সুপ্রভাত ডেস্ক »
গত শতকের ষাটের দশকে বাংলা কথাসাহিত্যের বাঁক বদলের রূপকারদের একজন হাসান আজিজুল হক আরনেই। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগে সোমবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা বিহাসে নিজের বাড়িতে তার মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে তিন দশক অধ্যাপনার পর ২০০৪ সালে তিনি অবসরে গিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
একুশে পদকে ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত এই গদ্যশিল্পীর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দ পুরস্কারও তার মুকুটে ছিল। গত কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন হাসান আজিজুল হক। বাথরুমে পড়ে কোমরে ব্যথা পাওয়ার পর বছরের মাঝামাঝি থেকে শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি।
এর মধ্যে নিউমোনিয়া ও হার্টের সমস্যা দেখা দিলে গত অগাস্টে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় এনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। প্রায় তিন সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে গত ৯ সেপ্টেম্বর তাকে রাজশাহীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে বাসায় রেখেই তার চিকিৎসা চলছিল।
তার মধ্যেই সোমবার রাতে রাজশাহীর সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এক ফেইসবুক পোস্টে প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখেন- ‘আমরা সকলে মর্মাহত। সকল প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলো।’
রাত ৯টায় হাসান আজিজুল হকের মৃত্যু হয় বলে সাবেক সহকর্মী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বিডিনিউজকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঢাকায় চিকিৎসার উন্নতির পর রাজশাহীতে আনা হলেও তার সামগ্রিক অবস্থার আর উন্নতি হয়নি। তিনি শেষ দিন পর্যন্ত শয্যাশায়ী ছিলেন।
ঢাকায় চিকিৎসার সময় তার ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান বলেছিলেন, নিউমোনিয়া ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তার বাবা।
হাসান আজিজুল হকের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে; প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা সেই গ্রামেই করেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছিলেন ১৯৫৬ সালে খুলনার বিএল কলেজ থেকে। তখন ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে পাকিস্তান সরকারের নির্যাতনও সইতে হয়েছিল তাকে।
এক পর্যায়ে খুলনা থেকে এসে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি কলেজে। ১৯৫৮ সালে এই কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৬০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
এরপর রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা গার্লস কলেজ এবং খুলনার বিএল কলেজে শিক্ষকতার পর ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন হাসান আজিজুল হক। এরপর তার কোথাও যাননি।
১৯৫৮ সালে শামসুননাহারকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
এ মুহূর্তের সংবাদ