তালপাতায় লিখি দেবী প্রজ্ঞাপারমিতা
মিসির হাছনাইন
তোমাকে পালযুগের চিত্রকলা তালপাতার পুঁথিতে
লিখছি… দেবী প্রজ্ঞাপারমিতা। যে লিপি হাতে লিখে
শ্রীতাড় হারিয়ে গেছে, বুক নদীতে ডুবে থাকা আঙুলে
সহস্র বছর আমি শুধু তোমারে জড়িয়ে ধরি, তুমি হাসছো
কেয়া মল্লিকা ফুলে.. দেখো, পূজার ফুল গাইছে জোৎস্নাভাঙা গান।
আর যে তাকিয়ে থাকতে পারি না, চোখ পুড়ে যায়
চোখের পলক মৎসদেবী এই যে তোমার চলে যাওয়া পথে
তালপাতার বাতাসে সুউচ্চ তুমি নেচো ওঠো হৃদয়ের গালিচায়
যে কষ্ট বুকে লয়ে বেঁচে থাকার সব সৌন্দর্য আয়ত্ত করেছো
তালপাতার সে ডানা তুমি পেয়েছিলে, এঁকেছিলে নিগূঢ় চিত্রকর্ম
বিষন্নতায় পুড়ে যাওয়া চোখ নোনা পানির প্রবাল সমুদ্রদ্বীপ
সহস্র বছর তোমারে লিখি বেঁচো থাকো দেবী প্রজ্ঞাপারমিতা
শিমুল ফুলের বাংলা অক্ষরের নরম সূতায় সাজানো গোছানো
তোমাকে পাওয়ার পর আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই পৃথিবীতে
শৃঙ্খল
আবু আফজাল সালেহ
আমি মনের কারাগারে আটকে গিয়েছি
ভয় আর সন্দেহের জালে আটকা পড়েছি!
চিন্তার শৃঙ্খল আমাকে আটকিয়ে রেখেছে
পালানোর পথ কই ?
কিন্তু হৃদয়ে স্ফুলিঙ্গ রয়েছে
বিস্ফোরিত হতে পারে সমস্ত জালের বিরুদ্ধে।
হৃদয়ের স্বাধীনতা পেলে শৃঙ্খল ভেঙে যাবেই
ভয় কিংবা দ্বন্দ্বের দ্বারা আর আটক থাকতে চাই না!
দেহের পাশে শুয়ে ছিল মৃত
আহাম্মদ উল্লাহ
দেহের পাশে শুয়ে ছিল মৃত-সুগন্ধীতে মাখানো নগ্ন দেহ।
হাড়হিম শীত দুয়ার চেপে ধরে লাশকাটা ঘরে, কৃষ্ণপক্ষে আজ;
আলো-ছায়া মাখা মায়াবী জগৎ আরো শুয়ে ছিল
নারী-পুরুষ, পরিচয় গুপ্ত আরো কেউ কেউ।
এক তুখোড় রাজনীতিবিদ, এক কবি, দুধের শিশু,
এক নারী চরিত্র, সাহসী সৈনিক, পথের পাগল, আছে আরো চারটি ফাঁসির আসামি
নামে-বেনামে আরো হাজার খানেক মানুষ শীতল বক্সে
কাটাছেঁড়া টেবিলে লন্ঠন আলোর নীচে।
সুন্দর-কুৎসিত খ্যাত দেহ একই আলোর নিচে,
ধারালো সব যন্ত্রপাতি।
একই আগুন, মাটি কিংবা একই কফিনে বন্দী হবে
মানব আজ তবুও দুনিয়া জুড়ে তোলে মানব বিভেদ প্রাচীর।
কেউ নেই কারো স্মরণে, যুগ পার হলে পৃথিবীর প্রাচীর
নীতিমালায় হারায় খ্যাতি-যশ সব; যেন
সমুদ্রের ঢেউ এসে বালি নিয়ে যায় গভীরে, প্রাচীন বালি তুলে দেয় তীরে;
সেই বিখ্যাত রাজা হাজার প্রজাপাল যার শিয়রে;
অজ্ঞাত এক ধনী এক বস্ত্র পরিধানে এক বেলা যেত যার,
এক লেখক যার ভক্তকুল হাজার, সমুদ্রের ফেনা যেমন
অগণিত মহাকালে নতুন অধ্যায়ে হয় না তো তার সাথে কারো দেখা।
এক গৃহস্থ নিপুণা নারী কর্মে যেত দিবস রাত,
এক দিনমজুর, শ্রমিক কিংবা এক অবহেলিত পথের জীবন;
কেউ নেই পৃথিবীর পাতায় লিপিবদ্ধ আজ।
পৃথিবীর গায়ে হাত রেখে একদিন মধুবালা আমি শুনেছিলাম জমিন রহস্য।