বৈশাখের পংক্তিমালা
আরিফ চৌধুরী
বৈশাখের আকুল করা বাতাসে
আমের মুকুলে গন্ধময় সময়
বাতাবী লেবুর সৌরভ মাখা দুপুরে
কোকিলের কন্ঠে ডাক
ঝলমলে ঢেউ তোলা নদীর হাওয়ায়
লাল কৃষ্ণচূড়ায় উঁকি দেয় রোদের খেলায়,
চৈত্র সংক্রান্তির মেলা শেষে
বাঁশিতে সুরের ধ্বনি ভেসে আসে
রাত্রির দীপাবলী শিখা জ্বলে অন্তহীন।
জীবনের উপলব্ধিতে নতুন স্বপ্নে
দেখো মাধুরী কেমন ফুটেছে
রাতের উন্মিল ধবল জোছনায়
জোনাকি আলো ছড়ায়
অনন্ত সুর সাজা প্রকৃতিতে
ফুলের গন্ধমাখা পাঁপড়ি ফোটা সময়
বৈশাখ জানান দেয় সৌন্দর্যের আকুলতায়।
যে শহরে বিবেক বিক্রি হয়
মুন্সী আবু বকর
চোখ দুটো বিক্রি করেছিল সে,
এই শহরের ধুলোর দামে
আলোহীন জীবনের ভাঁজে
নীরবেই লুকিয়ে রইল অদেখা স্বপ্ন গোপনে।
কেউ একদিন বলেছিল, “কান রেখে যা,
হৃদয়ের শব্দ শুনে কী হবে?”
এখন সে আর কিছুই শুনতে পায় না
না ভালোবাসা, না প্রতিবাদ, না কান্নার সুরের দোলা।
তবু, একলা রাতগুলোয়
দুঃখের ঢেউ যেন ফিরে ফিরে আসে
একটা অদৃশ্য প্রশ্ন ফিসফিস করে,
“মনে হয় কিছু এখনো রয়ে গেছে ভেতরে?”
একদিন এক প্রাজ্ঞ বৃদ্ধ বলেছিল
“সবই তো বিক্রি করেছ, বোকা ছেলে!
তবে হয়তো বিবেকটা রেখেছ,
তাই তো হৃদয় এখনো কাঁদে খেলাঘরে।”
এখন সে হাঁটে শহরের গলিতে গলিতে,
একজন সৎ ক্রেতার খোঁজে
“একটা বিবেক আছে, পুরনো হলেও সত্যি,
কম দামে দিচ্ছি, নেবেন কি আপনি দয়াপূর্বক?”
মানুষ হেসে বলে, “পাগল!
আমরা তো আমাদেরটা বহু আগেই বিকিয়ে দিয়েছি।
এই শহরে কেবল শরীরগুলোই চলে,
বিবেক? সে তো পুরনো দিনের গল্প. একটা মিথ।”
স্মৃতির শহর
বিপুল বড়ুয়া
এখন মাঝরাত ঘুমিয়ে পড়েছে চেনা জানা স্মৃতির শহর
ধারে কাছে নেই লোক গমাগম ভিড়বাট্টা গাড়ির বহর
শহর ঘুমোও তুমি- ঘুমোচ্ছে গৃহহীন দুঃখ পোড়া মানুষ
চোখের পাতায় ভারি জ্বালাধরা ফুটো-ফাটা স্বপ্ন ফানুস।
চোখে ফেরে কোতোয়ালী মোড়-কবিরাজ বিল্ডিং স্মৃতি আবছায়া
কলতান-কিন্তু-উদয়ন সংঘ-সরব গির্জা মাঠ চুপিসারে ছড়ায় কী মায়া
হোসেন-পুতু-সুকুল-মুকুলের বল নিয়ে ড্রিবলিং আহারে কী ছোটা
ডেরুর খুনসুঁটি-জাফর-দীলিপকে টপকে সে কার গোল তবে লোটা।
অ্যান্ডি চাদর গায়, স্বপন দা-দীর্ঘকায় শিশির-ত্রিদিবদার সেই রাগী মুখ
‘স্পার্ক জেনারেশন’ শিরোনামে কবিকথন পথচলায় আহা কী সুখ
গঙ্গাবাড়ি-পাঁচবাড়ি-শিববাড়ি কিংবা ফিশারিঘাটের সেই বাঁশচালা
শরদিন্দু দত্ত স্যারের প্রাইভেট-সমর-শুক্লা-দিবাকর-কমল-আরতির কথামালা।
মিউনিসিপ্যাল-জেএম সেন ইশকুল- চুনারগুদাম-হাড্ডি কোপ্পানি সব চোখে ফেরা
বিকেলে কোর্ট বিল্ডিং-পরির পাহাড়-রঙ্গম ঘুরে আশুরাস্তার সেই বাসা ডেরা
পাঁচ ছয়জন আট আনায় রিকশা চড়া-শেকল পায়ে কয়েদির আসা যাওয়া দেখা
পেছনে আত্মীয়স্বজন-গামছা পুঁটলিবাঁধা চিড়া-মুড়ি বিষণ্ন চোখের জলরেখা।
এখন মাঝরাত-স্মৃতির শহর জাগবে না- ঘুমিয়ে পড়েছে জেনে
সেইসব দিনগুলি-ফিরে ফিরে আসে স্মৃতির পসরা কাছে এনে
সব ভাসে চোখের পাতায়-ঠিক ঠিক-চুপি চুপি কতো কথা হয়
মুছে যায় না কতো কথা-হারানো মুখ-নিশিদিন মনে পড়ে অমর অক্ষয়।