সঞ্জয় দাশ »
যেন সবুজের গালিচা। পেছনে ফুলের সমাহার। ফিরোজা, নীল, লালবর্ণের নানা ফুল। একটা ঝুরির মধ্যে ফুলপরি বসে আছে। তার হাতে একটা গোলাপ ফুল। ঘাড়ের পেছনে প্রজাপতির পাখনার মতো গোলাপি একটা আদল। মনে হচ্ছে সবুজ গালিচায় বসে আছে আস্ত এক ফুলপরি। ওয়েলস-এর ছোট মেয়ে নাফিসা। বয়স এক বছর। অদ্ভুত এক সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু কি দেখছে সে। ব্যস, এটুকুই। ছবিতে আর সুযোগ নেই নতুন কিছু দেখার। আর যাই হোক, অনেকদিন পর হোয়াটসঅ্যাপে একটা শৈল্পিক ছবি পাঠিয়েছে ওয়েলস। এটা দেখার পর অদ্ভুত এক ঘোর লাগা সম্মোহন তাকে পেয়ে বসেছে। আগের দিন রাতে ভালো ঘুম হয়নি তার। মেজাজটাও ঠিক ভালো ছিল না। ঘুম থেকে ওঠার পর অনলাইনে যেতেই হোয়াটসঅ্যাপে একটা ছবির নোটিফিকেশন দেখতে পেলো রোহিত। সব পেছনে ফেলে দীর্ঘক্ষণ এক একদৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকলো সে। ছবির বর্ণনা দিয়ে একরাশ প্রশংসা করলো ওয়েলসের। এর মাসখানেক আগে একবার ফোনে কথা বলার সময় তাকে কিছু ভিডিও, ছবি পাঠাতে বলছিল রোহিত। কিন্তু অনেকদিন কোন ছবি পায়নি সে। হয়তো ওয়েলস খুবই ব্যস্ত। অন্যবার রাগ হলেও এবার তার ওপর রাগ করতে পারেনি রোহিত। ওয়েলস তার কথা মনে রেখেছে। একটা ছবি পাঠিয়েছে। তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ সে। এ কৃতজ্ঞতার যেন শেষ নেই। রাজ্যের ব্যস্ততার মধ্যেও প্রায় মাসখানেক আগে ছবির প্রসঙ্গ নিয়ে বলা রোহিতের কথাটি সে মাথায় রেখেছে। বনেদি পরিবারে জন্ম নেয়া অন্য আট-দশজন মেয়ের চাইতে ব্যতিক্রম সে। গড্ডলিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে নিজেকে শৈল্পিকরূপে গড়ে তুলেছে। এ শিক্ষা একান্তই তার পরিবারের।
বৃষ্টিটা হবে-হবে করছিলো ঘণ্টাদুয়েক আগে থেকে। এমন সময় মানুষজনও দৌড়াতে শুরু করলো। রোহিতের মেজাজটা গুম হয়ে আছে তারও ঢের আগে থেকে। আকাশে জমে থাকা গভীর এক ফালি কালো মেঘের মতো মনের ভেতরও কালো আস্তর পড়েছে। ওখানে জমানো বিষাদের পানি। কেন এমন হয় তার ব্যাখ্যা জানা নেই। তবে এ গানটার মতোই বোঝা যায়…..‘আকাশের তারা গুণে … কাটে না সময় আমার … তুমি কোথায় … কত দূরে … জানি না … আ … আ … আমি পারি না লুকাতে এই মনের ব্যাথা … তুমি বোঝনি এই হৃদয়ে জমে আছে কত ব্যাথা … বোঝনি … … খোঁজনি … কি ব্যাথা …’।
বেশ কয়েকদিন থেকে মনটা উচাটন। এর সঠিক ব্যাখ্যা তার জানা নেই। মাঝেমধ্যে এমনটি হয়। তখন অফুরাণ রসদের প্রয়োজন হয় বৈকি। কিন্তু রসদ না মিললেও কিছু আসে যায় না রোহিতের। সে এসব রসদ-টসদ নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। একটা সময় এসব বিষয় নিয়ে বেশ ভাবতো। এখন আর ওসব গায়ে মাখে না। কে তাকে ফোন করলো বা করলো না তাতে কিছু আসে যায় না।
অনেকদিন ধরে মনটা বেশ বিক্ষিপ্ত। এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা নেই। মানুষের মনোজগতটা বেশ জটিল। কবে কখন কার কি কারণে বিক্ষিপ্ততা দানা বাঁধতে থাকে তার সীমা-পরিসীমা বোঝা বেশ দুরূহই বটে। কয়েকমাস আগে ওয়েলস একবার ফোনে তাকে জানিয়েছিলো ইদানিং তারও মনটা বেশ বিক্ষিপ্ত থাকে। ‘মানুষ চায় তার সেই নিহত উজ্জ্বল … পরিবর্তে অন্য কোনো সাধনার ফল’- কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার এই উক্তিটার কথা বেশ মনে পড়ছে।
ওয়েলস-এর সাথে যোগাযোগহীনতায় থাকার প্রায় ২০ দিন পর কোনো এক সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হোয়াটসঅ্যাপে আসল অনিন্দ্য সুন্দর এক ভিডিও ক্লিপস।
ছোট্ট নাফিসা তার বড়বোনের চুল ধরে টানছে কিছুক্ষণ পরপর। রাইসা অনেকটা ধমকানোর সুরে আঙুল উঁচিয়ে বারবার বলছে ‘স্টপ’। প্রায় ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ঐ ভিডিও ক্লিপ্লস দেখার পর অদ্ভুত এক মাদকতায় মনটা মোহাবিষ্টতায় আচ্ছন্ন হয়ে রইলো রোহিতের। তাহলে সে তার কথা রেখেছে। এই অভ্যাসটা খুব ভালো তার। সহজে কোনো কিছু ভুলে না সে। তার প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। এক মাসের মধ্যে একটা ছবি আর ভিডিও ক্লিপস পাঠালো সে। এও কম কিসে। শুষ্কপ্রায় জীবনটায় মাঝেমধ্যে দ্যূতি ছড়িয়ে দেয় এমন মনোহর ভিডিও ক্লিপস। তখন আর দূরত্বকে দূরত্বই মনে হয় না। কেবল মনে হতে থাকে এই তো সে দেশেই আছে।
রাইসা’র মিডটার্মের পরীক্ষা শেষ হলো বেশ ক’দিন আগে। এবার বেশ ধকল গেলো তার ওপর। উপর্যুপরি এক্সাম ছিলো। সে বায়না ধরলো, দূরে কোথাও ঘুরতে যাবে। কিন্তু কোথায়? হঠাৎ ওয়েলসের মনে পড়লো বন্ধু আদ্রিতার কথা। তারা ডেন্টনে নতুন এসেছে। এবার ওখানেই ঘুরতে যাওয়া দরকার।
রোদ ঝলমলে কোনো এক সকালে একাই ড্রাইভিং করে মেয়েকে নিয়ে ছুটলো সে। এবার মোরশেদকে বলাই হয়নি যে, মেয়েকে নিয়ে সে একাই ঘুরতে যাচ্ছে। মাঝেমাঝে তার অদ্ভুত এক জেদ চেপে বসে। মোরশেদ যাই ভাবুক, এবার সে একাই ঘুরতে যাবে।
আদ্রিতাদের বাড়ির সামনে যখন লালরঙের প্রাডো গাড়িটা থামলো তখন বেশ বেলা চড়েছে। কলিং বেল টিপতেই অকস্মাৎ দরজা খুলে গেলো। দীর্ঘ সময় পর বন্ধুকে পেয়ে আদ্রিতা মায়াময় এক সম্ভাষণে ওয়েলসকে জড়িয়ে ধরলো। রাজ্যের কথোপকথনে ওঠে এলো দেশের প্রসঙ্গ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত খুঁটিনাটির নির্যাস। দু’দিন ডেন্টনে কাটিয়ে বাসায় ফিরেই দেখলো মোরশেদ এসেছে।
: তুমি কখন এলে?
: এই তো কাল। তোমার ঘোরাঘুরি কেমন হলো?
: ভালোই বলা যায়। অনেকদিন পর দেখা হলো বন্ধুর সাথে। তাই চুটিয়ে গালগপ্প করছিলাম।
বেশ একটা বিরক্তি ভাব নিয়ে ফাইল দেখছিলেন মোরশেদ। ওয়েলস-এর কথা তার কানে যায়নি।
: আমাকে এক কাপ গরম ব্ল্যাক কফি বানিয়ে দাও।
: হুম। তুমি বসো। এই তো ফিরলাম। ফ্রেশ হয়েই বানিয়ে দেবো।
বাসায় ফেরার পর থেকেই রাজ্যের বিরক্তি যেন পেয়ে বসলো তাকে। কাজ আর কাজ। এসব ভালো লাগে না তার। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় অনেক দূরে কোথাও চলে যেতে। কিন্ত সন্তানদের কথা মাথায় এলেই সে ভাবনায় যতি পড়ে।
মেইল চেক করতেই দেখা গেলো রাইসার স্কুলের রেজাল্ট। সাথে অভিনন্দনপত্র। এবার ফল খুব ভালো করেছে সে। তার পরিশ্রম সার্থক। মেয়ের এমন ফলাফলের খবর শুনে বাবাও বেশ খুশি।
: চলো আজ বাইরে কোথাও ডিনার সারবো।
স্বামীর এমন কথায় স্বভাবসুলভ একটা হাসি টেনে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেও এবার কেন জানি তার মন সায় দিচ্ছে না। এই লোকটার সাথে ইদানিং তার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। ওয়ার্কহোলিক মানুষটার পরিকল্পনা বেশ ভালো। সংসারের সব বিষয় সে দেখভাল করলেও ইদানিং কেমন যেন ম্্িরয়মাণতা গ্রাস করেছে ওয়েলসকে।
: কি হলো? কিছু বলছো না যে।
: ওহ বলো কোথায় যাবে?
: আগে চটজলদি রেডি হয়ে নাও।
: ঠিক আছে, বলেই ডুপ্লেক্স বাড়ির দোতালায় হনহন করে ওঠে মেকআপ রুমে চলে গেলো ওয়েলস।
পাঁচতারকা মানের হোটেলের লবিতে বসে কোল্ডকফি খাচ্ছিলেন মোরশেদুল আলম চৌধুরী। দৃষ্টি তার ল্যাপটপের দিকে। জমকালো একটা ড্রেস পরলেও স্ত্রীর দিকে তার নজর নেই।
ডিনার সেরে তারা যখন বাসায় ফিরলো তখন রাত সাড়ে দশটা বাজে। মেকআপ রুমে গিয়ে আলগোছে যাবতীয় অলংকার খুলে ওয়ারড্রোবে রাখার পর দীর্ঘক্ষণ ধরে শাওয়ার নিলো সে। ভেজা চুলে তোয়ালেটা মুড়িয়ে দোতালার বারান্দায় যেতেই অদ্ভুত এক ফুলের সুঘ্রাণে দু’চোখ বুজে এলো তার। আকাশে একফালি চাঁদ ওঠেছে। বৃত্তায়িত চাঁদের গোলাকধাঁধায় মনে পড়লো কবেকার স্কুল জীবনের কথা। এমন জৌলুশময় পরিবেশে মাঝেমধ্যে সে হাঁপিয়ে যায়। অতীতচারী ভাবালুতায় খাবি খেতে খেতে ক্রমে রাত বাড়তে থাকে। ছাদের দক্ষিণ কোনা থেকে হু-হু করে বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে। হঠাৎ হনহন করে নিচে নেমে যায় সে। আলগোছে রুমের দরজা ভিজিয়ে দেয়।
রাস্তাটার চারপাশ বেশ প্রশস্ত। দু’পাশে নানা গাছগাছালি; ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকান। রাস্তার পাশ ঘেঁষে নেমে যাওয়া প্রশস্ত পথে হাঁটতে গিয়ে দমকা বাতাস ছড়িয়ে পড়ছিলো। ঘড়িতে বেলা সোয়া বারটা। আনমনে হাঁটতে গিয়ে দেখা গেলো কিছু লোক তাকে দেখছে। এই অহেতুক কৌতূহল বেশ বিরক্তিকর। চারদিকে গজিয়ে ওঠা নানাজাতের গাছগাছালি জানান দেয় এখানকার মানুষ প্রকৃতিকে আগলে রাখতে চায় পরম মমতায়। চারদিকে যে হারে বৃক্ষনিধনের মহোৎসব চলছে, তার তুলনায় এখানকার গ্রামীণ অবয়বটা বেশ অন্যরকম। চৌধুরী বাড়ির মূল প্রবেশপথের রাস্তাটা একেবারে সুনসান। বেশ ঝকঝকে-তকতকে করে রাখা এই গ্রাম্য রাস্তাটা এত পরিচ্ছন্ন করেই বা কে রাখেÑ প্রশ্নটা কেবলি ঘুরপাক খেতে থাকে। হঠাৎ চোখটা আটকে গেলো শানবাঁধানো পুকুরঘাটে। গভীর কালো জল টলমল করছে। চারপাশজুড়ে মদিরাচ্ছন্ন নীরবতা। উঠোনের মাঝে প্রকাণ্ড বাড়িটা দাড়িয়ে আছে জৌলুশ সাক্ষী রেখে। চৌধুরী বাড়ির বড় সন্তান খান বাহাদুর সাহেব ছিলেন অসীম সাহসী এক লোক। শহরে বাস করলেও বাড়ির বিষয়টি দেখভাল করতেন নিজেই। ভাবতে অবাক হতে হয় জনমানবহীন বাড়িটির ভেতরের পরিবেশ না জানি কেমন।
: ভাই আপনি কে?
: হঠাৎ পেছনে মধ্যবয়সী এক লোকের আচমকা এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাওয়া রোহিতের চোখে রাজ্যের বিস্ময়।
: কাউকে খুঁজছেন?
: না দেখছি বাড়িটা। কত যত্নের ছাপ এর চারপাশে।
: কিন্তু দেখার কেউ নেই।
: কেন?
: উনাদের সবাই থাকেন শহরে। মাঝেমধ্যে এ পরিবারের কেউ এসে কিছুক্ষণের জন্য কেবল ঘুরে যান। এরপর চলে যান।
: আমি এ বাড়ির মালিকের ছেলের বন্ধু। হঠাৎ তাকে না বলে এলাম দেখার জন্য।
: কোনোদিন তো আপনাকে এখানে দেখেছি বলে মনে হয় না।
: আমি একবার এখানে এসেছিলাম বছর দুয়েক আগে। বেশ কিছুক্ষণ থেকে চলে গিয়েছিলাম। আজ আসলাম দু’বছর পর।
: খানবাহাদুর সাহেব অনেক দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। যখনই আসতেন দুস্থ মানুষের খবরাখবর রাখতেন। কিন্তু ওনার সন্তানদের কাউকে এখানে আসতে দেখা যায় না। এত বড় বাড়ি, পুকুর ধানিজমি, সব কেবলি ফাঁকা। কোথাও কেউ নেই। এখন সবাই শহুরে, গ্রামের খোঁজ নিতে কেউ আসে না। কথা কয়টি বলেই হঠাৎ হনহন করে হাঁটতে শুরু করলো অচেনা মধ্যবয়সী লোকটা। আর এ বাড়িতেই বেড়ে ওঠা ওয়েলসের। অদ্ভুত সুন্দর মায়াবী এ বাড়িতে রোহিতের আগমন ২০২১ সালের কোনো এক মধ্যপ্রহরে। হঠাৎ মনে হলোএকটু ঘুরে আসতে। তাই চটজলদি চলে আসা। সুদৃশ্য বাড়িটার চারপাশজুড়ে বাহারি ফুল। জবা, সন্ধ্যামালতী, সাদা গোলাপ, হলুদ গোলাপ, মাধবীলতা থেকে শুরু করে মানিপ্ল্যান্টসহ রকমারি সবুজের সমারোহ। আর মনোলোভা এ সবুজ দেখতে দেখতে রোহিত হারিয়ে যায় অন্যরাজ্যে।
লালপাড় দেয়া শাড়ি পরে বাগানময় ঘুরে বেড়াচ্ছে এক নারী। বাগানে থাকা রাজ্যের ফুলগুলোতে কখনো বা হাত বুলিয়ে, কিছু পাতা কেটেছেঁটে গাছের গোড়ায় ফোয়ারার পানি দিয়ে আস্ত বাগানটাই পরিষ্কার করছে সে। চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে অদ্ভুত এক সুবাস। ঘোর লাগা সেই সুবাস নাকে যেতেই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রোহিত। অকস্মাৎ পেছনে কারো হাতের স্পর্শে হুঁশ হয় তার।
: আপনি এখনো এখানে! দু’চোখে রাজ্যের বিস্ময় তুলে কিছুক্ষণ আগে হনহন করে চলে যাওয়া লোকটা ফের তাকে শুধালো এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য। রোহিত এমন কথার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না।
: আচ্ছা আপনি কি ওয়েলসকে দেখেছেন? একটু আগেই তো সে এখানে গাছে পানি দিচ্ছিলো। হঠাৎ কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো।
: কে ওয়েলস? এই নাম তো প্রথম শুনলাম।
লোকটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চৌধুরী বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে যখন সদর রাস্তায় পা ফেললো রোহিত তখন শেষ বিকেল।
বাসায় ফিরেই আর কিছু মনে পড়ছিলো না তার। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বাথরুম থেকে ফেরার পর মনে হতে লাগলো এতক্ষণ কোন জগতে ছিলো সে! এদিকে সন্ধ্যাও ঘনিয়ে এসেছে সাপের মতো ফণা তুলে। কড়া এককাপ চা বানিয়ে খাওয়ার পর তার মনে পড়তে লাগলো সেই আশ্চর্য সুন্দর বাগানের কথা, নানা প্রজাতির ফুল, স্উুচ্চ দালান, শানবাঁধানো পুকুর ঘাট … লালপেড়ে শাড়ি পরা ওয়েলস …. গাছে পানি ছিটানো … নাকে অদ্ভুত এক ফুলের সুবাসে তার দু’চোখ মুদে আসা…… এক ঘোরলাগা দহন যেন তাকে খুবলে ধরেছে।
: তোমাকে আর এক চা বানিয়ে দিই?
: কে … কে… ওখানে
: এই তো আমি…….
বিস্ময়াবিভূত রোহিতের বিস্ময় যেন কাটছেই না। তার চোখের সামনেই দাঁড়িয়ে জলজ্যান্ত ওয়েলস!
: তুমি ঠিক আছো তো?
: হুম … কিন্তু তুমি এখানে কি করে এলে!
: কেন, আমি কি এখানে আসতে পারবো না?
: আমি তা বলিনি। তুমি তো একটু আগে তোমাদের বাড়ির বাগানেই ছিলে। এখানে কিভাবে এলে। বিড়বিড় করে কিছু একটা বলতে যাবে রোহিত; অমনি সে আবিষ্কার করলো সুনসান ঘরে শুধু রাজ্যের নিস্তব্ধতা। কোথাও কেউ নেই। এসবের মানেই বা কি? তবে কি তাকে অবসেশন ভোগাচ্ছে।
অনলাইন মুডে থাকা ফোনটায় চোখ পড়তেই সে দেখলো ওয়েলস-এর প্রোফাইলে সেই লালপেড়ে শাড়ির অবয়বে একটা ছবি। কী অদ্ভুত। এও সম্ভব! ওয়েলস যেখানটায় দাঁড়িয়ে তার পেছনের অবয়বে ফুলের বাগান। লাল গোলাপ, ফিরোজা রঙের গোলাপ আর সাদা গোলাপ। কি সাযুজ্য। স্বপ্নের সাথে এ বাস্তবতার তফাতই বা কোথায়। আর কিছু ভাবতে পারছে না সে। সব কেবলই গুলিয়ে যাচ্ছে সেই ঘোরলাগা ফুলের সুবাসের মতোই। (চলবে)