কবিতা

বারুদগন্ধী মানচিত্র

আশীষ সেন

কাছে এসো, সম্মুখে দাঁড়াও, বসে আছি
ফণীমনসার ঝোপে
ডুব দিয়ে মুখ ঢেকে, বুদবুদ ভাসে জলের রেখায়,
দূরে দাঁড়িয়ে কচি শিশুটির মতন কলাপাতা দুলছে।

যাবো কি যাবো না বুক পুড়ে যায়, পুড়ে যায়
ছোঁব কি ছোঁব না দিন চলে যায়, চলে যায়।

আমরা পতাকা পুঁতেছি দণ্ডে, যাবো কোথায়?

এই সেই বুকের ভেতর বারুদগন্ধী মানচিত্র
অঘ্রাত অঘ্রাণে হাজার বছরের সুর-তান-লয়
আমাকেই শুধু কানে কানে বলে বুকে টেনে নিয়ে,
থেকে যাও, কেড়ে নাও আগুন ফোটাও
শ্রাবণে চৈত্রে বারমাসে।

 

 

পেরতির মুখ ১৮

মিজান মনির

চেনা-ই হয়নি এখনও
অথচ সন্ধ্যা নামলেÑ
অন্ধকারের সহবাস!
চারপাশ অজানা মনে হয়
শোকে শোকে দীর্ঘশ্বাস।

প্রথমে না হয় শুরু কর প্রেমে
ধলপ্রহর না হয় পরিচয় সেরে নেবো?

দুপুর এলো, বিকাল এলো তবুও ফুরায় না প্রেম
অতঃপর রতিচিহ্ন রেখে চলে গেলে
কোন সে অজানায়

 

 

মাটির যত পাপ

শাহীন মাহমুদ

টারশিয়ারি যুগের পরের মাটি
আর আদম পরবর্তী মাটির ঘনত্বে
অনেক ফারাক
অতএব আদম মাটির তৈরি।
মৃত্তিকা জৈব উপাদান আর সময়ে-
অনেক ফারাক
অতএব মানুষ মাটির ফিনিস প্রোডাক্ট।

আমি প্লাইস্টোসিন যুগের
পুরনো মাটি চাই-দূষণমুক্ত মাটি
সভ্যতা, মানবতা, প্রতিহিংসাহীন
দমওয়ালা মাটি।

 

বিবাগী

অমল বড়ুয়া

যদি ভালোবাসো
অন্ধ হয়ে যাও…
তাবৎ দুনিয়ার সব রাঙময়তা
ছুঁয়ে দেখো কেবল আমার অন্দর-বাহিরে,
বুঝে নাও তোমার দেখার পৃথিবী শুধুই আমি;
অতঃপর বধির হয়ে যাও…
কর্ণকুহরের রুদ্ধ অবসুপ্ততায়
বুকের গহীন অনন্ত ব্যাকুলতায়, বজ্রনিনাদে-
কীভাবে উতাল-পাথাল হয় কেবল তা-ই শোনো
আর বুঝে নাও…
এই আমি-ই তোমার সরিৎসাগর, শব্দনদী;
এবার ঠোঁটে ঠোঁট রাখো…
রসইন্দ্রিয়ের বিরামহীন স্পর্শে
অমরত্বের অমৃতরসের ফল্গুধারায় বুঝে নাও…
জগতের সমস্ত স্বাদ-বিস্বাদ কেবল-ই আমি;
এখন সময় তোমার জাগতিক সমস্ত সৌগন্ধ-সৌরভ
দু’হাতে সরিয়ে আমার অকিঞ্চিত বুকে মুখ গুঁজে
এই মানুষী শরীর-অন্তর-আত্মার সুঘ্রাণে
রমিত-মতিত হওয়ার-
আর বুঝে নেয়ার…
আমিই তোমার ভ্যানিলার মৃদু সুবাস, স্বর্গের গোলাপ;
এসো এবার…
জড়াও আমারে তোমার দেহবল্কলে
বিলাও তোমার গাগনিক পর্শ,
বুঝে নাও…
এ মর্ত্যভূমে আমি-ই তোমার অপার্থিব মোহমুগ্ধতা
অপার স্বর্গসুখ ।

যদি ভালোবাসো বিবাগী হয়ে যাও!

 

 

যুদ্ধ বন্ধের পথ নেই

বজলুর রশীদ

বিস্ময়কর পর্দার উন্মোচনে শঙ্কিত মুখ,
আর্তনাদে প্রকম্পিত মুক্তিকামী গাজাবাসীর
বিষাদের জন্ম-ইতিহাস অনিদ্রার পাশে
চোখের অন্ধকারে ভেসে থাকে স্বজনের বীভৎস লাশ!

নৈমিত্তিক জীবন সত্যের বীভৎসে
এটাই তাদের আসল পরিচয়,
স্বৈরাচারী মুখে সহজপাঠ
সামরিক কনভয় ছুটে যাবে
যুদ্ধের ডামাডোলে করুণ যাত্রায়,
এক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র থেকে পাশপাশে
ইসরায়েল খাবে ঈশ্বরের অনুশাসন।

অতঃপর, জেগে ওঠো শান্তিকামী জনপদ,
আজ অসহায় মনুষ্যকুল, অসহায় জীববৈচিত্র্য,
যেভাবে ঘোলাটে হয়ে আসছে করুণ!
সেখানে দেখছি শুধুই ইসরালের করুণ খেলা,
ঘনঘোরে ফিলিস্তিনি মরে প্রতিদিন
যুদ্ধ বন্ধের পথ নেই গাঢ় প্রতীক্ষায়।

 

রূপালী মাকড়সা

সাগর আহমেদ

পৃথিবীটা মায়াময় এক রূপালী মাকড়সা
ছেয়ে আছে লাল নীল সীমান্তের কুহকিনী মায়া,
কিছু তার প্রেম আর কিছু উগ্র কাম
ট্রাফিক সিগন্যালে কেউ থামে, কেউ বা বেহায়া।

দূরের নক্ষত্র পানে কেউ আঁকে প্রেম শিলালিপি
কেউ ভোজন উৎসবে মাতে বেপরোয়া মাঝরাতে,
গাঙ্গচিল উড়ে যায় সমুদ্র পেরিয়ে
মাছিরা ভনভন করে উচ্ছিষ্টের সাথে।

ভ্যানগগ হেঁকে বলে প্রেম! হায় প্রেম !
কী রঙে আঁকবো তোমায় নিঃসঙ্গে শুধালেম।

 

 

হাওয়া রহস্য

বিবিকা দেব

হাওয়ার তালে ফাগুনটা বড্ড অভিমানী। স্পর্শে সদ্য সবুজ গজানো পাতারা নেচে ওঠে খলবলিয়ে। সূর্যটা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে দশ দিগন্তে। কোকিলের ডাকাডাকি করে দেয় অনমনস্ক। রঙিন প্রজাপতি সারাদিন ফুলের ভেতর খুঁজে বেড়ায় অমরত্ব। গাছের ডালে টকটকে লাল শিমুলের ঘ্রাণে মাতে ময়না-শালিক। বসন্ত তবে এসে গেছে… প্রতিটি শাখার বিন্যাসে প্রেমের বারতা নিয়ে। চারপাশে মুগ্ধতা ছড়িয়ে বেলা শেষে টুপ করে ডুব দেবে শান্ত দীঘির জলে। রাজহাঁসের ঠোঁটে ঠোঁটে কথা হবে। কথা শুনতে কান পাতে মীনের পরিবার। তারাও হাওয়ার তালে তালে আজ মাতাল হবে।