কক্সবাজারে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবিতে জেলের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

গত দুই দিনের টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরসহ জেলার বিভিন্নস্হানে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার নয় উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর থেকে একটানা প্রবল বৃষ্টির কারণে কক্সবাজারে কলাতলী, সুগন্ধা, সার্কিট হাউস, বাহারছড়া, বাজারঘাটা, বার্মিজ মার্কেট, লাবণীর মোড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক ও উপসড়ক হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে ডুবে যায়। এছাড়া জেলার রামু উপজেলার কিছু অংশ, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ, ঈদগাঁও উপজেলায় নিম্নাঞ্চলে বৃষ্টির পানিতে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে বলতে গেলে মাছের সব প্রজেক্টগুলোর ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। লাখ লাখ টাকার চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে।

উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, পাহাড়ি ঢলে আমার ইউনিয়নের অন্তত ৩ শতাধিক ঘর বাড়ির ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। অন্তত ১০/১২ টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।

টেকনাফের উনচিপ্রাং ও শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং উখিয়ার নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পও প্লাবিত হয়েছে।

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, ‘টেকনাফে দুই দিনের ভারি বর্ষণে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ।’

ওই উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন বলেন, ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চালে অবস্থিত বেশ কয়েকটি গ্রামে বসতবাড়িতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

২৬ নম্বর শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আমবাগান এলাকার রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা সাইফুল বশর বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে ক্যাম্পে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘরের ভেতর হাঁটু সমান পানি। চুলায় আগুন দিতে পারেনি অনেক পরিবার। বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি কষ্ট পাচ্ছে।’

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবি, জেলের মৃত্যু

কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরের লাবণী চ্যানেলে ২৩ জেলে নিয়ে ‘এফবি রশিদা’ নামে ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার মোহাম্মদ জামাল (৩৭) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। ট্রলারটির আরো চার মাঝি-মাল্লা নিখোঁজ রয়েছেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (পর্যটন সেল) তানভির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে লাবণী চ্যানেলে ঝড়ো বাতাসের কবলে ট্রলারটি ডুবে যায়। মারা যাওয়া জামালের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা এলাকায়।

ডুবে যাওয়া ‘এফবি রশিদা’র জেলে মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে লাবণী চ্যানেল আসার পর ঝড়ো বাতাসের কবলে পড়ি আমরা। তখন ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এসময় ট্রলারটি ডুবে যায়। আমাদের চার জেলে ঢেউয়ের স্রোতে ভেসে গেছেন। আরেক জেলে জামালের অবস্থা খারাপ ছিল। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রলারটিতে ২৩ জন মাঝি-মাল্লা ছিল। একজন মারা গেছেন। চারজন নিখোঁজ রয়েছেন।’

সী-সেইফ লাইফগার্ড কর্মীদের ইনচার্জ ওসমান গণি বলেন, ‘ভাসমান অবস্থায় জেলেদের উদ্ধার করে তীরে আনা হয়েছে। একজন মারা গেছেন। কয়েকজন নিখোঁজ বলে শুনেছি। তাদের খোঁজ করা হচ্ছে।’

কক্সবাজারে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড

গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলায় ৪৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ। এর আগে, এত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি।