কবিতা

এই ধূলো

আশীষ সেন

 

‘এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে’
– রবীন্দ্রনাথ

এই ধুলো সবকিছু জানে উদাসী হাওয়ার কেন দোষ নেই।
শাখার দীনতা এত নগ্ন হয় কিছুই থাকে না
হলুদ পত্রের চোখ শোকাতুর প্রেমিকের মত
পাখির পালক ছুয়ে অবেলায় ঝরে পড়ে গেল।

নদীকে অনেক করে বুঝিয়েছি বৈশাখ শেষের দিনে
মাঠে নিয়ে যাবো।

ফিরে দেখি ক্রমাগত রাত্রি ভাঙে ঘুমের চরায়
ফুলের তলায় এসে পৃথিবীর শিশির জমেছে
এই ধুলো তার সবকিছু জানে উদাসী হাওয়ার কোন দোষ নেই।

 

 

আসহাবে কাহাফের ছিল দাকিয়ানুস

আরিফুল হাসান

রক্তাক্ত প্রাচীরের ওপারে জ্বলছে সন্ধ্যার লোহিত প্রদীপ,
দাকিয়ানুস বসে সিংহাসনেÑতার ছায়া ছুঁয়ে যায় সময়ের ব্রীজ।
চোখে পাথরের চাহনি, ঠোঁটে তামার সংকল্প,
সে জানে না মৃত্যু কী, সে জানে না স্বপ্ন ভাঙার শব্দ।

তার রাজ্যে কেঁপে ওঠে বাতাস, তার নিশ্বাসে ধোঁয়া,
পৃথিবীর ইতিহাস সে নিজ হাতে লেখেÑ
তার ভাষা বিষাক্ত, অমোঘ, অচেনা।
মানুষ তার পায়ের নীচে ধুলো, রক্ত তার হীরক-অঙ্কিত পথ,
সে রাজা নয়, সে ঈশ্বর নয়Ñসে এক বিভীষিকাময় ছায়ার অর্থ।

নগরীর দেয়ালে দেয়ালে তার নামে খোদাই করা ভয়,
নদীর জলে তার প্রতিচ্ছবি, ঝরনায় তার মুখশ্রী,
পাখিরা শিখেছে তার ভাষা, বাতাস বহন করে তার নাম,
মাটি জানে তার দুঃস্বপ্ন, সময় জানে তার ভ্রুকুটি।

কিন্তু একদিন, তার রাত্রি হলো গভীর, তার রাজপথ হলো নীরব,
একদল নিস্তব্ধ পদধ্বনিÑযুবক ছুটে যায় গুহার দিকে,
আকাশে জমেছে ঘন মেঘ, সময় নেমে আসে মাটিতে,
দাকিয়ানুস শোনে এক অদ্ভুত নিঃশব্দ বিপ্লব।

তার নাম লেখা আছে ইতিহাসের ঘৃণায়,
কিন্তু সে জানে নাÑঘুমিয়ে থাকা স্বপ্ন একদিন জাগবেই।
তার নগর একদিন থাকবে না, থাকবে না তার ছায়া,
শুধু বাতাসে গুঞ্জন উঠবেÑদাকিয়ানুস! তুই কোথায়?

 

 

মানুষ পাওয়া দায়

মাজহারুল ইসলাম

কথা ছিল ফিরবে তুমি
হাতেপায়ে গায়েগতরে নয়,
মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে।
ভোরের রাস্তায় প্রথম পথচারী হয়ে
নতুন দিনের আলোয় পাখির কিচিরমিচিরে
শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে।
যেমন একটা সকাল আসে,
আসে নতুন একটা দিন।
রাতের দুঃখকষ্ট অন্ধকারে জমা রেখে
পালতোলা জাহাজের মাস্তুলে জয়ের কেতন উড়িয়ে
অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষে
মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ক্ষয়িষ্ণু সমাজ
শক্ত দৃঢ় পায়ে হেঁটে যাবে, যতদূর পথ গেছে বয়ে।
তুমি এলে বটে!
কথার কথা হয়ে!
মানুষের ছায়া হয়ে!
অবয়বে ভিতর মানুষ খুঁজে পেলাম না।

অচেনা

আহসানুল হক

তোমাকে দেখার উদগ্র বাসনায়
সেদিন বর্ষণমুখর সন্ধ্যায়
ছুটে গিয়েছিলাম তোমার ঠিকানায়!

আমি বোধহয় ভুল পথে ভুল গন্তব্যে গিয়েছি
কড়া নাড়তেই দরজার চৌকাঠে দাঁড়ালো যে নারী
তাকে আমি কখনও দেখিনি
তার চোখের ভাষা আমার আজন্ম অচেনা
অথচ একদিন ওই চোখে
হিমায়িত ছিল সবুজ বালিকার প্রেম ;
ওই ঠোঁটে ঝুলেছিল শুক্লাপক্ষের চাঁদ

এখন সেই চোখে ঘৃণার ক্যালিগ্রাফি
সেই ঠোঁটে এখন ক্রুর হাসি
জানি না –
খ্রিষ্টপূর্বকালে কোনোদিন তাকে বলেছিলাম কি না
‘তোমাকে, তোকেই আমি গভীর ভালবাসি’!