সুপ্রভাত ডেস্ক »
আজ শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী। দেবী দুর্গার বিসর্জন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব। পাশাপাশি পূজার ছুটির সঙ্গে যোগ হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। এই চার দিনের ছুটিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
ইতিমধ্যে কক্সবাজারের সবকটি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের রুম বুকিং হয়ে গেছে। এতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে আগামী শনিবার (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত ঠাসা থাকবে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৯০ শতাংশের বেশি কক্ষ আগাম বুকিং রয়েছে। এদিকে, পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।
কথা হয় কক্সবাজারে সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটক দম্পতি সুবর্ণা আর রিপনের সঙ্গে। এই দম্পতি বলেন, ‘প্রতি বছর দুর্গাপূজার ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা হয়। কারণ, কক্সবাজার সৈকতে দেশের সর্ববৃহৎ বিসর্জন হয়। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া নিজ চোখে দেখে আনন্দ ও বেদনা দুটিই উপভোগ করি। তবে গতকাল থেকে বৃষ্টি বাধ সাধলেও আনন্দের কোনও কমতি হয়নি।’
পাথুরে বিচ ইনানী সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটক সোমা চৌধুরী বলেন, ‘দুর্গাপূজার ছুটিতে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী কেন, সব ধর্মের লোকেরা ছুটি উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে। এ কারণে, অন্যদের মতো আমরাও মিস করিনি। পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে বুধবার থেকে কক্সবাজারে রয়েছি। ফিরবো শনিবার রাতে।’
সৈকতে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে নিরাপত্তার কোনও কমতি নেই উল্লেখ করে একটি বেসরকারি সংস্থার চাকরিজীবী পারভেজ আলম বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে কক্সবাজার ভ্রমণ সত্যি অসাধারণ। বিশেষ করে কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে ইনানী বা পাটুয়ারটেক কোনও রিসোর্ট উঠলে বাড়তি আনন্দ পাওয়া যায়। কোলাহল পরিবেশ আর মনোরম দৃশ্যে প্রকৃতির মাঝে সত্যি হারিয়ে যাবে যে কেউ।’
এদিকে, পর্যটকদের আগমন নিয়ে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার দুর্গাপূজার ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটিও যোগ হওয়ায় হোটেলের শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সদস্য আব্দুল্লাহ খান বলেন, ‘এবারের ছুটিতে যেভাবে পর্যটকরা এসেছে, তা অতীতের রেকর্ড ভেঙেছে। এতে ব্যবসায়ীরা অনেক খুশি। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের সব ধরনের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে পর্যটকরা গিজ গিজ করছে। কোথাও কোনও ধরনের রুম খালি নেই।’
তারকামানের হোটেল দি কক্স টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, ‘আমাদের একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল এবারের পূজার সরকারি ছুটিতে হোটেল বুকিং ভালো হবে, সেটি পূরণ হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসাই হোটেল মালিকরা লাভের মুখ দেখছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমনের সুযোগে অপরাধীরা যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পর্যটন জোনের মোড়ে মোড়ে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে। চুরি, ছিনতাইরোধে চিহ্নিত পর্যটন স্পটে অভিযান চলমান রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও জেলা পুলিশ কাজ করছে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসনের আওতায় ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। সবমিলিয়ে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ বেষ্টনী গড়ে তুলেছে প্রশাসন।’
দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা চার দিন ছুটি থাকায় রেলের ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে যাত্রীদের টিকিটের চাহিদা বাড়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার রাত থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এই রুটে ‘ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস’ নামের একজোড়া ট্রেন চালু করেছে।