটতে থাকি,
ছুটতে ছুটতে ঘামে বালিশ ভিজে যায়,
মাথা তুলে পেছনের সাদাটে দেওয়ালের দিকে তাকাতেইৃ
দেখি কেঠো ফ্রেমের ভেতর বাবা হাসছে… মিটিমিটি।
সম্প্রদান
আহসানুল হক
কী দেবো তোমাকে বলো ?
এই বিপন্ন সময়ে
ভালোবেসে হেসে বকুল কি দেয়া যায় বলো
প্রার্থিত প্রতিমা প্রিয়তমা নারীকে কোনো ?
ফুসফুস -বুকে, নিলয়ে
এখন পারিজাত হাসে শুধু না পাওয়ার অনু !
কী দেবো তোমাকে বলো ?
এক চিতা দাহন, দুই চোখ শ্রাবণ
এক ঠোঁট কাঁপন, দুই বুক প্লাবন
ছাড়া- নিজস্ব অর্জন আমার
কিছু নেই, কিছু নেই আর
গোপনে খুব তোমাকে দেবার !
শূন্যতার বিরাজ
বজলুর রশীদ
শূন্যতা বিরাজ করছে,
করছে গুছিয়ে রাখার সহ্য ক্ষমতাও,
ধৈর্য ধরার সময় পাহাড়ের মতো সমান।
রাগ হলে এখন আর অভিমান করি না,
ভাবি আলোর বিন্যাসে আঁধার কেটে যাবে
হয়তোবা-
উদাসীন পথে শেষকথা বলে-
কিছু নেই আমাদের ইতিহাস, তাই
বাকরুদ্ধ হয়ে পড়া শব্দ বুনি নিঃশব্দে!
এখন থাকি চুপচাপ, কোথাও কথা বলি না
কোথাও সংঘাত হয়! প্রেম নেই খলনায়ক,
কথায় উদ্বেলিত মব জাস্টিসে
আগের মতো বেজে ওঠে না নির্ভার ঘুমিয়ে পড়া গান।
তাই, ভীষণ বিশ্বাসে সফলতা বিফলতা নিয়েই জীবন।
আলোর ফেরিওয়ালা
সাজ্জাদ সাদিক
সঞ্চিত আলো ম্লান হয়ে যায় শেষ প্রহরে
ক্লান্ত হয়ে অবসন্ন এক ঘুমন্ত পাখির ডানার ভেতর
আশ্রয় নেয় অন্ধতমিস্র রাতের জোনাকিরা
নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখে ঘুমের ভেতর বিভোর পাখি
পাখির স্বপ্নলোক থেকে পূর্বাহ্নের সাদা আলো ধারণ করে শূন্য বুক
লুমিনেসেন্ট অর্গানে জ্বলে ওঠে লুসিফারেজের ঠান্ডা আলো
পুনরায় ফেরি করতে বের হয়
পথে প্রান্তরে মাঠে-ঘাটে
কখনো কাঁটাতার পেরিয়ে যায়
পার হয় মৃত নদী
সোনালি ধানের মাঠ।
ঘোর অন্ধকার বনের ভেতর, রাতের নিস্তব্ধ দুপুরে।
এভাবেই রাতের প্রহর শেষ হয়ে আসে
আরেকটি নতুন ভোরের অপেক্ষায়।