আমাদের একমাত্র সমুদ্র হলো বঙ্গোপসাগর। উপসাগরের কোলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এই সমুদ্র উপকূলের নাজিরার টেক থেকে শুরু কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার জুড়ে প্লাস্টিক, ছেঁড়া জাল, গাছ-গাছালি, স্যান্ডেল ও রশিসহ নানা ধরনের বর্জ্য জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে। যা বালিয়াড়িতে ছড়িয়ে রয়েছে। ভেসে আসা এসব বর্জ্য সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিয়েছে। সমুদ্রে নিম্নচাপের কারণে এসব বর্জ্য ভেসে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিষয়টি নিয়ে গতকাল লিড নিউজ করেছে সুপ্রভাত বাংলাদেশ।
এদিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে কয়েক দিন ধরে ভেসে আসছে অসংখ্য মরা জেলিফিশ। এর পাশাপাশি ডলফিন ও কাছিমের মৃতদেহও ভেসে আসছে। ডলফিন ও কাছিমগুলোর শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। মৎস্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রে পুঁতে রাখা মাছ ধরার জালে কিংবা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রাণীগুলোর মৃত্যু হচ্ছে বলে তাঁদের ধারণা। কিন্তু গভীর সমুদ্রে গিয়ে এর প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের কেউ নেই।
গত বুধবার অসংখ্য মৃত জেলিফিস, বৃহস্পতিবার ২টি মৃত ইরাবতি ডলফিন ভেসে আসার পর ব্যাপক হারে বর্জ্যও ভেসে আসে। যার কারণে বালিয়াড়িতে পড়ে থাকা বর্জ্যে সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়েছে সৈকত। একই সঙ্গে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। যা দেখে বিব্রত হচ্ছে পর্যটকরা। যদিওবা অফসিজনের কারণে পর্যটকের উপস্থিতি অনেকটা কম।
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের মতে, গত কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে একটি ছোট আকারের নিম্নচাপ লক্ষ্য করা গেছে। নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের সময় সমুদ্রের উপরিভাগের পানি অতিমাত্রায় বেড়ে গিয়ে ফুলে উঠে এবং ঘূর্ণনের ফলে সমুদ্রের ভাসমান বর্জ্য একসাথে জমা হয়ে সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসে। এসব বর্জ্য কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত বিভিন্ন লতা, গুল্ম ও ম্যানগ্রোভের সাথে আটকা পড়ে। এটি টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোপ্লাস্টিক এর উৎসে পরিণত হয়েছে।
অনতিবিলম্বে এই বর্জ্য অপসারণ না হলে সৃষ্ট মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে এবং মানুষের জন্য বিশাল স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখা বর্জ্য অপসারণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অপসারণ করা জরুরি। সবসময়ের জন্য বর্জ্যমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত সমুদ্র সৈকত গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করতে হবে। বঙ্গোপসাগরের মহামূল্যবান সম্পদকে রক্ষা করার কোন বিকল্প নেই। এজন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন, সামুদ্রিক পরিবহন ও পর্যটন এবং সমুদ্রসম্পদ আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ