ওয়েলস

সঞ্জয় দাশ »

দীর্ঘক্ষণ একদৃষ্টিতে আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো সে। একাকী নিজেকে দেখার মধ্যে এক ধরনের বিশ্লেষণ আছে। সে বিশ্লেষণ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয় কখনো-সখনো। আত্মসমীকরণের হিসেবে সে সব কিছুতেই সার্থক। এমন এক ধারণা নিয়ে যখন টেবিল ছেড়ে উঠতে যাবে ঠিক তখনই সেলফোনটা বেজে উঠলো সশব্দে। ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই একরাশ বিরক্তি তাকে নিয়ে গেলো কাজের দিকে। অথচ এমন একটা মুডে সে ভাবছিলো একান্তই নিজেকে নিয়ে। সে ভাবনায় রাইসার যতি পড়লো। রাইসার স্কুল থেকে আসা একটা ফোনকলে। অগত্যা আর কি করা। তার স্কুলের দিকেই পা বাড়াতে হবে ওয়েলসকে।
স্কুলে রাইসার খুব প্রশংসা করলো ক্লাস টিচার। এবারও সে ভালো ফলাফল করেছে। মেয়েটাকে তেমন কিছু দেয়নি সে। শুধু ওর বাবাই যা দেয়ার সব দিয়েছে। তবে এটা ঠিক মা হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করেছে শতভাগ। এতে কোনো ভুল নেই।
ডাইনিং টেবিলে বসে সেই কথাই হচ্ছিলো রাইসার বাবার সাথে।
: চলো, এবার বাইরে কোথাও যাবো তোমাদের নিয়ে।
: কোথায়?
: শহরের সবচেয়ে বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে।
: কোথায়?
: আরে আগে চলো। তারপর দেখবে।
সব সময় কোন একটা উপলক্ষে বাইরে বের হওয়া গেলেও এবারের যাওয়টায় অন্যরকম আনন্দ পাচ্ছে সে। মেয়ে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে।
হিউস্টোনের সবচেয়ে দামী রেস্টুরেন্ট থেকে যখন তারা নামলো তখন রাত গড়িয়েছে। গাড়ি ড্রাইভ করছেন মোরশেদ সাহেব। তার ঠিক পাশের সিটেই ওয়েলস। হোটেল থেকে ফেরার সময় তার কেবলি মনে হচ্ছিলো মানুষের জীবনের অর্থ বুঝি শুধুই উদ্যাপন। নানা উপলক্ষে মানুষের এই উদ্যাপন কখনো-সখনো অর্থহীনও বটে। বিশ্বে অনেক মানুষ অনাহারে। কত কষ্টে আছে সেসব মানুষ। তাদের জন্য কিছুই কি করা যায়না। একটা ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন খোলার কথা অনেকদিন থেকেই মাথায় থাকলেও নানান বাস্তবতায় তা হয়ে উঠেনি। এবার কিছু একটা করা দরকার। অনেক সময় চলে গেছে। যেই ভাবা সেই কাজ। বাসায় ফিরেই একটা দাতব্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ করলো সে। নিজের জমিয়ে রাখা কিছু অর্থ সেই দাতব্য সংস্থায় পাঠিয়ে দিলো সে। এই মুহূর্তে বাবার কথা খুবি মনে পড়ছে তার। তার বাবাও ঠিক এমন এক দানশীল মানুষ ছিলেন। অকাতরে করতেন মানুষের জন্য। নিজের জন্য কখনো কিছু করেন নি তিনি।
: কি ভাবছো?
: কই কিছু না তো?
: মনে হলো তুমি কিছু একটা নিয়ে বেশ উদ্বেলিত?
: হুম, একটা দাতব্য সংস্থায় যোগাযোগ করলাম। দুস্থ কিছু মানুষের জন্য কিছু করা যায় কিনা ভাবছিলাম।
: ওহ্ তাই, ঠিক আছে তোমার যা ভালো মনে হয় করো।
কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে মোরশেদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে ফের আনমনা হয়ে গেলো সে। স্বামী হিসেবে মোরশেদ সাহেব দায়িত্বশীল। খুব কর্মপটু। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে তার সাথে তেমন বনিবনা হয়না। তখন নিজেকে খুব একা মনে হলেও দমে যাওয়ার পাত্র সে নয়; এটা ভেবেই সোৎসাহে নিজের কাজেই মগ্ন থাকে ওয়েলস।
ধবধবে সাদা চাঁদ উঠেছে নীলিমায়। থেকে থেকে দুলছিলো বাতাস। রুফটফে থাকা গাছগুলো প্রায় কাত হয়ে পড়েছিলো, এমন দৃশ্য দেখার পর মেজাজটাই খিচে যেতে থাকে ওয়েলসসের। দীর্ঘক্ষণ যত্ন-আত্তির পর সেগুলো ঠিক হলো। লনে একনাগাড়ে কিছুক্ষণ পায়চারির পর আনমনে গালে দুহাত দিয়ে দূর নীলিমায় চোখটা রাখলো সে। বেলিফুলের সুবাসে মনটা উচাটন হতে লাগলো। রোহিতের সাথে অনেকদিন কোনো কথা হয়নি তার। ভরসন্ধ্যায় তার মনটা উড়ে গেলো বাংলাদেশে। সেদিন রোহিতকে কি এক কথা প্রসঙ্গে সে বলছিলো ‘তুমি অহেতুক কোন কিছু ডিপলি নিয়ে আপসেট হয়ে যাও। এ বয়সে এসে এসবের কোনো মানে নেই। শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। ‘অবসেশন’ প্রসঙ্গে সে এ কথাটি বলেছিলো রোহিতকে। সে কি জানে এমন ‘অবসেশন’ রোহিতকে ভোগায় না; বরং আনন্দ দেয়। রোহিত এটা নিয়েই হয়তো বেঁচে আছে। তার যে বিমুগ্ধতা, জীবনের সহজিয়া নির্যাস সব ওয়েলসকে নিয়েই। এমন ভাবনা সেই তো কেবলই ভাবে যার রসবোধ, নান্দনিকতা আর সত্যিকারের ‘ভ্যালুজ’ আছে।
: তুমি কি জানো তোমার মধ্যে বিমুগ্ধতা রয়েছে?
: এসব তোমার কল্পকুহক, বানানো কত্তগুলো ভাবনা।
: কি বলো? তোমার কথাগুলো যথেষ্ট লজিক্যাল; বাট কেউ একজন যদি অপার্থিব ভাবনা নিয়ে জাদুর পরশ পেয়ে থাকে তাহলে দোষটা কোথায়?
: দোষ নেই, তারপরও বলবো, অহেতুক সময়ের অপচয় না করে বাস্তবকে একবার ছুঁয়ে দেখো। তাতে তোমার মঙ্গল হবে।
: আমি কি তোমার কোনো ক্ষতি করেছি?
: না ঠিক তা নয়, তবে বাস্তবানুগ হওয়া ভালো। কোন কিছু এত ডিপলি নেয়ার কি আদৌ প্রয়োজন?
: আমার ভাবতে ভালো লাগে। সেজন্যই বলি।
: এখন শুয়ে পড়ো। অনেক রাত। এত রাতে এভাবে জেগে থাকা মোটেই উচিত নয়।
: আমার ঘুম আসে না।
: ঘুমের ওষুধ খাও। নইলে ডাক্তার দেখাও।
: অনেকদিন পর তোমায় ভয়েস শুনলাম। খুব ভালো লাগলো। আজ খুব ভালো ঘুম হবে। তোমাকে কাল ফোন দেব।
: যা বলার আজ জিজ্ঞেস করে নাও।
: ওকে। তুমি নিজের যত্ন নিও। বাই।
বাংলাদেশ সময় কোন এক মধ্যরাতে রোহিত-ওয়েলস এর কথপোকথনে উঠে আসা এমন আলাপে হয়তো বা ছিলো দুজন দুজনকে প্রবোধ দেয়ার বার্তা।
খুব মজা করে দেশি বড়ইের আচার খাচ্ছিলো ওয়েলস। বাচ্চাগুলোর স্কুল বন্ধ দুই মাস। অফুরাণ এ সময়ে বাচ্চাদের সাথে বসে অলস সময় কাটছে তার। রোহিতের সাথে অনেকদিন কোনো যোগাযোগ নেই। কোথায় হাওয়া গেলো সে। কয়েকমাস আগে ঘুমের সমস্যা আর অফিসে কাজের চাপ নিয়ে বলছিলো সে। এরপর ধরে সে লাপাত্তা।
ব্যালকনিতে বসে দীর্ঘক্ষণ ইউটিউবে আমির খানের একটা নতুন মুভি দেখছিলো সে। হঠাৎ হোয়াটস অ্যাপে রোহিতের ফোন।
: কি খবর তোমার?
: এইতো চলছে।
: এত রাতে ফোন দিলা?
: ঘুম আসছে না।
: ডাক্তার দেখাও। ঘুমের ওষুধ খাও। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করো। দেখবে এক সময় ঘুম চলে আসবে।
সেদিন ওয়েলস এর সাথে এ অল্প কথার পরেই চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এসেছিলো রোহিতের। কি এক অদ্ভুদ সম্মোহন। অপার মুগ্ধতা নিয়েই ওয়েলস-এর কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই এভাবে ঘুম চলে আসার বিষয়টি মাঝে মধ্যে রোহিতকে বেশ অবাক করে। একজন মানুষের কি অসীম শক্তি।
পাভেলের অফিসে বসে আপন মনে জানলার দিকে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে পড়ছিলো সেই ২০০০ সালের মেহেদিবাগের স্মৃতি। ছন্নছাড়া দুপুরে, কখনও বা ভর সন্ধ্যায় তাদের বাসায় ছুটে যাওয়া … সোফায় বসে আয়েশ করে চা খাওয়া। নির্ঝঞ্ঝাট অফিস পাভেলের। ওখানে তিনটি টেবিল। তিনটি কম্পিউটার। ওয়াইফাই কানেকশন থাকা এ অফিসের ব্যালকনিটা বেশ অন্যরকম। জানালা দিয়ে সারি সারি আমগাছ, শিরীষ গাছ আর নারকেল গাছের ফাঁক গলে নীলিমায় জমে থাকা মেঘমালায় অন্যরকম মৌতাত। ছুটির দিনের কোন এক সকালে বন্ধু ইমতিয়াজের ফোন। তার ফোন পেয়ে পাভেলের সুদৃশ্য অফিসে ছুটে আসা। আজ অনেকটা মেঘলা আকাশ। থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এখনও মনে আছে রোহিতের এমন মেঘলা এক দিনের কোনো এক দুপুরে ওয়েলস তাকে ভরদুপুরে ভাত খাইয়েছিলো পরম মমতায়। সে দিনগুলো কখনো আর আসবে না। তারপরও অন্যরকম এক ঝাঁঝালো আবেশ।
সব কথা অনেক সময় বলা হয় না। কিছু কথা থেকে যায় গহীনে কোথাও। তখন এক আততায়ী কষ্ট খুবলে ধরে মননকে। এটাও ঠিক কিছু কথা গোপন থাকে মানুষের। সেই গোপনের চৌহদ্দিতেও বাইরের কেউ ঢুকতে পারে না। তাহলে কি রোহিতেরও কি গোপন কিছু আছে যা ওয়েলস কিংবা অন্য কাউকে সে কোনোদিন বলেনি। আত্মজিজ্ঞাসায় যেটা উঠে আসে সেটার সামারি হলো আসলে রোহিতের গোপন বলে কিছু নেই যা সে বলেনি ওয়েলসকে। নির্ভার মন নিয়ে সবকিছুই তো সে বলেছে তাকে। এতে সন্দেহ নেই। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় যেটা, চরম হতাশার একটা অবস্থায় যখন মনের প্রীতিতি থাকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষের মুখটাই অজান্তে ভেসে উঠে। আর যখন সে প্রিয় মানুষটিকে কাছে পাওয়া যায়না তখন জীবনানন্দের সেই ‘বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগত’ খেলতে থাকে মনের চৌহদ্দিতে। বাস্তবতা মানুষকে পরিমিতিবোধের অবয়ব দেয়, এটা সত্যি আবার যখন সবকিছু বাস্তবতাকেও ছাপিয়ে যেতে চায় তার প্রতীতি কেমন হয়! সৃজনশীলতার চর্চায় মনের ভেতরকার যে অর্গল তার একটা রফা হয় বটে, তবে গহীনে কোথাও ক্ষরণটা থেকে যায়। আর ওটাই মানুষকে ভোগায় অনন্তকাল ধরে। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার হিসেবগুলো একটা সময়ে এসে থিতু হতে থাকে। বিপত্তিটা তখনি দানা বাঁধতে থাকে। রোহিতেরও মাঝে মাঝে ভীষণ ইচ্ছে হয় সব বাথা ডিঙিয়ে ওয়েলস এর কাছে চলে যেতে। সব খুলে বলতে। একমাত্র তার কাছেই রয়েছে এই ধরার ‘যাদুকরী সম্ভাষণ’। কি এক মন্ত্রমুগ্ধ আর ঘোরলাগা মূর্ছনা তার প্রতিটি কথা, প্রতি ছত্র, এ যেন পৃথিবীর বিস্ময়। যার একটুখানি সাক্ষাতেই রাজ্যের বিবমিষা সব লোপ পেতে থাকে। আর এমন ভাবনার বিষয়টি নিয়ে যখন তার সাথে আলাপ হয়, তখন সে কেবলি বলতে থাকে ‘ওটা তোমার নিজস্ব অনুভূতি। একটা বিষয় তুমি যেভাবে মনের ভেতর স্থান দেবে ওটা সে আকারই নিতে থাকবে। এর অন্য কিছু নয়। ’ ওয়েলস এর কাছে এসব প্র্যাকটিক্যাল কথা শোনার পর মনোজগতটা পাল্টাতে থাকে। আসলেই কি তাই! হয়তো এটা নিঃসন্দেহেই যৌক্তিক। তারপরও; সেই যতই যৌক্তিক হোক এই যে মনের আদল সে আদলের একটা নিজস্ব বিন্যাস আছে; জীবনের সহজিয়া কড়চায় যা প্রতি পরতে পরতে মুগ্ধতার আবেশ ছড়াতে থাকে। এমন আবেশের তাই যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে বৈকি।
রাতটা বড়ই অদ্ভুত। যতই বাড়তে থাকে চারদিকে শূন্যতাও এফোঁড়-ওফোঁড় করতে থাকে। খুবলে খেতে থাকা নির্জীব অন্ধকারটাও ক্রমে কুণ্ডলী পাকিয়ে লীন হয়ে যায়। আর এমন অন্ধকারে হঠাৎ আলোর রোশনাইয়ের ঝিলিক খেলে যায় হোয়াটস অ্যাপে চোখ পড়তেই। কি অসাধারণ মায়াবী একটা ছবি। পেছনে নানা জাতের গোলাপ। লালপাড় দেয়া একটা শাড়ি আর কানে লাল গোলাপ গুজে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ওয়েলস এর আশ্চর্য সুন্দর এক ছবি দেখে রোহিতের মনে হতে লাগলো সে এ মুহূর্তে অন্য কোনো দুনিয়ায় চলে গেছে। মানুষ এত মায়াবী হয় কি করে! তার কিছুতেই পলক পড়ছেনা সেই আশ্চর্য সুন্দর ছবি দেখার পর। ইনবক্সে কিছু একটা লিখতে গিয়ে হঠাৎ থমকে গেলো সে। আজ থেকে বছর দুয়েক আগে তাকে একবার নিষেধ করেছিলো ওয়েলস ইনবক্সে আবেগীয় কিছু না লিখতে। ব্যাস, এর পর থেকেই লিখা হয় না। অথচ ভীষণ আবেগে কিছু কথা বলতে ইচ্ছে হয়েছিলো তার। এমন সুন্দর ছবি অবলোকনের পর কি চুপ করে থাকা যায়! পৃথিবীটা এত নির্দয় কেন? মানুষের আবেগ অনুভূতি এসব যদি ব্যক্ত করা না যায় তাহলে আর কি থাকলো? নিজের কাছেই প্রশ্ন সুধায় সে।
সেদিন অফিস থেকে ফিরতি পথে বেশ রাত হয়ে গেলো। পকেট হাতড়িয়ে মোবাইলটা একবার দেখলো রোহিত। অনলাইন মুডটা অন করে হোয়াটস অ্যাপে যেতেই নজরে পড়লো অনিন্দ্যসুন্দর এক ছবি। কোনো এক উৎসবের সাজে সেজেছে ওয়েলস, সাথে ছোট্ট মেয়ে নাফিসা। দুই সাক্ষাৎ পরি সদৃশ এমন ছবি দেখার পর পৃথিবীটা থেকে থেকে আশ্চর্য রকমের সুন্দর মনে হতে লাগালো। ড্রেসটা বেশ জমকালো। মা-মেয়ের দুজনেরই একই ড্রেস। ডান হাতে থাকা রিস্টওয়াচটা বেশ মানিয়েছে ওয়েলস এর হাতে। দীর্ঘক্ষণ নির্বিষ্ট চিত্তে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকা রোহিতের ভাবান্তর নেই। এ যে ‘মেঘ না চাইতেই জল’। অদ্ভুত সুন্দর এমন এক ছবি দেখার অপেক্ষায় ছিলো সে। আর দেরি না করে চট করে ফোন দিয়ে বসলো রোহিত। দুয়েকবার রিং বাজার পর ফোনটা ডেকলাইন হয়ে গেলো। অর্থাৎ কোনো কারণে ওয়েলস হয়তো ব্যস্ত। তাই কেটে দিলো সে ফোনটা। রোহিতের খুব কথা বলতে ইচ্ছে হয়েছিলো। বাসায় পৌঁছে একটা লম্বা শাওয়ার নেয়ার পর বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো সে। কি মনে করে ফের মোবাইলটা অনলাইন মুডে নেয়ার পর দেখা গেলো ওয়েলস নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। বাসায় নানান ঝামেলা থাকায় সেদিন আর ফোনটা করা হয়নি তাকে। কিন্তু মনের ভেতর শুধু খচখচানি রয়েই গেলো। কোনো টেক্সট ম্যাসেজও সে দিলো না। আর এভাবেই কেটে গেলো বেশ কয়েকদিন। অস্থিরতা ক্রমে দানা বাঁধতে শুরু করেছে। নিজের বয়স বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। কোনো হুশ-জ্ঞান নেই তার। এ বয়সে এসে এমন অস্থিরতা কাক্সিক্ষত না হলেও আত্মনিয়ন্ত্রণের ঘাটতি হাস্যকর ঠেকে বৈকি। কথাগুলো শুধু জমতেই থাকে গহীনে কোথাও। অথচ বলা হচ্ছে না অনেক কিছুই। নিজের ‘সীমাবদ্ধতার’ কথা অনেকভাবে রোহিতকে বললেও তার সেদিকে হুঁশ নেই। সে জানে কেবল কল্পকুহকের জাল বুনে বুনে হাবুডুবু খেতে। এভাবে কল্পকুহক নিয়ে থাকাও এক ধরনের ‘মানসিক সমস্যা’; এ কথাটি ওয়েলস তাকে অনেকবার বললেও কোন কথাই তার বোধোদয় হয়নি। কিছুটা কল্পকুহক আর বাস্তবতার মিশেল নিয়ে তার এ পথচলা আপাতদৃষ্টিতে ‘মানসিক সমস্যা’ কিংবা ‘চেতন-অবচেতনের’ মিশ্রন যাই হোক না কেন জীবনটা যে গতি নিয়ে এগুচ্ছে তাতে হয়তোবা পথ চলা মুশকিল হবে না। (চলবে)