কক্সবাজার কি পাহাড়শূন্য হয়ে পড়বে

কক্সবাজার পৌরসভার বৈদ্যঘোনা পাহাড়। প্রায় তিন হাজার একরের এই পাহাড়ে অবৈধ বসতির সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজার। পাহাড় কেটে যে যেভাবে পারছে, সেভাবেই গড়ে তুলেছে নানা স্থাপনা। এর সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে।
একটি পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এই বৈদ্যঘোনা পাহাড়ে ২০১০ সালের দিকে বসতির সংখ্যা ছিল ৮০০ থেকে ১০০০। এখন তা বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। বৈদ্যঘোনাসহ পৌরসভার ঘোনাপাড়া, পাহাড়তলী, খাজামঞ্জিল, লাইটহাউস, রাডার স্টেশন, লারপাড়া, বাস টার্মিনাল, রুমালিয়ার ছড়া, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, এবিসি ঘোনায় অন্তত ১২টি পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে। এতে বসবাস অন্তত তিন লাখ মানুষের।
পাহাড় কেটে এ পর্যন্ত কতগুলো ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে, এই পরিসংখ্যান পৌরসভা, বন বিভাগ কিংবা জেলা প্রশাসনের কাছে নেই। তবে পরিবেশবাদী বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের দাবি, ৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট-বড় ১২টি সরকারি পাহাড় কেটে গত দুই যুগে ১৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি নির্মিত হয়েছে। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ বাড়ি নির্মিত হয়েছে শহরের বৈদ্যঘোনা, ঘোনাপাড়া, খাজামঞ্জিল, লাইটহাউস, আদর্শগ্রাম, কলাতলী, পাহাড়তলী ও লারপাড়া এলাকায়। ঘরবাড়ির মধ্যে আছে সাততলার পাকা ভবন থেকে আধা পাকা টিনশেড বাড়ি।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড় কাটা বেশি পৌরসভার ৬. ৭.৮ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডেও লাইট হাউস পাহাড়ে বৃহস্পতিবার রাতে একাধিক ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। সৈকতপাড়াতে পাহাড়ধসে এক পরিবারের পাঁচজন মাটিচাপা পড়েন। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মাটি সরিয়ে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করলেও এক শিশুর মৃত্যু হয়। মাটি সরিয়ে ওই শিশুকে তুলে আনতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। কক্সবাজার পৌরসভার বর্তমান আয়তন ৩২ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাজের সন্ধানে আসা লোকসহ প্রায় ১০ লাখ লোকের বসবাস এ পৌরসভায়।
ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আরও ভূমিধসের ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কা আছে। শহরের বেশ কয়েকটি উঁচু পাহাড়ের ঢালু কিংবা নিচে অসংখ্য বসতি রয়েছে। ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসে বসতবাড়ির ওপর চাপা পড়লে ভেতরের লোকজনকে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া দুর্গম পাহাড়ে যাতায়াতের সহজ ব্যবস্থাও নেই। এ কারণে প্রাণহানির শঙ্কা বেশি।পরিবেশবাদীদের জানান, পাহাড় কাটায় জড়িত মূলত রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
এভাবে পাহাড় কাটলে পর্যটননগর কক্সবাজার পাহাড়শূন্য হতে খুব বেশি দেরি হবে না।