নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিনই আসছেন হাজার হাজার পর্যটক। দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশিদেরও উপস্থিতিও এখন লক্ষণীয়। বিশেষ বিশেষ দিন ছাড়াও সরকারি ছুটি, কিংবা শুক্র ও শনিবার পর্যটকের ভিড় থাকে প্রচুর। ভ্রমণে আসা পর্যটকরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে সন্তোষ প্রকাশ করলে সবখানে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন। অধিকাংশ পর্যটকের অভিযোগ, ‘পর্যটকের ভিড়ে যে যেমন পাচ্ছে সবখানে অতিরিক্ত নিচ্ছে’। জেলা প্রশাসনও বলছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী, সুগন্ধা থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সাগরতীর জুড়ে দেখা যায় মানুষ আর মানুষ। তীব্র গরম উপেক্ষা করে এসব মানুষের বেশিরভাগ শরীর ভাসিয়ে দিচ্ছেন নোনাজলের ঢেউতে। সাগর কিছুটা শীতল আর ঢেউয়ের তীব্রতাও কম। তাই ঢেউয়ে মেতেছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
হোটেল অভিসার নামের একটি আবাসিক হোটেলের দুই হাজার টাকার কক্ষের সাড়ে ৮ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ করেছেন তৌহিদুল ইসলাম নামের এক পর্যটক। তিনি জানান, যেখানে তারকা মানের হোটেলের ভাড়া ৫ হাজার সেখানে সাড়ে ৮ হাজার টাকা নেয়া মানে পর্যটকের পকেট কাটা। অত্যন্ত খারাপ। তারা একদিনের জন্য রুম ভাড়া দিতে রাজী নন, দুই দিনের জন্য ভাড়া নিতে হবে।
এদিকে, শুক্রবার রাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মাসুম বিল্লাহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে কক্ষের ভাড়া বাবদ বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগে অভিসার হোটেলকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
লাবণী পয়েন্টে ঢাকা মালিবাগ থেকে আসা জান্নাত আরা নামের এক পর্যটকের সাথে। তিনি বলেন, প্রচ- গরম। তারপরও তিনদিনের জন্য টানা ছুটিতে কক্সবাজার আসলাম বাচ্চাদের নিয়ে একটু বেড়ানোর জন্য। খুব ভালো লাগছে। সমুদ্র যেন মন জুড়িয়ে দিচ্ছে। গতকাল কেনাকাটা করেছি মন ভরেনি, যেন সবকিছুতেই দাম বেশি নিয়েছে এমনটাই মনে হয়েছে। দাম বেশি হলেও বাচ্চারা কক্সবাজার থেকে শপিং করার জন্য বায়না ধরেছে। না নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক রিফাত বলেন, চারদিন আগে বান্দরবান থাকাকালীন কক্সবাজারের ২০/২৫টা হোটেল অনলাইনে বুকিংয়ের জন্য দেখেছি কিন্তু কোন হোটেলই পাইনি। শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার হিলটনে রুম পেয়েছি, তবে এক রুম এক রাতের জন্য ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু এর আগে এই হোটেলে অনেকবার রাত্রিযাপন করেছি মাত্র ২ হাজার টাকা ভাড়ায়। টানা ছুটিতে মানুষ বেশি এসেছে তাই হোটেল কর্তৃপক্ষ এভাবে বেপরোয়া হয়ে ইচ্ছেমত ভাড়া নিচ্ছে।
হোটেল হিলটনের ম্যানেজার ঊর্মি বড়ুয়া জানান, তাদের কক্ষ ভাড়া সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। এর বেশি নেয়া হয় না। বেশি বললে এটা অপপ্রচার।
আরেক পর্যটক দম্পতি আরমান বলেন, টানা ছুটি কিংবা কোন উৎসব হলেও কক্সবাজারের হোটেল, রিসোর্ট বা গেস্ট হাউসগুলো কয়েকগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তার সঙ্গে রেস্তোরাঁ থেকে শুরু বার্মিজ পণ্যের দোকান ও যানবাহনের চালকরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে মেতে উঠে। আবার খারাপ ব্যবহার করতেও ভুলে না। তবে এসব বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারে ৫’শ ২৬টি হোটেল মোটেল রিসোর্ট গেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন রাত্রিযাপন করতে পারে ১ লাখ ২০ হাজারের মতো পর্যটক। কক্সবাজারের তারকা মানের হোটেল ছাড়া অন্য কোন আবাসিক হোটেল ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকার বেশি ভাড়া নেয়ার কোন তথ্য উল্লেখ্য করেন না।
হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তাদের কাছেও রয়েছে। বিষয়টি খুব অন্যায়। এব্যাপারে সমিতি ও প্রশাসন যৌথভাবে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।